এবার মুখোমুখি হলেন চিরপ্রতিদ্বন্ধী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার দুই প্রধান। ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক অদিত্য সিনহার সাথে এক সাক্ষাৎকারের বইকে কেন্দ্র করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস উইং) এর সাবেক প্রধান এএস দুলাত এবং পাকিস্তানের আইএসআই এর সাবেক প্রধান আসাদ দুররানি কথা বলেন নানা বিষয়ে। বইয়ের আলাপে উঠে আসে দুদেশের সম্পর্ক, মধ্যকার যুদ্ধ, মোদি, নেওয়াজ শরিফ,কাশ্মিরসহ নানা স্পর্শকাতর ইস্যু।
তবে গত ২৪শে মে বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার অনুমোদন পাননি আসাদ দুররানি। উক্ত অনুষ্ঠানের দাওয়াত পাওয়ার পরেও তিনি ভারতীয় সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, উক্ত বইয়ের আরেক অংশীদার এ এস দুলাতসহ অনেক আমন্ত্রিত অতিথির এই অনুষ্ঠানে আসাদ দুররানির ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। এবং তাকে ভারতে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদও জানান সেই ভিডিও বার্তায়।
‘দ্য স্পাই ক্রনিকলস; র, আইএসআই এন্ড দ্য ইল্যুশন অফ পিস’ নামক এই বইটিতে এই দুই দেশের দুই প্রধানের জবানিতে আরো উঠে আসে, দুই সংস্থার তুলনামূলক কার্যক্রম, তাদের কর্মপদ্ধতি ছাড়াও তাদের নানা অপারেশন, হাফিজ সায়িদ ইস্যু, অখন্ড ভারত পরিকল্পনা ইত্যাদি বিতর্কিত ইস্যু।
সাংবাদিক আদিত্য সিনহা বিভিন্ন সময়ের দুলাত এবং আসাদ দুররানির নেওয়া সাক্ষাৎকারগুলো আয়োজন করা হয়েছে দুদেশের গন্ডির বাইরে; নেপাল, ইস্তাম্বুল, ব্যাংককসহ নানা জায়গায়।
আলাপে উঠে এসেছে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং মোদি সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সক্ষমতা প্রশ্নও। সে সম্পর্কে এই দুই গোয়েন্দাগুরুকে প্রশ্ন করা হলে, দুররানি বলেন, দোভাল অনেক বেশি ট্রাম্পের মত, কথা বলেন বেশি, কাজ কম। এবং দুররানি মনে করেন, ভারত-পাকিস্তানের সম্প্রীতির ক্ষেত্রে দোভাল কোন ইতিবাচক চরিত্র না।
অন্যদিকে, এএস দুলাত তার আলাপসঙ্গী দুররানির সাথে অনেকটা দ্বিমত করেই বলেন, পাকিস্তান প্রশ্নে দোভাল কোন কট্টরবাদী নন। এবং তিনি মনে করেন, মোদি ভারতের জন্যে একটি আশীর্বাদস্বরুপ।
সাক্ষাৎকারে ঘুরেফিরে আসে ভারত-পাকিস্তানের বেশ কিছু স্পর্শকাতর ইস্যুর অন্যতম কাশ্মির প্রসঙ্গ। ১৯৯০ সালে যখন প্রথমবারের মত হামলা হয়, তখন আসাদ দুররানি তার সংস্থার প্রধান ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাশ্মির প্রশ্নে তৎকালীন পাকিস্তানের দূরদর্শিতার অভাব তাদের অন্যতম একটি ‘বিরাট ভুল’ ছিল। এছাড়া তিনি বলেন, কাশ্মিরিদের রাজনৈতিক সমর্থন ব্যাপারটি পাকিস্তানের জন্যে ভাল হলেও পরবর্তীতে কাশ্মিরিদের যেকোন কিছু করতে দিতে চাওয়াটাই ছিল মারাত্মক ভুল।
আদিত্য সিনহার মধ্যস্থতায় চলা সে আলাপে আসাদ দুররানি দাবি করেন, ভারতের অনেক মিডিয়া চ্যানেলের পেছনে সেখানকার ‘র’ এর সরাসরি যুক্ততা আছে। এবং কোন একটি চ্যানেলে এই সংস্থার ২৫ মিলিয়ন ডলার লগ্নি আছে বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন। তবে এসব বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে জানান ’র’ এর সাবেক প্রধান এ এস দুলাত।
উক্ত বইটির পুরো আলাপ মূলত এদুটি দেশের বর্তমান রাষ্ট্রিক অবস্থার দিকেই নির্দেশ করছে বলে মনে করেন সাংবাদিক এবং রাজনীতি বিশ্লেষক বার্খা দত্ত। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে বলেন, এ দুটি দেশের পুরানো রাজনৈতিক ফর্মুলা ব্যর্থ হয়ে গেছে এবং দুটি দেশের মধ্যকার বরফ ভাঙার সময় এসে গেছে।