বিশ্ব ফুটবল আসরের ইতিহাস

বিশ্ব ফুটবল আসরের ইতিহাস

ফুটবল যেমনি পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা তেমনি ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা বিশ্বকাপ ফুটবলকে বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজন। কিন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলার আসরের শুরুটা মোটেও আজকের বিশ্বকাপের মত ছিল না। ফুটবলের জনক বলা হয় ব্রিটিশদের। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ফুটবল খেলার শুরু হলেও জনপ্রিয়তা পায় শেষ দিকে। ১৯০৪ সালে ফিফা যাত্রা শুরু করলেও ১৯৩০ সালে বসে প্রথম বিশ্বকাপ। তারপর নানা সময় বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহ, কাপ চুরি হওয়া, নতুন ট্রফিসহ নানা প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে আজকের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব ফুটবল বিশ্বকাপ।

ফুটবলকর্তাদের পথচলা

বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা হয়েছিল ১৮৭২ সালে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যে। প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল ১৮৮৪ সালে শুরু হওয়া ব্রিটিশ হোম চ্যাম্পিয়নশিপ। এ সময়ে গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের বাইরে ফুটবল খেলা বলতে গেলে হতই না। সেই শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্ত জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও নজরদারি করার মত কোন কর্তা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মি. ডেলেউনির নেতৃত্বে প্যারিসে ইউরোপের ৭টি দেশের এক বৈঠকে ফিফা গঠিত হয়। ১৯০৪ সালের ২১শে মে’র সে বৈঠকে উপস্থিত ছিল ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, পর্তুগাল ও স্পেনের ফুটবলকর্তারা। এবং এরাই হচ্ছেন ফিফার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বৈঠকে ফরাসি সাংবাদিক রবার্ট গুইরিন বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফা’র প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ফুটবলের জনক ইংল্যান্ড হলেও প্রতিষ্ঠাকালীন সে বৈঠকে তারা যোগ দেয়নি। ইংল্যান্ডের স্যার ড্যানিয়েল বার্লি উলফুল ১৯০৬ সালে ফিফার সভাপতি নির্বাচিত হলে ইংল্যান্ড সদস্যপদ গ্রহণ করে। উলফুল ছিলেন ফিফার প্রথম সফল সভাপতি। ১৯১৮ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি ফিফার সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে ফিফার কার্যক্রম গতিশীল হয় এবং সদস্য সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ২১১ তে, যা কিনা জাতিসংঘের সদস্যের চেয়েও বেশি।

কাঠখড় পেরিয়ে প্রথম প্রতিযোগিতা

ফিফা (ফরাসি ভাষায় ফেদেরাসিওঁ অ্যাঁতের্নাসিওনাল দ্য ফুৎবল আসোসিয়াসিওঁ‌) বা ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল এসোসিয়েশন অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতি চার বছর পর পর বিশ্বকাপের আয়োজন করে থাকে ফিফা। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ফুটবল জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকলে ফুটবলের কর্তা প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজন হয়ে পরে। তখনো ফুটবলের কোন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা না হলেও ১৯০০, ১৯০৪ ও ১৯০৬ সালের অলিম্পিকে প্রদর্শনী খেলা হিসেবে রাখা হয় তবে এর জন্য কোন পুরস্কার বরাদ্দ ছিল না। তাই ১৯০৪ সালে ফিফা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঠিক পরেই ১৯০৬ সালে ফিফা সুইজারল্যান্ডে অলিম্পিকের আদল থেকে ভিন্ন একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। কিন্ত ফিফার ইতিহাসে প্রথম এই প্রতিযোগিতা ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালের অলিম্পিকে ফুটবল প্রথম আনুষ্ঠানিক খেলার মর্যাদা পায়। অলিম্পিকে অপেশাদার দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলার পাশাপাশি স্যার থমাস লিপটন ১৯০৯ সালে তুরিনে, ‘স্যার থমাস লিপটন ট্রফি’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এটি ছিল বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ক্লাবের (জাতীয় দল নয়) মধ্যে একটি চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা। এসব দলের প্রত্যেকে আলাদা আলাদা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল, এজন্য এই প্রতিযোগিতাকে অনেকে প্রথম বিশ্বকাপ বলে থাকেন। যাই হোক, ১৯১৪ সালে ফিফা অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত ফুটবল প্রতিযোগিতাকে ‘অপেশাদার বিশ্ব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয় এবং এই প্রতিযোগিতা পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। ফলস্বরূপ ১৯২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে বিশ্বের প্রথম আন্তমহাদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯২৪ সালে ফিফার পেশাদার যুগের যাত্রা শুরু হয়। উরুগুয়ে ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের অলিম্পিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক লাভ করে। কিন্ত ১৯২৮ সালে ফিফা অলিম্পিকের বাইরে আলাদাভাবে নিজস্ব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন স্বাগতিক দেশ হিসেবে অনেক ইউরোপীয় দেশ প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্ত পেশাদার যুগের প্রথম দুই অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের স্বাধীনতার শতবর্ষ ছিল ১৯৩০ সালে। তাই স্বাধীনতার শতবর্ষ পা দেয়া দু’বারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে ফিফা প্রথম বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হিসেবে নির্বাচন করে।

অবশেষেজুলেরিমে

অনেকে মনে করেন মঁশিয়ে জুলেরিমে, যার নামে বিশ্বকাপ ফুটবলের নামকরণ দীর্ঘ ৪০টি বছর বহাল ছিল, তিনিই বুঝি বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রস্তাবক। বাস্তবে তা নয়। ফিফা প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকেই ফিফার সাথে যুক্ত ছিলেন জুলে রিমে। ১৯১৯ সালে ফ্রান্সের ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জুলে রিমে। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে ফিফার সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ১৯০৪ সালে ফিফা গঠনের পরই সিদ্ধান্ত হয় ফিফা ‘বিশ্বকাপ ফুটবল’ আয়োজন করবে। ১৯০৬ সালে ফিফার প্রথম সভাপতি হওয়ার পরে মি. ডেলেউনি স্বপ্ন দেখেন ফুটবল বিশ্বকাপের। ১৯০৬ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসর অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হলেও সে বছর আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্ত এর আগেই মি. ডেলেউনি ইহলোক ত্যাগ করার ফলে বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্নপুরণ হয়নি। ফিফার প্রথম ও দ্বিতীয় সভাপতি রবার্ট গুইরিন ও ড্যানিয়েল উলফুল ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে না পারলেও মি. ডেলেউনির মৃত্যুর পর তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ফুটবল ফেডারেশনের তৃতীয় সভাপতি মঁশিয় জুলেরিমে। ১৯২১ সালে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর পরবর্তী ৩৩ বছর তিনি সভাপতির পদে বহাল থাকেন। তিনি বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এমনকি জুলেরিমে ট্রফির ব্যয়ভারও বহন করেন। তার সভাপতিত্ব থাকাকালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবং এর পেছনে তার অগ্রণী ভুমিকা থাকার ফলে বিশ্বকাপের নামকরণও হয় তার নামানুসারে ‘জুলেরিমে ট্রফি’। ১৯৫৬ সালে মঁশিয়ে জুলেরিমের মহাপ্রয়াণ ঘটলেও ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয় পর্যন্ত এর নাম জুলেরিমে ট্রফিই ছিল।

ফিফার তৃতীয় সভাপতি জুলেরিমে (সর্ববামে)। Image: Popperfoto/Getty Images

গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী সাফল্যের দেবী হচ্ছে ‘নাইক’। বিশ্বকাপ জেতার জন্য সফলতার দেবীকেই প্রয়োজন। তাই সাফল্যের দেবী নাইক-এর আদলেই তৈরি করা হয় ডানাযুক্ত সোনার পরী আকৃতির বিশ্বকাপের ট্রফি। ১১ পাউন্ড ওজনের এই ট্রফি তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় প্যারিসের বিখ্যাত অলংকার নির্মাতা আবেল লফরিউরকে। মোট ১৩টি দেশ অংশ নেয় বিশ্বকাপের প্রথম লড়াইয়ে। ফাইনালে ৯৩ হাজার দর্শকের সামনে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব লাভ করে উরুগুয়ে এবং সোনায় মোড়ানো জুলেরিমে ট্রফির প্রথম হকদার হয়। জুলেরিমে ট্রফি আয়োজনের সময় ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, কোন দল তিনবার বিশ্বকাপ জিতলে ‘কাপ’ চিরকালের জন্যে দেয়া হবে। ব্রাজিল ১৯৫৮, ৬২ ও ৭০ সালে তিনবার বিশ্বকাপ জিতে জুলেরিমে ট্রফি নিজেদের করে নেয়। কিন্ত অদ্ভুত কান্ড ঘটে, ৫৮ ও ’৬২ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতার পর ’৬৬ সালে জুলেরিমে ট্রফি রহস্যজনকভাবে চুরি হয়ে যায়। ৬৬ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ফুটবলের জনক ইংল্যান্ড। রহস্যজনক চুরির চেয়েও মজার ব্যাপার হয় যখন একটা কুকুর এই ট্রফি খুজে পেতে সক্ষম হয়। নরউডের এক বাগানবাড়ি থেকে ‘পিকলস’ নামের এক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর সেই হারানো ট্রফি খুঁজে বের করে। ৬৬ বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড জিতলেও ১৯৭০ সালে তৃতীয় বারের মতো ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয় করার পর তাদেরকে চিরস্থায়ীভাবে ‘জুলেরিমে ট্রফি’ দিয়ে দেয়া হয়। রিও ডি জেনেরিওতে অবস্থিত ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সদর দপ্তরে ট্রফিটি রাখা হয়। কিন্তু ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৩ কাপটি পুনরায় চুরি হয়ে যায় এবং ‘জুলেরিমে ট্রফি’র পাশাপাশি আরো তিনটি ট্রফি চুরি করে নিয়ে যায়। মজার বিষয় হচ্ছে, অরিজিনাল ‘জুলেরিমে ট্রফি’র ঠিক পাশেই ট্রফিটির একটি রেপ্লিকা রাখা ছিল, তারা সেটি নেয়নি। যাইহোক পরবর্তীতে আর এই ট্রফির হদিস কেউ করতে পারেনি।

আসল নতুন বিশ্বকাপ

ব্রাজিল তিনবার কাপ জেতার পর চিরতরে বিশ্বকাপের ট্রফির হকদার বনে যাওয়ায় নতুন একটা বিশ্বকাপ তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ১৯৭১ সালে ফিফা একটি নতুন বিশ্বকাপ তৈরির উদ্যোগ নেয় এবং বিশ্বকাপের নকশার ডিজাইন চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় ফিফা। বিজ্ঞাপনে ব্যাপক সাড়া মেলে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শীর্ষ শিল্পীরা ডিজাইন পাঠায় এবং এইসব শীর্ষ শিল্পীদের দেয়া নকশা হতে ৫৩টি নকশা বাছাই করা হয়। তার মধ্যে থেকে ইতালির ডিজাইনার সিলভিও গজ্জালির নকশা মনোনীত করে ফিফা। তবে এবার আর বিশ্বকাপ ট্রফির নামকরণ কোন ব্যক্তির নামে হয়নি। এবার নামকরণ হ’ল বিশ্বকাপকর্তা খোদ ফিফার নামের সাথে মিল রেখে ‘ফিফা কাপ’। একজন খেলোয়াড়ের হাতে উন্মোচিত গ্লোব বা পৃথিবীর আদলে গড়া হয় ফিফা কাপ। আর এবার ফিফা কাপের ওজন হ’ল ৫ কেজি আর উচ্চতা ৩৬ সে.মি. যা পুরো ১৮ ক্যারেট সোনায় মোড়ানো। ১৯৭৪ সালে ফিফা কাপের প্রথম আসর বসে পশ্চিম জার্মানিতে। প্রথম ট্রফি ঘরে তোলে স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানি। তবে এবার নিয়ম করা হয়, যে দল যতবারই কাপ জিতুক মূল কাপ পাবে না; রেপ্লিকা দেয়া হবে। ফলে এখন তিনবার কেন তিরিশবার জিতলেও কোন দল কাপ চিরতরে নিতে পারবে না। বিশ্বকাপ জয়ী দল পরবর্তী বিশ্বকাপ পর্যন্ত ট্রফিটি নিজেদের কাছে রাখতে পারে। এই সময়সীমা পার হয়ে গেলে তাদেরকে সোনার প্রলেপ দেয়া বিশ্বকাপের রেপ্লিকা দেয়া হয়। আর্জেন্টিনা, জার্মানি (পশ্চিম জার্মানি হিসেবে), ইতালি ও ব্রাজিল প্রত্যেকে ফিফা কাপের ট্রফিটি দু’বার করে জিতেছে। এবং ফ্রান্স কেবল একবার জিতেছে। ১৯৭৪ থেকে এখন পর্যন্ত ফিফা কাপেই বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন হচ্ছে। কিন্ত এরও শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে কারণ ২০৩৪ বিশ্বকাপের পর আর নতুন বিজয়ী দলের নাম লেখার মত জায়গা থাকবে না ফিফা কাপে!

বিশ্বকাপের বিস্তৃতি

বিশ্বকাপের প্রথম আসরে মাত্র ১৩টি দল অংশগ্রহণ করে। উরুগুয়েতে বিশ্বকাপ আয়োজনের কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল সফরে আসতে হতো। তাই শেষ পর্যন্ত বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়া ছাড়া অন্যান্য দলগুলো আসতে সম্মত হয়নি। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সাতটি, ইউরোপ থেকে দু’টি ও উত্তর আমেরিকা থেকে দু’টি দল অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ইউরোপে অনুষ্ঠিত হলে দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো ইউরোপে যেতে আগ্রহী থাকলেও কেবল ব্রাজিলই এই দুটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছিল। তাছাড়া তখনও পর্যন্ত কোন ব্রিটিশ দল বিশ্বকাপে আসতে আগ্রহী ছিল না। ১৯৩৪ বিশ্বকাপে ১৬টি দল মূল পর্বে অংশ নেয়। তবে ১৯৩৮ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়াকে দখল করায় প্রতিযোগিতায় দলের সংখ্যা কমে আবার ১৫ হয়ে যায়। ভারত, স্কটল্যান্ড ও তুরস্ক নাম প্রত্যাহার করায় এই বিশ্বকাপে ১৩টি দল অংশগ্রহণ করে। অধিকাংশ দলই ছিল ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ড অংশগ্রহণ করলেও ভারত, স্কটল্যান্ড ও তুরস্ক নাম প্রত্যাহার করায় এই বিশ্বকাপে ১৩টি দল অংশগ্রহণ করে। অধিকাংশ দলই ছিল ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত। পূর্ববর্তী দুই বিশ্বকাপ বয়কট করা উরুগুয়ে ১৯৫০ সালে আবার বিশ্বকাপ জিতে নেয়। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ১৬ দলের মধ্যেই বিশ্বকাপের খেলা অনুষ্ঠিত হত। ১৯৮২ বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২৪ করা হয়। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে দলের সংখ্যা ৩২-এ উন্নীত করা হয় যার ফলে আফ্রিকা, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা থেকে আরো বেশি দল অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।