এসেছিলেন চোরাবালিতে আটকে যাওয়া রিয়ালকে উদ্ধার করতে। যখন বিদায় বললেন, তখন ‘তেরো’র আলোয় উদ্ভাসিত বার্নাব্যুর আকাশ। জিনেদিন জিদান; মাত্র আড়াই বছরের রাজত্বে টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই বিদায় বলে দিলেন ব্লাঙ্কোসদের।
বেনিতেজে বেদিশা রিয়ালের দিশারী হিসাবে পেরেজ যখন জিদানকে বেছে নেন ভ্রু কুচকেছিলেন অনেকেই। খেলোয়াড় হিসাবে নিজ সময়ের সেরা হলেও কোচিংয়ের সে অর্থে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না জিদানের। রিয়ালের মতন দলের প্রত্যাশার জোয়াল কাঁধে বইবার মতন সামর্থ্য তার রয়েছে কি না, তা নিয়ে যাদের সংশয় ছিল, সবাইকে লা জওয়াব করেই বিদায় নিলেন। প্রতি ষোল ম্যাচে একটি শিরোপা এনে দিয়েছেন প্রিয় ক্লাবকে। ম্যাচ জয়ের শতকরা সাফল্যের হারে রিয়ালের ইতিহাসের তৃতীয় সেরা।
কত রেকর্ড গড়েছেন আর কত রেকর্ড ভেঙ্গেছেন তার সাক্ষ্য দিবে পরিসংখ্যানই। কিন্তু জিদানের সবচেয়ে বড় সাফল্য বার্সার একাধিপত্যে ছেদ টানা। নিজের রাজত্বকালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা কখনো হাতছাড়া করেননি। পূর্ণ মেয়াদের দু মৌসুমের একবার জিতেছেন লা লিগা। এটিকেই নিজের সেরা সাফল্য বলে কবুল করেছেন। আর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলেছেন কোপায় লেগানেসের বিপক্ষের লজ্জাজনক পরাজয়টিকে।
পরিসংখ্যান সব সময় সবকিছু বলে না। যেমন এটি বলবে না, টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পূর্বে কতটা বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। লা লিগায় বার্সার হাতে বিধ্বস্ত হবার পর এক রকম দাবিই উঠেছিল জিদানকে হটানোর। সেটি তো সামাল দিয়েছেনই, ইতিহাস সৃষ্টি করেই বিদায় বলে দিয়ে জানালেন তিনি অন্য ধাতুতে গড়া।
শুধু সাফল্যের জন্যই নয়, জিদানের সময়ের রিয়ালকে মনে রাখতে হবে আরো বেশকিছু কারণে। প্রতি মৌসুম শেষেই নতুন তারকা এনে ব্যর্থ হবার যে রেওয়ায়েত চলে আসছিল সেটাও জিদানই ভেঙেছেন। বেনিতেজ যে দলটিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সে দলটিকে নিয়েই জিদায় হয়ে উঠেছিলেন অজেয়। বড় কোনো তারকা না এনে যাদের পেয়েছিলেন তাদের ওপর অটল বিশ্বাস রেখে গড়ে তুলেছিলেন চমৎকার দলীয় রসায়ন। যার ফলাফল, বহু বছরের মধ্যে রিয়ালের এমন মধুর সময়।
রিয়ালের মতন দলকে সামলাতে গেলে আলোচনা-সমালোচনা হবেই। জিদানকে নিয়েও হয়েছে। বিশেষ করে হামেস-মোরাতা ইস্যুতে। কিন্তু নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে জিদান বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ফুটবলটা অন্য অনেকের চেয়ে বেশিই বোঝেন তিনি। বর্তমান ফিফা বর্ষসেরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ারের সেরা সময়টাও কেটেছে জিদানের অধীনেই।
সংবাদ সম্মেলনে জিদানের পাশে বসা পেরেজের মুখায়বয়বই বলে দিচ্ছিল যা বলার। জিদান যে রিয়ালের কোচ বা খেলোয়াড়ই না, রিয়ালের সূর্য সন্তানদের একজন। এমন একজনকে বিদায় বলাটা বড় কঠিন।