ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পবিত্র রমজান মাসজুড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখেন। রোজা থাকা অবস্থায় সর্বপ্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি জীবনের সার্বিক বিষয়ে সংযমের চর্চা করা হয়। এই সিয়াম সাধনার মাসে রোজাদারদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য থাকা চাই নিয়মতান্ত্রিক দিন যাপন। এখানে দরকারি কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো–
প্রচুর পানি ও শরবত পান করা
ইফতারের পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত এই সময়টিতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ইফতারিতে বিভিন্ন ফলের জুসের আয়োজন করতে হবে। রাতে খাবারের আগ পর্যন্ত প্রতি আধা ঘন্টা পর পর আধা গ্লাস বা এক গ্লাস পানি পান করা যেতে পারে। এভাবে এই সময়ে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতে হবে। এটি শরীরের পানি শূন্যতার পাশাপাশি হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। যারা ইফতারের পরে চা পান করেন তারা গ্রীন টি বেছে নিতে পারেন।
হালকা ব্যায়াম
যখন রোজা রাখা হয় তখন শরীরের ক্যালরি কিছুটা কমে যায়। ইফতারের সময় এক সাথে অনেক খাবর গ্রহণ করলে শরীর ভারি ভারি লাগে। আপনি আপনার শরীর সুস্থ রাখার জন্য ইফতারে কী কী খাচ্ছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবার বেশি হয়ে গেলে তারাবির নামাজের আগে একটু হালকা ব্যায়াম করে নেয়া যেতে পারে, এতে করে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। যারা নিয়মিত জিমে যান তাদের জন্য রমজানে এই সময়টি সবচাইতে যুতসই।
ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া
অনেকেই ইফতারিতে প্রচুর পরিমাণে ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে থাকেন। আবার আমাদের অনেকেই ভেবে থাকি যে, ইফতার মানেই ভাজাপোড়া। কিন্তু যাদের গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের সমস্যা রয়েছে তারা সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে ভাজা পোড়া ও তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ করলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বেশি করে দেশি ফল খাওয়ার চেষ্টা করলে অল্পতেই আপনার পেট ভরে যাবে। আর যারা রোজায় ফিট থাকতে চান তাদের জন্য তো দেশি ফলের কোনই বিকল্প নেই।
একইসাথে রোজা ও ফিটনেস
প্রতিদিন রুটিন করে কিছুটা সময় আপনি জিম থেকে ঘুরে আসতে পারেন। সেই ব্যায়ামগুলো রক্ত চলাচলে সাহায্য করে সে ব্যায়ামগুলি করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, অন্যান্য সময়ের মতো রমজানে কঠোর পরিশ্রম করে জিমে বেশি সময় দেওয়ার পরিণতি ভালো হবে না।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ ও কাঁচা লবণ পরিহার
ইফতারে এবং সেহরিতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের জন্য যেসব খাবার উপকারি এবং শরীরে যথেষ্ট শক্তি জোগায় সেসব খাবারই খেতে হবে। প্রোটিনের পাশাপাশি আঁশযুক্ত খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রোটিন ও আঁশযুক্ত খাবার হচ্ছে, ওটস, আপেল, লাল চালের ভাত, সাদা রুটি, এবং পাস্তা। আর অবশ্যই সেহরিতে কাঁচা লবণ খাওয়া যাবে না। কাঁচা লবণ অনেকেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটি নিসন্দেহে একটি বদঅভ্যাস। সেহরিতে কলা, খেজুর এবং দই চিড়াও খেতে পারেন।
গরমকালে রমজানের সতর্কতা
বেশ কয়েক বছর যাবৎ রমজানটা গ্রীষ্মকালে হওয়ায় একটু বেশি সতর্কতা প্রয়োজন। তাই যারা রোজা রেখে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই আপনার রোদচশমা ও ছাতা নিতে ভুলবেন না। যতটা সম্ভব কাজগুলো বিকেলের মধ্যেই সেরে ফেলতে পারলে ভালো। নিয়মমাফিক চলতে পারলে গরমের রোজাও অামাদের শরীর মনে বয়ে আনতে পারে অনাবিল প্রশান্তি।
সবার রমজান ভাল কাটুক, মহিমান্বিত এই মাসে নির্বিঘ্নে ইবাদত বন্দেগি ও সংযমের চর্চায় কাটুক এই প্রত্যাশা রইল।