দুর্ভাগা যেসব তারকারা বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি

দুর্ভাগা যেসব তারকারা বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি

ম্যারাডোনা একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিশ্বকাপে খেলার সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না’। ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে খেলা যেকোন খেলোয়ারের চোখেই স্বপ্ন। কিন্ত খেলাটা যে মাত্র এগার জনের খেলা, তাইতো চাইলেও সবার স্বপ্ন তাই র‍য়ে যায় অপূর্ণ। তেমনই এবারের বিশ্বকাপেও অবাঞ্চিত থেকে যান ফুটবল বিশ্বের বড় কিছু নাম। একনজরে দেখে নেয়া যাক কয়েকজনকে।

করিম বেঞ্জেমা

এবারের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা করিম বেঞ্জেমা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৪১২ ম্যাচে গোলসংখ্যা ১৯২। শিরোপা জিতেছেন ১৬ টি। কিন্ত চলতি মৌসুম বিবেচনায় তারকাখচিত ফ্রান্স দল থেকে করিম বেঞ্জেমার বাদ যাওয়া একধরনের প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ এই মৌসুমে গলদাতার ভূমিকায় বেঞ্জেমাকে কমই দেখা যায়। তাই সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড হিসেবে কিলিয়ান এমবাপ্পে, গ্রিয়েজমান, অলিভার জিরু কে বেছে নেয় দিদিয়ের দেশম। বলাই বাহুল্য ৮১ ম্যাচে ২৭ গোল দেয়া বেঞ্জেমার অভিজ্ঞতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে ফরাসী দল।

 

অ্যালেকজান্ডার লাকাজেত

নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় দল নিয়ে যাচ্ছে ফ্রান্স। একঝাক তরুণ এবং ইউরোপ মাতানো খেলোয়াড় নিয়ে ঢেলে দল সাজিয়েছেন দিদিয়ের দেশম। আর তাই তারকাখচিত এই দল থেকে বাদও পড়েছেন বেশকয়েকজন কয়েকজন নামডাক করা খেলোয়াড়। আর তাদের মধ্যে লাকাজেত অন্যতম। ফরাসি দল লিও থেকে এই মৌসুমে আর্সেনালে যোগ দেয়া লাকাজেত ৩৮ ম্যাচে করেছেন ১৭ গোল।

 

হাভি মার্টিনেজ

ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন অ্যাথলেটিক বিলবাও-এ, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে। কিন্ত বায়ার্ন মিউনিখে আসার পর থেকে প্রধানত সেন্টার ব্যাক হিসেবেই খেলেছেন। কিন্ত পিকে, রামোস বুস্কেটসদের মতো খেলোয়াড়দের ভিড়ে সবসময়ই আলোচ্ছটার বাইরে ছিলেন জাতীয় দলের হয়ে ১৮ ম্যাচ খেলা মার্টিনেজ। বিপরীত হয়নি এই বিশ্বকাপেও। হুলেন লপেতেগুই এর ২৩ সদস্যের দল থেকে বাদ পড়ে যান স্পেনের এই বহুমুখী মিডফিল্ডার।

 

আলভারো মোরাটা

স্পেন ছেড়ে ব্রিটেনে পাড়ি জামানোই হয়ত কাল হয়ে দাঁড়াল স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ডের জন্যে। তা নাহলে জাতীয় দলের হয়ে ২৩ ম্যাচ খেলে ১৩ গোল করা মোরাটা কোচের চোখে অবাঞ্ছিত হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া স্পেনের বর্তমান দলে কোচের পছন্দের অ্যাসেন্সিও, আসপাস, কস্তা বা মোরেনোদের সবার গোল মিলেও মোরাটার গোল সংখ্যার তুলনায় কম।

 

এলেক্স সান্দ্রো

গত মৌসুম বিবেচনা করলে লেফটব্যাকদের মধ্যে সবচেয়ে ধারাবাহিক ছিলেন এলেক্স সান্দ্রো। আক্রমণাত্মক এই উইংব্যাকের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে আক্রমণ এবং রক্ষণ দুই ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শী। কিন্ত সান্দ্রোর দুর্ভাগ্য যে দলে জায়গা পাওয়ার জন্যে তার প্রধান প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের হয়ে ৫২ ম্যাচ খেলা মার্সেলো। তাইতো ব্রাজিল কোচ সান্দ্রোকে রেখে মার্সেলো এবং ফিলিপ লুইজের ওপরই ভরসা রেখেছেন।

 

সেস্ক ফেব্রেগাস

বর্তমান ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা প্লেমেকার সেস্ক ফেব্রেগাস। অন্য যেকোন দল হয়ত স্বপ্নেও ভাববে না ফেব্রেগাসের মতো কাউকে দল থেকে বাদ দেওয়ার কথা। কিন্ত ইনিয়েস্তা, থিয়াগো, ডেভিড সিলভাদের ভিড়ে স্পেনের হয়ে ১১০ ম্যাচ খেলা ফেব্রেগাসকে রেখেই দল ঘোষণা করেছেন স্পেন বস।

 

রাদজা নাইনগোলান

ইউরোপের ‘কমপ্লিট মিডফিল্ডার’ দের মধ্যে একজন বলা হয় রোমার মিডফিল্ডার নাইনগোলানকে। একইসাথে রক্ষণ এবং আক্রমণে পারদর্শিতার সাথে সাথে কঠোর পরিশ্রমী, বৈচিত্রময় এবং গতিশীল একজন খেলোয়াড় নাইনগোলান। তাই ফেল্লাইনি, আদনান জানুজাই দের জায়গা হলেও বেলজিয়াম দল থেকে নাইনগোলানের বাদ যাওয়া একধরনের অবিচারই বলা চলে। জাতীয় দলের হয়ে ৩০ ম্যাচে ৬ গোল করা নাইনগোলানকে ড্রেসিং রুমে ‘বিরূপ প্রভাব’ ফেলার কথা চিন্তা করে কোচ রবার্তো মার্টিনেজ তাকে দল থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

 

মাউরো ইকার্দি

বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ভেলকি দেখিয়েছেন আর্জেন্টিনা বস হোর্হে সামপাওলি। গত কয়েক বছরে ইন্টার মিলানের হয়ে তার নজরকাড়া পারফর্মেন্সের পরে আর্জেন্টিনা ভক্তরা ইকার্দিকে এক রকমের অটো চয়েজ হিসেবেই ধরে রেখেছিল। ইকার্দি ২০১৭/১৮ মৌসুম শেষ করে ইতালিয়ান লিগের যুগ্ম সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে। ক্যারিয়ার সেরা ২৯ গোলের রেকর্ড করেন এই মৌসুমে এবং ইন্টার মিলানকে ফিরিয়ে আনেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গণ্ডিতে। শুধু এই মৌসুমই না, গত চার মৌসুম ধরে তিনি ইন্টার মিলানের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় দলে মাত্র চারবার খেলার সুযোগ হয় তার। ইন্টার অধিনায়কের দল থেকে বাদ পড়ার কারণ হতে পারে আগুয়েরো, হিগুয়েন দের মত বড় নাম। কিন্ত এই মৌসুমে হিগুয়েন তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি জুভেন্টাসের হয়ে। অন্যদিকে মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ইনজুরির কারণে দলের বাইরে কাটান আগুয়েরো। একমাত্র ইকার্দিই পুরো মৌসুম খেলেছেন এবং নান্দনিক ফুটবল খেলা সত্ত্বেও দল থেকে ইকার্দির বাদ যাওয়া অবশ্যই হাজারো প্রশ্ন তোলে।

এছাড়াও রাশিয়া বিশ্বকাপে অবাঞ্চিতদের মধ্যে কিছু পরিচিত মুখ হচ্ছে, হুয়ান মাতা, লাপোর্তে, এন্থনি মার্শাল, ড্যাভিড লুইজ, এরিক লামেলা, পেরোত্তি, কিংসলে কোমান, এমরে কান ও প্রমুখ খেলোয়াড়। উল্লেখ্য যে ইনজুরির কারণে যারা দলে ডাক পায়নি তাদের এই তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।