যে সব রাজনৈতিক নেতারা জনগণের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত না করে শুধু বিলাস বহুল জীবনযাপন করে তাদের জন্য রাজনীতি করাকে আমি কঠিন করে তুলব
-জিয়াউর রহমান
বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাল্ট ফিগার বা প্রতীকী-পুরুষ নির্মাণের বাড়াবাড়ি আছে। জিয়াউর রহমান নিয়ে বাগাড়ম্বর করতে হয় না। কারণ জিয়াউর রহমান নিজ গুনে স্বমহিমায় স্মরণীয় হয়ে আছেন। অনেক মানুষ তাঁর অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে উৎসাহিত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল, যারা জিয়াউর রহমানের সাথে রাজনীতি করেছেন তাঁরা এখনও সক্রিয় এবং জিয়াউর রহমানের প্রতি মুগ্ধতা তাঁদের দিন দিন বেড়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতির পিতা নামক এমন এক গণবিদ্বেষী প্রতীক দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে যা খুবই হাস্যকর। আমি বিস্তারিত আলোচনা করব না। আজকের লেখার উদ্দেশ্য কোন আলোচনা হাজির করা নয়। বরং একটা প্রস্তাবনা হাজির করা। বাংলাদেশ হলো এমন একটি মুসলিম দেশ যে দেশের মানুষ ধর্মের সম্মানকে জীবন- জাতীয়তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেন। এমন একটি দেশের জনগণের ওপর জোর করে জাতির পিতার মিথ চাপিয়ে দেয়া বলাৎকারের শামিল। এটা মুসলমানদের আত্মপচিয়ের সংকট তৈরি করে। সবাই জানেন, মুসলিম জাহানের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.)। এখন বাংলাদেশের মানুষকে যতই বাধ্য করা হোক শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আইন করে কোন কিছু চাপিয়ে দিলেও হৃদয়ের উপর কোন হুকুম চলে না। এতে শেখ মুজিবকে আরও হেয় করা হয়। কিন্তু আত্মঅহম-এ ফেটে পড়া রাজনৈতিক দলটি তা বুঝতে পারে না। শেখ মুজিব বড় না জিয়া বড় এই ধরণের ফালতু তর্কে আমি যেতে চাই না। কারো ভূমিকা মূল্যায়ন করার চেয়ে আমার আগ্রহ একটি ব্যাক্তিত্বের যথার্থ ডাইমেনশন আবিষ্কার করার দিকে। সেই ব্যক্তির আরও ইনসাইট আবিষ্কার করে এখনকার প্রয়োজনের ভেতর তার প্রতীককে প্রতিষ্ঠা করতে পারাই বড় কাজ। যার যার মহত্ব নিয়ে সে সে থাকুক। এটা নিয়ে ব্যক্তি হিংসা ও কুৎসা রটনার লীলা শুরু করার দরকার নাই। আমি সাদা চোখে কিছু কথা বলছি। এবং এর উদ্দেশ্য অতি পরিষ্কার। এখনকার রাজনৈতিক স্থবিরতার ভিতর একটি কার্যকর নেতার প্রতীককে জনগণের প্রেরণার উৎস আকারে নির্মাণ করা। এই প্রয়োজন অনেকগুলো কারণে তৈরি হয়েছে। সেই আলোচনায় যেতে হলে একটু পিছন থেকে শুরু করতে হবে।
একাত্তর সালে সবার ভূমিকাই বড়। একজন সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে মূল নেতা সবার ভূমিকাই বড়। আর এখানে জিয়া সরাসরি মাঠের যোদ্ধা। ফলে এটা নিয়ে আর কোন আলাপ দরকার নাই। একটি দেশের স্বাধীনতার পরে যদি নেতারা শোষক হিসেবে হাজির হয় তাহলে জনগণের অবদানটাকেই বড় করে দেখতে হবে। আর তখন নেতারটা ধান্দাবাজ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। যেটা হয়েছে লীগের ক্ষেত্রে। ‘৭১ এর পরে দেশে প্রথম গণহত্যা হয়েছে এই দলটির নেতৃত্বে। সব দলের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে শেখ মুজিবের শাসন আমলেই। বাংলাদেশটা একটা জলন্ত কড়াই হয়ে উঠেছিল এই ফল্স মিথের হাত ধরে। এই অবস্থা দেখে দেশপ্রেমিক জনগণের ভিতর থেকে বিদ্রোহ-বিপ্লবের চেষ্টা জাগ্রত হলে নিষ্ঠুরভাবে তা দমন করা হয়েছে। রক্ষীবাহিনীর মতো ঘাতক বাহিনী তৈরি করে স্বাধীন দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো হয়েছে। এসবই আপনারা কম বেশি জানেন। তারপরেও শুধুমাত্র বিবেকহীন কলকাতামনষ্ক বুদ্ধিজীবীদের দাপটের কারণে এই দলটির একটি শক্তিশালী বয়ান খাড়া করা হয়েছে। গণবিরোধী বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের ইজারাদারি এই দলটির হাতে তুলে দিয়ে দেশে আবারও হত্যা-গুম ও সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদ ডেকে এনেছেন। ‘৭১ এর পরবর্তী যে লীগ মানুষের মনে জমের মতো আতঙ্ক তৈরি করেছিল তা আবারও ফিরে এসেছে। স্বাধীনতার পর পর এমন করুণ একটি হত্যাকাণ্ড জাতিকে নাড়া দিতে পারেনি। কেন পারেনি। তার উদাহরণ দিতে গিয়ে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টারের একটি মন্তব্য উল্লেখ করতে চাই।
“They had that talent in Zia who eventually succeeded him. Mujib was a Political success and a managerial failure.”
- Z. Khasru. from the book “The Bangladesh Military coup and the CIA link”- page: 267
যাইহোক এই গণতন্ত্র হত্যাকারী দলটির নেতাকে কেউ জাতির পিতা হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। আর এটা মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য বিব্রতকর, অযৌক্তিক। আর এতো গণবিরোধি অবস্থান নিয়ে জাতির কাছে পিতা হবার আকাঙ্খাও হাস্যকর। এই পিতা-পিতা খেলা পরিস্থিতি আরও ভয়ানক করে তুলছে। অন্য দিকে এটার কোন দরকারও নেই। আমাদের দরকার একটি নেতৃত্ব। যা বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর দাঁড় করাবে। আর সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ যদি কোন নেতা প্রকৃত অর্থে জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পেরে থাকেন তা, জিয়াউর রহমান। তার অবদানের কথা সুদুর অতীতের ইতিহাস নয়। অনেকেই দেখেছেন। ফলে এই নেতার অস্তিত্বই কেবল বাংলাদেশের হৃদয়ের সাথে মিশে আছে। জিয়া নেতৃত্ব আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত। শেখ মুজিবের নেতৃত্ব যেখানে ব্যর্থ হয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন একটি প্রতারণায় রূপ নিয়েছিল জিয়া সেখানে নেতৃত্বের সফলতার দৃঢ় উদাহরণ স্থাপন করেছেন। এখানে স্মরণ রাখা দরকার যে, জাতীয় ৪ নেতা বলে যে মিথ তৈরি করা হয়েছে উনারাও এই ফ্যাসিবাদের শরিক ছিলেন। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য তারা কোন লড়াই এর দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারেনি।
ফলে দেশের এই নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় এমন এটি নেতার ইতিহাসকে জলন্ত প্রমাণ ও উজ্জীবিত হওয়ার প্রেরণা আকারে পাওয়া খুবই দরকার ছিল। জনগণের মনে এমনিতেই জিয়া সবচেয়ে প্রাণের নেতা হিসেবে আসন নিয়ে আছেন। কিন্তু আমি যে দিকটি মাথায় রেখে প্রস্তাব করছি তা আরও জরুরি। আমি সাম্প্রতিক পরাধীন অবস্থা মাথায় রেখে তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে জিয়াকে জাতির নেতা হিসেবে বরণ করে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এর অনেক কারণ আছে। মাত্র দুইটা উল্লেখ করি। এক. জাতির পিতার প্রহসন এবং অপ্রয়োজনীয় মিথ থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া। দুই. দেশের এই ফ্যাসিবাদি শাসন আমলে গণতন্ত্রহীনতার বোধ জনমনে প্রবল হয়ে আছে। এই দেশে প্রথম যিনি গণতন্ত্র প্রচলন করে দেশকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করতে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন সেই জিয়াউর রহমানকে এখনকার মুক্তির প্রতীক আকারে সামনে রেখে নতুন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য এ ছাড়া বিকল্প নাই।
বিএনপিকে সবাই নানা নসিহত দেয়। এখানে নাকি কারো উপর কারো দখল নাই। সবাই নাকি যার যার মতো চলে। এটা বিএনপির গলদ হিসেবে না দেখে এটাকে বিএনপির গণতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় হিসেবে দেখতে হবে। এখানে সব মতের সহাবস্থান হবে। এখানে সব জাতের অধিকার থাকবে। একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের ঐক্য বিএনপিকেই গড়ে তুলতে হবে। আর এর প্রাণভোমরা হিসেবে সামনে থাকবে জাতীয় নেতা জিয়াউর রহমানের উজ্জ্বল প্রেরণা। আজ থেকে চারদিকে উচ্চারিত হবে জাতির নেতা নেতা জিয়াউর রহমান ধ্বনি। বাংলাদেশ পরাজিত হতে পারে না। গণতন্ত্রের সংগ্রামে এই মহান নেতার প্রতীককে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়াই এখনকার কাজ। জাতির নেতার অনুপস্থিতিতে তাই শোক নয়। জাতির নেতা মরে না। ফিরে ফিরে আসে মুক্তিকামী জনতার প্রতিটি সংগ্রামী পদক্ষেপে। জাতীয় নেতা জিয়াউর রহমান অমর হোক।