ডেনমার্কে বোরকা নিষিদ্ধ: জরিমানা ও কারদণ্ডের বিধান

ডেনমার্কে বোরকা নিষিদ্ধ: জরিমানা ও কারদণ্ডের বিধান

বোরকা ও নেকাবের মতো ইসলামিক পোশাকসহ মুখঢাকা পোশাক নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে ডেনমার্ক আধুনিক (!) ইউরোপিয়ান দেশের তালিকায় নাম লেখালো। দেশটির সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছে।

স্ক্যান্ডিয়াম অঞ্চলের দেশটির সংসদ সদস্যরা কেন্দ্রীয়-অধিকার গভর্নিং জোটের মাধ্যমে এই বিলটি অনুমোদন দেন। এসময় বিলটির পক্ষে ভোট দেন ৭৫ জন সাংসদ এবং বিপক্ষে ভোট দেন ৩০ জন। ৭৪ জন সাংসদ ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন।

সরকার বলছে যে, নতুন এই আইনে ওড়না, পাগড়ী বা ঐতিহ্যবাহী ইহুদি টুপি নিষিদ্ধ করা হয়নি; এমনকি এটি কোন ধর্মকে লক্ষ্য করেও নয়। যাই হোক, অনেকে এটিকে সরাসরি রক্ষণশীল মুসলিম নারীদের ব্যবহৃত পোশাক বোরকা বা নেকাবকে নির্দেশ করছে; যা স্ক্যান্ডিয়াম দেশগুলোতে কম নজরে পড়ে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’স ইউরোপ এর পরিচালক গৌরি ভ্যান গুলিক এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, “প্রত্যেক নারীই তাদের পছন্দমতো পোশাক পরার ব্যপারে স্বাধীন থাকা উচিত এবং সে ধরণের পোশাক পরবে যা তার পরিচয় এবং বিশ্বাসকে প্রকাশ করে। এই নিষেধাজ্ঞা সেসকল মুসলিম নারীদের উপর বাজে প্রভাব ফেলবে যারা নেকাব বা বোরকা পরে থাকে।” তিনি আরও বলেন, “জন নিরাপত্তার জন্য মুখঢাকা পোশাকের উপর বিশেষ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞাটি ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন করবে। যদি এই আইন নারীদের অধিকার রক্ষার জন্য হয়, তবে তা ভয়াবহ ব্যর্থ হবে। পরিবর্তে, আইনটি নারীদের পোশাক পছন্দের রুচির জন্য অপরাধী করবে।”

যাইহোক, ডেনমার্কের আইনমন্ত্রী সোরেন প্যেপ পলসেন বলেন যে, পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকর হবার পর যখন কেউ আইনটি লঙ্ঘন করবে তখন পুলিশ তার ‘সাধারণ বিবেচনা’ ব্যবহার করবে।

এই আইনটি জনসাধারণকে স্বীকৃত ক্ষেত্রে মুখ ঢাকার অনুমতি দেবে। যেমন, ঠা-া আবহাওয়ায় এবং অন্যান্য বৈধ ক্ষেত্রে যেমন মোটরসাইকেলের হেলমেট পরার ক্ষেত্রে।

প্রথমবার অপরাধের ক্ষেত্রে ১০০০ ড্যানিশ ক্রোনার বা ১৩৩০০ টাকা পরিমাণ জরিমানা করা হবে। অপরাধের পুনারাবৃত্তি ঘটলে ১০ হাজার ক্রোনার জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড। কেউ যদি এই ধরনের মুখ-ঢাকা পোশাক পরতে কাউকে বাধ্য করে তবে তাকে জরিমানা করা হবে অথবা দুই বছরের কারদণ্ড দেয়া হবে।

অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামেও একই ধরনের আইন রয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ এখন বিস্তারিত গাইডলাইন তৈরি করবে। কি নিষিদ্ধ হবে সে বিষয়ে ‘খুব কংক্রিট হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন আইনটির বিরোধী এক আইনজীবী। ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস এর লুইস হলক্ ‘টিভি২’ টেলিভিশনে বলেন যে, যদি আইনটি নারীদের নেকাব বা বোরকার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তবে এটি সংখ্যাগরিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলবে এবং সবাই আইনটির বিরুদ্ধে যাবে।