চীনের নতুন দ্বীপ ধ্বংসের হুশিয়ারি দিলো যুক্তরাষ্ট্র

চীনের নতুন দ্বীপ ধ্বংসের হুশিয়ারি দিলো যুক্তরাষ্ট্র

গত বৃহস্পতিবার পেন্টাগন চীনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপপুঞ্জে চীনের সামরিকীকরণ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করলো, যখন চীনের মিত্র দেশ উত্তর কোরিয়ার সাথে তাদের পরমাণু কার্যক্রম স্থগিতে আলোচনায় বসবার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এক প্রতিবেদক চীনের মনুষ্যনির্মিত বিতর্কিত কৃত্রিম দ্বীপগুলো ধ্বংসের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাইলে, যৌথ বাহিনীর পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজি বলেন, ‘আমি শুধু আপনাকে এতটুকু বলতে চাই যে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক ছোট ছোট দ্বীপকে ধ্বংস করে দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে’।

তার এই বিতর্কিত মন্তব্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। চীন তাদের কৃত্রিম দ্বীপে অবিচ্ছিন্ন সামরিকীকরণের যে প্রক্রিয়া অব্যহত রেখেছে তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্য নৌযান চলাচলের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

গত সপ্তাহে বিতর্কিত প্যারাসেল দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে মার্কিন নৌবাহিনী দুটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল। এই প্রথমবারের মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন অপারেশনে একাধিক জাহাজের ব্যবহার করল। যেটি থেকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবাধ অধিকার প্রদর্শনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

গত বুধবার, মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস বলেছেন, চীন এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘকালীন চ্যালেঞ্জ’। তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে গভীর মনোনিবেশ প্রদান করছে। চীন এশিয়াতে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের স্বপ্ন দেখছে।”

চীনা সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। গত বৃহস্পতিবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং তার নিয়মিত প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতৃক চীনের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে সামরিকীকরণের অভিযোগে ‘চোরের মায়াকান্নার মতো লাগে, চোরামি বন্ধ করুন!”

তিনি আরও বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় চীন সাগরের প্রবালদ্বীপে এবং অন্যান্য জায়গায় জাহাজ প্রেরণ করবে? যুক্তরাষ্ট্র এখানে কি করতে চায়?

মার্কিন সেনাবাহিনী ‘প্রস্তুত’

পেন্টাগনের অন্যতম সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে ম্যাকেনজির কথাগুলো বিশেষ অর্থ বহন করে বৈকি। তিনি জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ড্যানফোর্ডের একজন শীর্ষ সহযোগী কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেন। ম্যাকেনজি প্রায়ই ড্যানফোর্ড এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিসের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত বৃহস্পতিবার, ম্যাকেনজি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত।

ম্যাকেনজি বলেছেন, “ছোট ছোট দ্বীপগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অনেক অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেন, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপে যুদ্ধ করতে গিয়ে হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য জীবন দান করেছিল।”

তিনি বলেন, “সুতরাং সামরিক বাহিনীর যে সকল যোগ্যতা অর্জন করা দরকার মার্কিন সেনাবাহিনী আগেই অর্জন করে রেখেছে; এমন ঐতিহাসিক ঘটনার পরে আর কোন যোগ্যতা খোঁজা উচিৎ নয়।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে নিয়মিত ছোটখাটো অপারেশন পরিচালনা করে থাকে। সর্বশেষ অপারেশনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, একটি চীনা জাহাজ মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ কাছাকাছি আসার মধ্য দিয়ে চীন একটি অপেশাদারিত্বমূলক আচরণ করেছে।

ম্যাটিস বলেছেন, “এই সপ্তাহের শুরুর দিক থেকেই দেখা যাচ্ছে, চীনের যে দাবি– এই এলাকায় সামরিকীকরণ করা হয়নি, সে দাবীর উপরে তারা আর স্থির নেই। তারা এর মধ্যে এখান দিয়ে অস্ত্র পরিবহণ করেছে, যা তারা আগে কখনো করেনি।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের কৃত্রিম দ্বীপের অভিমুখে চীন বিরোধী জাহাজ এবং মিসাইল বিমান অবস্থান করতে দেখা গেছে।

ম্যাটিস আরও বলেন, “নৌবাহিনী কতৃক অপারেশনের এই ‘অবিচল হুশিয়ারি’ অত্র অঞ্চলে সবসময়ের জন্য চালু থাকবে।”

তিনি বলেন, “আমরা যা বিশ্বাস করি সে অনুসারে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন কিংবা আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল বহির্ভূত কোন কিছু করব না। আমরা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খুব স্বচ্ছ সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।”