আচমকা বৈঠকে দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান

আচমকা বৈঠকে দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান

এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ঐতিহাসিক সাক্ষাতের পর গতকাল তারা আবার সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। যা পিয়ংইয়াং এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে আরও সংলাপের পথ তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন এর সাথে তার পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করেছেন। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুসারে আগামী ১২ জুন সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হল। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পুনরায় আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

কিম এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন-জেইন গত এপ্রিলে একটি বৈঠকে মিলিত হন, যা ছিল দেশ দুইটির নেতাদের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো কোন বৈঠক।

শনিবার তারা সীমান্তবর্তী অসামরিক অঞ্চল পানমুনজমে ফের আলোচনায় বসেন। গত ২৭শে এপ্রিলের বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে কিম ও ট্রাম্পের মধ্যে প্রস্তাবিত আলোচনার বিষয়টি নিয়েও কথাবার্তা হয়।

বৈঠক শেষে কিম ও মুন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এক জাতি, আমারা কেন একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হব? আমাদের মধ্যে শত্রুতার কোন কারণ নেই’।

এর মধ্য দিয়ে পিয়ংইয়াং এবং সিওল আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকারও করল। ১৯৫৩ সাল থেকে চলতে থাকা যুদ্ধবিরতিকে তারা একটি শান্তিচুক্তিতে রূপান্তরিত করার বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, শনিবারে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত আচমকা বৈঠকের ফলাফল রোববার ঘোষণা করা হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার আলজাজিরা প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু থমাস জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে পানমুনজমের উত্তর এলাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ‘প্রকৃতপক্ষেই খুব গুরুত্বপূর্ণ’ ছিল।

তিনি বলেন, ‘গত ১১ বছরে এটাই প্রথম ঘটনা, যেখানে কোন দক্ষিণ কোরিয়ান নেতা অর্থবহ একটি আলোচনার জন্য উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করলেন। এমন প্রেক্ষিত সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। ফলে মুন কোন কালক্ষেপণ করতে চাননি। তিনি সময়ের সঠিক ব্যবহার করলেন এবং এই শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের জন্য সর্বাত্মক ভুমিকা পালন করলেন।

অনলাইন পত্রিকা কোরিয়া এক্সপ্রেসের প্রকাশক শে-ওয়াং কু বলেন, “বৈঠকটি আচমকা ঘটেছে, আমি বেশ ‘অবাক’ হয়েছি।”

তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ‘এটা খুব পরিষ্কার যে দুই কোরিয়া পারস্পারিক সমঝোতায় পৌছাতে খুবই আন্তরিক। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও এই উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুক।

‘ট্রাম্প সিঙ্গাপুরের শীর্ষ সম্মেলন বাতিল করার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বড় ধরণের রাজনৈতিক ভুল করলেন। কারণ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত দুই কোরিয়ার আলোচনায় খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি।

তিনি অবশ্যই তা উপলব্ধি করবেন এবং তার কর্মকাণ্ডের পুনঃর্বিবেচনা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শে-ওয়াং কু।

শনিবারের বৈঠকটি ছিল উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি শেষ করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সর্বশেষ অধ্যায়।

উত্তর কোরিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু অস্ত্র পরিহার করার আহবান জানালে এই মাসের শুরুর দিকে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পথ তৈরি হয়।