নগরের সড়কগুলো যেন নোংরা পানির নদী

নগরের সড়কগুলো যেন নোংরা পানির নদী

বৃষ্টি আমাদের কমবেশি সকলের প্রিয়। বৃষ্টিতে ভিজতে, বৃষ্টির পানিতে হাটতে ভীষণ ভাল লাগে অনেকেরই। কিন্তু রাজধানী ঢাকার বৃষ্টির পানি যেন সাক্ষাৎ আতঙ্কের নাম। একটু বৃষ্টি হলে যানজটের শহরে তৈরি হয় জলজট। রাস্তায় পানির মধ্যে মুহূর্তে তৈরি হয় লম্বা গাড়ির লাইন। কোন কোন গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে মাঝ রাস্তায়। ফলে বৃষ্টির সময়ে যানজট আরও বেড়ে যায়। কিন্তু এইসবের সাথে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি আমাদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে তা হল, বৃষ্টির সময়ে ঢাকার রাস্তায় যে পানি দেখা যায় তা খুবই দূষিত। ড্রেনের ময়লা, মল বৃষ্টির পানিতে মিশে পুরো পরিবেশকেই দূষিত করে তুলছে। এই নোংরা পানিতেই মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে। মানুষের মল, পশু-পাখির মরদেহ ঢাকা রাস্তার বৃষ্টির পানিতে ভাসাটা নিত্তনৈমিত্তিক। পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা বা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় মাত্রায় না থাকায় এমনটা ঘটে। মানুষ নিরুপায় হয়ে এসবের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। আর চতুর্দিকে দুর্গন্ধ তো উপরি হিসেবে আছেই। বৃষ্টিতে সে দুর্গন্ধ যেন বেড়ে যায় চারগুণ।

রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে বৃষ্টির পানিতে মলের ছড়াছড়ি দেখে পথচারী রোজাদার তৌহিদের বমি চলে আসে। কোন রকমে একটা গলিতে ঢুকে রিকশা নিয়ে বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করেও এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় তাকে। একঘন্টা পরে প্রায় তিনগুণ ভাড়া দিয়ে একটা রিকশা জোটে। এক তৌহিদকেই এমন যুদ্ধ করতে হয় তা নয়, রাজধানীবাসীর এই ভোগান্তি একটি সাধারণ দৃশ্য।

সময় যত যাচ্ছে ঢাকার জন্য বৃষ্টি যেন এক অভিশাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে, কারণ ঢাকা মহানগরীতে মাত্র ৩৮ থেকে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই সব যেন থেমে যায়। ময়লা আবর্জনা আর স্যুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে পানির লাইন মিলে কোমর সমান পানিতে ভাসতে থাকে শহর। এবছর রাজধানীর রাজধানীর কয়েকটি ফ্লাইওভারেও পানি জমতে দেখা গেছে।

সামান্য বৃষ্টিতেই  মিরপুর এলাকার বিশেষ করে মিরপুর ১০, ১১, ১২ –এর রাস্তাগুলো পরিণত হয় নদীতে । তার ওপর এখন সেই এলাকায় মূলসড়কের প্রায় অর্ধেক জুড়ে চলছে মেট্রোরেল অার রাস্তা নির্মাণ কাজ। যার ফলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ দ্বিগুণ হয়েছে। এখন পাঁচ মিনিট বৃষ্টি হলেই হয়ে যাচ্ছে হাঁটু পানি। মিরপুর ১৪ থেকে মিরপুর ১০ এর রাস্তায় পানির জন্য যাত্রী ওঠা নামা করতে পারে না। ঢাকার সবচেয়ে বড় এই আবাসিক এলাকায় রয়ে অসংখ্য চাকরিজীবী। জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছরই তাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তারপরও সিটি করপোরেশকে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। একজন নারী অভিযোগ করেন, রাস্তায় পানি জমে থাকলে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতে সমস্যা হয়; কখনো কখনো সম্ভব হয়ে ওঠে না।

উন্নয়নের জোয়ারেমিরপুর কাজীপাড়া শেওড়াপাড়ায় নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার হচ্ছে😄😄

Posted by Forhad Ahmed Yousuf on Thursday, May 31, 2018

এদিকে রাজধানী ঢাকার জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে কি পরিমাণ ক্ষতিকারক উপাদান মিশছে? কি ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে? এইসব নিয়ে নাই কোন গবেষণা। বৃষ্টির পানিতে যে পারিমান মল, ময়লা মিশে থাকে তাতে এই পানি গায়ে লাগলে রোগ-জীবাণুর আক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এটা নিয়ে কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা গেল, এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি শুধু না আছে গোটা পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে বলেন, ঢাকার আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা খুব বাজে। আর বৃষ্টিতে ময়লাগুলো পানিতে ভেসে সব জায়গায় ছড়িয়ে যায়। এ নিয়ে সব মহলের তৎপরতা কামনা করেন বিশেষজ্ঞরা।

আজ সকালে প্রায় ১ঘন্টার বৃষ্টিতে আমার এলাকার অবস্থা। অফিস যেতে ভ্যানে পানি পারের সময়ে তুলেছিলাম।

Posted by Shiblee Mehdi on Thursday, May 31, 2018