গরমে দাদ রোগ ও করণীয়

গরমে দাদ রোগ ও করণীয়

দাদ ফাঙ্গাসজনিত একটি সংক্রমণপ্রবণ রোগ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এর প্রাদুর্ভাব থাকলেও আমাদের দেশের মতো গরম ও ঘামপ্রবণ দেশে বেশি দেখা দেয়। সব বয়সের মানুষই এতে আক্রান্ত হতে পারে। শরীরের সব স্থানে দেখা দিলেও হাত, পা, বগল, কুঁচকি ও কোমরে আক্রান্ত হয় বেশি। মাথা ও কুঁচকিতে প্রায় একই ধরনের ফাঙ্গাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারে। এর জন্য দায়ী ডারমাটোফাইট গোত্রের ফাঙ্গাস।

এ রোগের কারণ

ডারমাটোফাইট গোত্রের ফাঙ্গাস ত্বকের ওপর বাস করে। পরিস্থিতি অনুকূলে পেলেই দাদের সৃষ্টি করে। যারা বেশি ঘামেন এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা এ রোগে আক্রান্ত হন বেশি। ঘাম এ রোগের জন্য দায়ী। কারণ ফাঙ্গাস বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ঘাম। তাই গরমে এ রোগ বেশি দেখা দেয়।

কীভাবে রোগ ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শ এ রোগ ছড়ায় আবার তার ব্যবহার করা জামা-কাপড়ের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এছাড়া আক্রান্ত গৃহপালিত পশুর মাধ্যমেও সংক্রমণ হতে পারে। তাই একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের সবাই সংক্রমণের ঝুঁঁকিতে থাকেন। ব্যবহৃত বিছানার ছাদর, তোয়ালে, চিরুনি ছাড়াও অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রী অন্য কেউ ব্যবহার করলে দাদ ছড়ায়। ব্যায়ামাগার ও সুইমিং পুলের মতো স্থান থেকে অ্যাথলেটস ফুট সংক্রমণ ছড়ায়।

কেমন দেখায়

দাদ সাধারণত লালচে আংটির মতো। মাঝে তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার অংশের চারদিকে উঁচু। আক্রান্ত স্থানে খুশকির মতো আবরণ থাকতে পারে। আক্রান্ত স্থানে চুলকানি অনুভূত হতে পারে।

যেভাবে বোঝা যায়

সাধারণত ত্বক, নখ ও চুল আক্রান্ত হয়। ত্বক শুষ্ক, লালচে, খসখসে হয় এবং খোসপাঁচড়ার মতো চুলকায়। মাঝে মাঝে ত্বকে ফুসকুড়িও দেখা যায়। হাতের তালুর ভাঁজে, আঙুলের পাশে ও পায়ের আঙ্গুলের মাঝে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। এতে নখ ভঙ্গুর, পুরু ও নষ্ট হয়ে যায়। পায়ের নখ এবং হাতের নখ উভয়ই এতে আক্রান্ত হতে পারে। পেট ও হাত-পা লালচে হয়ে যায় এবং রিংয়ের মতো গোল দাগ পড়ে। চুল পড়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এ সংক্রমণ একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে যেতে পারে। শরীরের মেদ-ভুঁড়িতে, স্তনের নিচে যেখানে উষ্ণ ও স্যাঁতসেঁতে বা ভিজা থাকে সেসব অংশে এর সংক্রমণ হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ফোড়া হয়, চুলকায়, দাগ পড়ে ও হলদেটে সাদা রঙের দাগ পড়ে।

প্রতিরোধের উপায়

অন্যের ব্যবহার করা সামগ্রী এড়িয়ে চলতে হবে। খোলামেলা, পরিষ্কার ও তুলনামূলক ঠাণ্ডা স্থানে বসবাস করা। ঘাম তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে ফেলা। টাইটফিট পোশাক ব্যবহার করা যাবে না। পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে আসার পর হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।

চিকিৎসা

দাদ রোগ নির্মূল ও পুনঃসংক্রমণের আশঙ্কা দূর করতে আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য ক্রিম, লোশন ও পাউডার দেয়া হয়। তবে বেশি জায়গা আক্রান্ত হলে এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মুখে খাওয়ার ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে।

দাদ থেকে মুক্তির সহজ উপায় হলো গোসলের পর ভালো করে শরীর মুছতে হবে। পোশাক ও অর্ন্তবাস যথাসম্ভব ঢিলেঢালা পড়তে হবে। সুতির মোজা ও অর্ন্তবাস ব্যবহার করতে হবে। কারো ব্যবহৃত তোয়ালে, চিরুনি ব্যবহার করা ঠিক না। বিছানার তোষক, চাদর ও কাপড় কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। মাথার ত্বকে দাদে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বালিশ, টুপি, চিরুনি, কাঁচি ফেলে দিতে হবে বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পা শুকনো রাখতে হবে।

মনে রাখতে হবে, এ রোগের চিকিৎসা খুবই সহজ ও দ্রুত আরোগ্য সম্ভব। তবে দেরি করলে অনেক সময় জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাজেই যথাসম্ভব দ্রুত চিকিৎসা নেয়া উচিত। কারণ এ রোগ থেকে নিজে ভালো থাকলে পরিবারের সদস্যরাও ভালো থাকবেন।