জিদানের আকস্মিক পদত্যাগ

জিদানের আকস্মিক পদত্যাগ

জৈষ্ঠ্যের তীব্র দাবদাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত বাঙালির। বৃষ্টিতে স্বস্তি মেলে, বজ্রপাতে ভয়। কালো মেঘলা আকাশ উপমায় সুন্দর, বাস্তবে ভয়ংকর। জিনেদিন ইয়াজিদ জিদানের পদত্যাগে রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তদের মনেও বাস্তবতার উপক্রম। ঠিক কিছুক্ষণ আগে হয়ে যাওয়া প্রেস কনফারেন্সের কনফার্মেশন ভক্তরা পেয়েছে দুপুরবেলাতেই। কয়েকঘন্টায় জল্পনা কল্পনা ডালপালা মেলে বহুদূর ছড়িয়েছে । মিডিয়ার সামনে জিদান যদি বলতেন, নেইমার আসছে কিংবা রোনালদো যাচ্ছেন তাহলে উপস্থিত সাংবাদিকরাও হয়ত বলত ‘ওহ আচ্ছা’। একেবারেই অনুমিত নিউজ যে! কিন্তু জিদানের পদত্যাগের ঘোষণা শোনার কথা ভেবেছে ক’জন? বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটিয়ে বিদায় নিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ। স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন মাত্র আড়াই বছরে!
.
“রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে আমার যাত্রা অব্যাহত না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি”। অকস্মাৎ ডাক দেয়া সংবাদ সম্মেলনে আকস্মিকভাবে বাই বাই বললেন এই ফ্রেঞ্চম্যান। তিনি আরো বলেন- “এটি অদ্ভুত মূহুর্ত। কিন্তু জয়ের জন্য এই দলটিতে পরিবর্তন দরকার। ভিন্ন বক্তা, ভিন্ন কাজ, কাজের পদ্ধতি। সবমিলিয়েই আমার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ।”
মাত্র ক’দিন আগেই ইতিহাস গড়ে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলা লস ব্ল্যাংকোদের জন্য এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত সংবাদ। প্রেসিডেন্ট পেরেজের কণ্ঠে যেন একই অভিব্যক্তি- “জিদান আমাকে বলার পর আমি থ হয়ে গেছিলাম। তাকে বুঝানোর (মাদ্রিদে থাকতে) অনেক চেষ্টাই করেছি আমরা। তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান রয়েছে”।
.
২০১৬ সালে মৌসুমের মাঝপথে রিয়ালের অ্যাকাডেমি কাস্তিয়ার কোচ জিদানের হাতে মূল দলের দায়িত্ব তুলে দেয় পেরেজ। মাত্র দেড় বছর আগে লস মেরেঙ্গুয়েজদের সহকারী কোচও ছিলেন। দায়িত্ব নিয়েই রাফায়েল বেনিতেজের ছন্নছাড়া দলকে কক্ষপথে ফেরান। ১২ পয়েন্টের ব্যবধান থেকে মাত্র ১ পয়েন্টে কমিয়ে এনে রানার আপ করান লা লীগায়। লীগ আনতে না পারলেও সে মৌসুমে জিদান মাদ্রিদে নিয়ে আসেন মাদ্রিদের একাদশ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা। লীগের আফসোস ঘুচান পরের বার। ২০১৬-১৭ মৌসুমে রিয়ালের তেত্রিশতম লা লীগা বার্ণাব্যুতে আসে জিদানের হাত ধরেই। ইউসিএল অব্যাহত সেবারও। ইউসিএল যুগে প্রথম দল হিসেবে টানা দুই ফাইনাল, দুই শিরোপা। সঙ্গে স্প্যানিশ সুপার কাপ, উয়েফা সুপার কাপ আর ক্লাব বিশ্বকাপ মিলিয়ে মাদ্রিদে এনে দেন বছরে পাঁচটি ট্রফি, একমাত্র কোচ হিসেবে।  জিদানের ঝুলিতে আরো রেকর্ড রয়েছে। বব পেইসলি, কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে তৃতীয় কোচ হিসেবে তিন ইউসিএল জয়ের রেকর্ড ভাগ করে নিলেও তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি জিতেছেন টানা তিনবার। মাদ্রিদকে প্রথম দল হিসেবে টানা দুইবার ক্লাব বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্ব এনে দেওয়া ব্যক্তিটিও জিদান।
.
জানুয়ারি ৪, ২০১৬ থেকে মে ৩১, ২০১৮। রিয়াল ক্যাম্পে কাটানো ৮৭৫ দিনে অল হোয়াইটস শিবিরে এনে দিয়েছেন তিনটে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, দু’টো ক্লাব বিশ্বকাপ, দু’টো ইউরোপিয়ান সুপার কাপ আর একটি করে লা লীগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ। আড়াই বছরে রিয়াল মাদ্রিদেরর ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন ২০৬ ম্যাচে, জিতেছেন ১৩০ ম্যাচ, ড্র ৪৬ আর পরাজয় ৩০ ম্যাচে (সূত্র: উইকিপিডিয়া) । মাদ্রিদকে টানা ৪০ ম্যাচ অপরাজেয় রাখা সাবেক মাদ্রিদ তারকা কোচ সবচেয়ে কম ম্যাচে জিতেছেন সবচেয়ে বেশি শিরোপা। ২০৬ খেলায় ৯ শিরোপা। গড়ে মাত্র ২৩ ম্যাচে ভক্তদের একবার করে ট্রফি জয়ের আনন্দে মাতিয়ে জিদানও মেতেছেন অর্জনের আনন্দে। দুরন্ত রসায়নের গল্পটাও শেষ করেছেন অতি অল্প সময়েই!