বেনজেমা বাতিল…
বেনজেমা অচল…
বেনজেমা চালসে…
বেনজেমায় আর চলে না…
বছর জুড়েই সমালোচকদের শানিত জিহ্বা এমন সব শব্দে আক্রমণ শানিয়েছে বেনজেমাকে উদ্দেশ্য করে। করবে নাই বা কেন? বছরের প্রায় অর্ধেকটা অমানিশায় আবৃত সময় কাটিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছিল কতটা সিদ্দতের সাথে জিদানের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণে প্রয়াসী তিনি। মাঝে তো দুয়োর ঝড়ও উঠলো ঘরের বাগ বার্নাব্যুতেই। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির প্রতিকূলতা বিবেচনায় রোনালদো স্বয়ং গলা ফাঠালেন সতীর্থের সমর্থনে। তাতেও খুঁব একটা কাজ হয়নি। রিয়ালের পরাজয় মানেই যেন নন্দঘোষ বেনজেমা।
আশ্চর্য ধীশক্তির পরিচয় দিয়েছেন সদা ধীরস্থির এই আদমি। সমালোচকদের পাল্টা জওয়াব ঠোটের বদলে পায়ের ব্যবহারেই দেয়ার চেষ্টা চালাতে লাগলেন নিয়ত। না, তাতেও এলো না কাংখিত সাফল্য। একের পর এক মিসকে আর ইত্তেফাক বলা যাচ্ছিল না। বরং মনে হচ্ছিল এটাই যেন ভবিতব্য। জিদানের ইনায়াতই বেনজেমার রক্ষাকবচ এমন কথাও ভাসতে শুরু করল বাতাসে। ক্রমাগত সে সমালোচনায় বেনজেমা কতটা আহত হয়েছিলেন জানা যায়নি, তবে এসব সমালোচনা জিদানের মনোভাবে যে কোনো মুখতালিফ গড়েনি তা মৌসুম শেষেই প্রমাণিত।
লা লিগার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছিল মৌসুমের মাঝপথেই। কোপায় পথ হারানোর পর সবেধন নীলমণি হয়ে ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। গ্রুপ পর্বে বুরুশিয়া, টটেনহাম; নক-আউটে পিএসজি, য়্যুভেন্তাস এবং বায়ার্নের বাঁধা পার হয়ে ফাইনালে রিয়াল কতটা কি করতে পারবে তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন খোদ সমর্থকরাই। শেষের শুরুতেই দেখা মিলল বেনজু ম্যাজিকের। জাত যোদ্ধার মতন সময়োচিত নৈপুণ্যে নিশ্চিত করলেন স্বপ্নের ‘তেরো’।
বায়ার্নের বিপক্ষে যেন তাবদির খুঁজে পেলেন সকল সমালোচনার। অসাধারণ নৈপুণ্যে জানান দিলেন এখনো বেনজামায় বিশ্বাস রাখতে পারেন জিদান। তবে সব সমালোচনার কঠোর জওয়াব দেয়ার জন্য যেন বেছে নিয়েছিলেন কিয়েভকে। রেকর্ড তেরতম শিরোপার প্রথম গোল থেকে শুরু করে মাঠে কাটানো প্রতিটি ক্ষণে সদর্পে জানান দিয়েছেন নিজের সরব উপস্থিতির কথা।
কারিওসকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় করে প্রথম যে গোলটি করেছেন সেটি একজন জাত স্ট্রাইকারের সুযোগ সন্ধানী রুপের অপরুপ প্রদর্শন। যদিও জিদানের জমানায় প্রথাগত স্ট্রাইকারের পরিবর্তে বেনজেমা অনেকটাই নিচে নেমে খেলে থাকেন। কিয়েভের ফাইনালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। স্বাভাবিকের তুলনায় ম্রিয়মাণ রোনালদোর অভাব বেশ ভালোভাবেই পুশিয়ে দিয়েছেন একাধিক আক্রমণের স্রষ্টা হয়ে, কখনোবা আক্রমণের শেষাংশে যোগ দিয়ে। কখনো কি-পাস বাড়াচ্ছেন তো কখনো স্কিলের ছন্দে নাঁচিয়েছেন রেডস রক্ষণ। এমন বেনজেমাই তো প্রত্যাশিত।
জিদানের ট্যাক্টিসে বেনজেমা মৌসুমপ্রতি গোলের ফোয়ারা ছোটাবেন এটি নেহায়েতই কবির মনের কল্পনা। তাই মৌসুম শেষে ক’জোড়া হ্যাট্রিক আদমি বগলদাবা করেছেন এ হিসাব হাস্যকরই ঠেকবে। বরং এ বেনজেমাই বেশি কাঙ্খিত যে, রোনালদোর নিষ্প্রভতার দিন জ্বলে ওঠে আলোকিত করবে বার্নাব্যুর আকাশ। সেটা যে তিনি কতটা ভালো পারেন, তা দেখিয়েছেন কিয়েভেই।
এ রাতটির জন্যই বোধকরি জিদান বধির সেজে সহ্য করেছিলেন সমস্ত সমালোচনা। আর এ রাতটি দিয়েই বেনজেমাও বুঝিয়ে দিলেন, তিনি বাতিল নন; বরং অবিশ্বাস্য এক ইতিহাসের অন্যতম অংশ।