এবার আর্জেন্টিনার জার্মান ফাঁড়া কাটবে তো?

এবার আর্জেন্টিনার জার্মান ফাঁড়া কাটবে তো?

আর্জেন্টিনা ও জার্মানি, এই দুই দল মিলে বিশ্বকাপ জিতেছে ছয়বার; জার্মানি চারবার এবং আর্জেন্টিনা দুইবার। বরাবরের মতো এইবারও ফেভারিট তকমা নিয়েই এসেছে দুই মহাদেশের এই দুই দল। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা ও জার্মানি।

বিশ্বকাপে এই দুই দলের খেলা মানেই যেন অন্যরকম কিছু। ইতিহাস থেকে পরিসংখ্যান টানলে অবশ্য আর্জেন্টিনা এগিয়ে থাকে। কারণ, এ যাবৎ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মোলাকাত হয়েছে মোট ২২ বার। তন্মধ্যে আর্জেন্টিনা জিতেছে দশবার, হেরেছে আটবার এবং বাকি চার ম্যাচ ড্র। তবে খেলা যখন বিশ্বকাপে তখনই যেন তালগোল পাকিয়ে ফেলে আর্জেন্টিনা। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের আসরে আর্জেন্টিনা আর জার্মানি মুখোমুখি হয়েছে মোট সাতবার। এর মধ্যে কেবল ১৯৮৬ সালের ফাইনালে জার্মানি হেরেছে। অর্থাৎ জার্মানি হেরেছে মাত্র একবার। একটি ড্র এবং বাকি পাঁচ ম্যাচে হারের স্বাদ বরণ করতে হয়েছে লাতিন জায়ান্টদের। সর্বশেষ তিন বিশ্বকাপের নকআউট পর্বেই জার্মান বাঁধায় ধরা পড়ে যায় আর্জেন্টিনা। তাই আর্জেন্টিনা ভক্তদের জন্য বিশ্বকাপে জার্মানি একটা দুর্ভাগ্যের নাম।

বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সাথে পশ্চিম জার্মানির প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯৫৮ সালে সুইডেন বিশ্বকাপে। মালমোতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই খেলায় আর্জেন্টিনা দুই মিনিটের মাথায় এগিয়ে গেলেও পশ্চিম জার্মানির হেলমুট রাহন এবং উয়ে সিলারের গোলে শেষ পর্যন্ত স্কোরের অবস্থা দাঁড়ায় জার্মানি ৩ – ১ আর্জেন্টিনা। এবং গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে যায় আর্জেন্টিনা।

আট বছর বাদে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে আবারো একই গ্রুপে পশ্চিম জার্মানি ও আর্জেন্টিনা। বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত হওয়া এই ম্যাচে অবশ্য কারো ভাগ্যেই জয় লেখা হয়নি। গোল শূন্য ড্র হয় খেলাটি।

বিশ বছর পর ফের বিশ্বকাপে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা ও পশ্চিম জার্মানি। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই দল। খেলার প্রথমেই জোসে লুইস ব্রাউন এবং জর্জ ভালদানো দুই গোল করে এগিয়ে দেয় আর্জেন্টিনাকে। জার্মানরা দুই গোলই শোধ করে ফেলে। কিন্ত জার্মানদের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে হোর্হে বুরুচাগা ৮৪ মিনিটে একটি গোল করে জয় ছিনিয়ে নিয়ে বিশ্বজয় করে।

পরের বিশ্বকাপেই আবার মঞ্চ প্রস্তত দুই দলের লড়াইকে বরণ করে নিতে। এবার ইতালি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। একদিকে আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা, অন্যদিকে জার্মানের লোথার ম্যাথিউস। ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে জার্মানের গোল এবং লাখো ভক্তের স্বপভঙ্গ। চার বছরের মধ্যেই জার্মানি নিয়ে নেয় ৮৬ ফাইনালের প্রতিশোধ।

২০০৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। নিজেদের মাটিতে আবারও কোয়ার্টার ফাইনালে পেয়ে যায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে। ৯০ এর পর থেকে ২০০৫ পর্যন্ত জার্মানির সাথে কোন খেলা না হারলেও বিশ্বকাপের দুর্ভাগ্য পেয়ে বসে আবারো। ৪৯ মিনিটে রবার্তো আয়ালার চমৎকার হেডে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্ত বাধ সেজে বসে ৮০ মিনিটে করা ক্লোসার গোল। অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত মিমাংসা না হলে খেলা গড়ায় পেনাল্টিতে। ৪-২ গোলে জিতে আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় করে জার্মানি।

২০১০ সালের কোয়ার্টার ফাইনালেও আবারও মুখোমুখি দুই দল। মেসির কাঁধে ভর করে ভক্তরা স্বপ্ন দেখে উৎরে যাওয়ার। কিন্ত ওটামেন্ডি, গুতিরেজ, ডেমিকেলিসদের একের পর এক ভুলে চার গোলের লজ্জায় ডোবে আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়ে আফ্রিকা সফর শেষ করে আর্জেন্টিনা।

চার বছর পরই তারা আবার মুখোমুখি হয় ফাইনালে। মেসি, ডি মারিয়াদের নিয়ে উড়তে থাকে আর্জেন্টিনা, অন্যদিকে জার্মান মেশিন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে পৌছে ফাইনালে। ভক্তহৃদয় আবারো আশায় বুক বাঁধে। একদিকে প্রতিশোধের স্পৃহা, অন্যদিকে আটাশ বছরের বিশ্বকাপ খরা। কিন্ত বিধি বাম! ডি মারিয়ার ইনজুরি এবং হিগুয়েন, আগুয়েরো, পালাসিও দের গোল মিসের মহড়া চলে পুরো খেলায়। গোলশূন্য ড্র খেলাটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। ১১৩ তম মিনিটে বাম দিক থেকে সুরলের ক্রস থেকে গোতজের গোল! আবারো আর্জেন্টিনার হৃদয় ভেঙে জার্মানের শিরোপা জয়।

আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপেও শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামছে দুই দল। দুই দল যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রদর্শনী করতে পারে তাহলে হয়ত আমরা আরেকটি আর্জেন্টিনা জার্মানি মহারণ দেখতে পাব। তবে সেটা সেমি ফাইনালের আগে নয়। দুই দলই যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় পর্ব ও কোয়ার্টার ফাইনাল অতিক্রম করে তাহলে হয়ত সেমিফাইনালেই মোলাকাত হয়ে যাবে দুই দলের। প্রশ্ন সবার মুখে মুখে, এবার তবে আর্জেন্টিনার জার্মান ফাঁড়া কাটবে কি?