রাষ্ট্রপতি বিশেষ অধিকারবলে সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে তার দণ্ড মওকুফের এখতিয়ার রাখেন। এর আগে দেখা কোন না কোনভাবে দলীয় অপরাধীদেরকেই রাষ্ট্রপাতিরা ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। সর্বশেষ যাবজ্জীবন প্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে ক্ষমা ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ। অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে তার সাজা মওকুফের বিষয়টি সম্পন্ন করা হয়।
জোসেফ কত মানুষকে হত্যা করেছে, সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়নি, হলেও তাতে জোসেফেরে নাম ছিল না। বহুল আলোচিত এই সন্ত্রাসীকে প্রথমে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আদালত। হাইকোর্টেও মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল ছিল। পরে আপিল শুনানি শেষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানকে গুলি করে হত্যার দায়ে ১৯৯৯ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ এই সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। কারাগারে বন্দি জোসেফ ২০ মাস ধরে চিকিৎসার জন্যে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমমইউ) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কারাকক্ষে ছিলেন। জোসেফ অসুস্থ না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে আরাম আয়েশে সেখানে ছিলেন বলে খবর বের হয়েছিল। ফলে ৭ মে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে যায় কারা কর্তৃপক্ষ।
২০ বছর সাজা খাটার পর এই শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে সাজা মওকুফ করে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে করে মালয়েশিয়া চলে যান জোসেফ। সাজা মওকুফ থেকে শুরু করে বিদেশ যাত্রা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন করা হয়েছে।
অভিজাত পরিবারের সন্তান জোসেফের বড় ভাই মেজর জেনারেল আজিজ আহমদ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক। তাদের বাবা বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ওয়াদুদ আহমেদ। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট জোসেফ বড় ভাই হারিস আহমেদের হাত ধরে রাজনীতির মাঠে পদার্পণ করেন।
নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টি ছেড়ে হারিস যোগ দিয়েছিলেন যুবলীগে। তৎকালীন ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও হয়েছিলেন তিনি। জোসেফ তার বড় ভাইয়ের ক্যাডার বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বপালন করেন।
এরপর থেকে মোহাম্মদপুর-হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন জোসেফ। যোগ দেন সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলোচিত সেভেন স্টার গ্রুপে। পুরো রাজধানী তখন সেভেন স্টার গ্রুপ ও ফাইভ স্টার গ্রুপ নামে দুটি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করত। এভাবেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় নাম উঠে আসে জোসেফের।
ক্ষমা একটি মহৎ গুন, তবে যখন সেটি রাষ্ট্রপ্রধান করেন এবং সেটি একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার ব্যাপারটি অসমীচীন নয়।