আসন্ন চার সিটি নির্বাচনে ‘খুলনা মডেল আতঙ্ক’

আসন্ন চার সিটি নির্বাচনে ‘খুলনা মডেল আতঙ্ক’

দেশের চারটি বড় শহরে এখন ইফতার পার্টি যেন হয়ে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণার সবচেয়ে বেশ ভাল কৌশল। তারিখ ঘোষণার পরে শহরের বাতাসে বইছে ভোটের উত্তাপ। চার শহরের মধ্যে গাজীপুরে দলগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে এখনও প্রার্থী কারা হচ্ছেন তা ঠিক করতে পারেনি বড় দুটি দল সহ অন্যান্য দলগুলো। নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু না করলেও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বসে নাই। এদিকে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীরা ভুগছেন নির্বাচনের ‘খুলনা মডেল আতঙ্কে।’ খুলনাতে যে ধরণের অনিয়মের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয়েছে, এবং এটাকে যে ভাবে বাহবা দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে তাতে আতঙ্কিত হওয়টাই স্বাভাবিক।

তার পরেও কেউ থেমে নেই। বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনের প্রচার চালানোর পাশাপাশি যারা যার দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। মনোনয়নের জন্য চেষ্টা-তদবির শুরু করেছেন আগ্রহী প্রর্থীরা।

জাতীয় নির্বাচনের মৌসুমে চার সিটি নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়তি আগ্রহ। তাছাড়া এই চার সিটিতে এবারই প্রথম বারের মতো দলীয় মার্কাতে নির্বাচন হবে। বলাই বাহুল্য মূল লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষে। তবে রাজশাহী ও সিলেটে বিএনপির মিত্র জামায়াত আলাদাভাবে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় আছেন। জামায়াত আলাদা নির্বাচন করলে বিএনপির ভোটের হিসেবে পরির্বতন আসবে।

আসছে ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে এই তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। আর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে জুনের ১৩ তারিখ থেকেই। গাজীপুরের নির্বাচন রিটের কারণে আটকে যাওয়াতে অনেকে ভেবেছিলেন জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়তো আর কোন নির্বাচন হচ্ছে না। কিন্তু আইনি বাঁধা উঠে গেলে ২৬ জুন গাজীপুরের নির্বাচনের দিন ঠিক করা হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ঈদের পরে ১৮ জুন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামবেন। কিন্তু নির্বাচনী আচরণ বিধির তোয়াক্কা না করেই প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কেউই বসে নেই। নির্বাচনকে ঘিরেই সব কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।

রাজশাহীতে সরকার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টারও ব্যানারে শহর ছেয়ে গেছে। সরকারি দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী খায়রুজ্জামানের পোস্টার, ব্যানার শহরের সর্বত্রই। অন্যদিকে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনের পোস্টার ও ব্যানার গায়েব করে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা

এদিকে সিলেট , বরিশালেও একই অবস্থা। পোস্টার ব্যানার ও জনসংযোগ শুরু করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এখানে ইফতার পার্টি হয়ে উঠছে নির্বাচনী প্রচার ও জনসংযোগের অন্যতম মাধ্যম। ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার দিয়ে সারা শহর ছেয়ে ফেলছেন সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। সিলেটে সরকার দলীয় বদরুদ্দিন কামরান ও বিএনপির  মেয়র আরিফুল হক চৌধুরি বেশ সক্রিয় এবং তারাই নাকি মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন -এমন গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই নাকি তারা সক্রিয় হয়েছেন বলে মিডিয়াতে বলেন। বরিশালে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আছেন আছেন আওয়ামী লীগের সাদিক আব্দুল্লাহ ও জাহিদ ফারুক শামীম, বিএনপির মজিবুর রহমান সারোয়ার ও বর্তমান মেয়য় আহসান হাবিব কামাল।

সব ছাপিয়ে বিরোধী দলের মনে আতঙ্ক তৈরি করছে সিটি নির্বাচনের খুলনা মডেল। খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রকাশ্যে সিল মারা, ভোট ডাকাতি, বিরোধীদলের এজেন্টদের বের করে দেয়া সব ব্যাপক অনিয়ম সরাসরি মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, এর চেয়ে সুষ্ঠ নির্বাচন কবে হয়েছে? সরকারি দলের সবই এই মডেলকেই ব্যাপকভাবে প্রশংসা করেছেন। পুলিশ প্রশাসন থাকে সরকারি লোকদের ভোট ডাকাতে সহযোগিতা করতে -এমনটাই দেখা গেছে খুলনাতে।

এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনও সরকারের সুরেই কথা বলেছেন খুলনা সিটি নির্বাচন নিয়ে। তাই এখন বিরোধী শিবিরে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাকি সিটির নির্বাচনগুলো নিয়ে। এর মধ্যে যে দুইটিতে বিএনপি নেতারা মেয়র হিসেবে আছেন তারাও মামলা ও জেলের ভয়ে ভীত। খুলনা স্টাইলে নির্বাচন হলে একটাতেও তারা জয়ী হতে পারবে এটাও পরিস্কার। তাই উপরে উপরে সবার মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে আগ্রহ তৈরি হলেও বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে খুলনা মডেল আতঙ্ক। সিলেটে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কর্মী বলেন, “নির্বাচনের শৃঙ্খলা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত” । অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এই সরকারের আমলে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। বরং বিরোধীদলের নেতারা যে সব জায়গায় এখনও টিকে আছে তাদের হটানোর জন্যই এই নির্বাচনী হুজুগ। আসলে জনগণ ভোট দিতে না পারলে নির্বাচনের জিকির তুলে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কোন কাজের কাজ হবে না।