৫ জন তারকা খেলোয়াড় বাদেই রাশিয়া যাচ্ছে আর্জেন্টিনা

৫ জন তারকা খেলোয়াড় বাদেই রাশিয়া যাচ্ছে আর্জেন্টিনা

ফুটবল জায়ান্ট আর্জেন্টিনার প্রতি উপরওয়ালার দরদ সবসময়ই বেশি। তা না হলে এত প্রতিভাবান খেলোয়াড় এক দলে থাকার কথা না। আর এই কারণে প্রায় সব সময়ই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্যে প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। তাই ভক্তকুল চিন্তায় ছিল কাকে রেখে কাকে নিবে কোচ। পরশু তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নসারথীদের নাম ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার স্কোয়াডে ফ্রান্স বা বেলজিয়ামের মত সব প্রতিভাবান এবং চেনা মুখ নিয়ে সাজানো হয়নি, কিন্ত মেসিকে নেতৃত্বে রেখে সাজানো এই দল কোন অংশে কম না। তাই হোর্হে সামপাওলি আর্জেন্টিনার ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করলেও সেই দল থেকে বাদ পড়ে যায় অনেক বড় নাম। আগুয়েরো দিবালারা সুযোগ পেলেও রাশিয়ার বিমানে উঠছেন না মাউরো ইকার্দি। ইন্টার মিলান অধিনায়ক সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে সিরি-আ’য় যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা। এছাড়াও বাদ পড়েছেন গোলকিপার নওহেল গাজম্যান। অন্যদিকে আলবিসেলেস্তের প্রধান গোলকিপার সার্জিও রোমেরোর ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া অবশ্যই ভোগাবে দলকে। আর্জেন্টিনার অফিশিয়াল টুইটার পেইজ নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা গোলকিপারের ইনজুরির সংবাদ।

এক নজরে আর্জেন্টিনা স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া চেনামুখগুলো–

ফার্নান্দো গ্যাগো

খেলোয়াড়দের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইনজুরিতে যাওয়ার একটা অভ্যাস সব সময়ই থাকে। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ও ভ্যালেন্সিয়া মিডফিল্ডার গত দুই মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরেই বসে থেকেছেন। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্যে। বর্তমানে বোকা জুনিয়র্সে খেলা ৩২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য না হলেও তার মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অভাব আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে রয়েছে। বর্তমান ঘোষিত দলের মাত্র পাঁচ জন খেলোয়াড়ই গ্যাগোর থেকে বেশি জাতীয় দলে খেলেছে। তাই বলাই যায় জাতীয় দলের হয়ে ৬১ ম্যাচ খেলা ঝানু এই খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবারের স্কোয়াড।

এযেকুয়েল লাভেজ্জি

 

পিএসজি ছেড়ে চীনে খেলতে যাওয়ার পর থেকেই তার ওপর থেকে আলোচ্ছটা কমে যেতে শুরু করে। এমনকি ২০১৬ সালের কোপা অ্যামেরিকার পর থেকেই তিনি জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন। কিন্ত তিনি চায়না গিয়ে নিজের ভাগ্য ফিরিয়েছেন বলা চলে। গত মৌসুমে ২৭ ম্যাচে ২০ গোল করে লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি। চলতি মৌসুমেও একই কাজ করে চলছেন তিনি। ১১ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ১০। কিন্ত গত বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা ৩৩ বছর বয়সী লাভেজ্জি নজরকাড়তে সক্ষম হইয়নি হোর্হে সামপাওলির।

এরিক লামেলা

 

টটেনহাম হটস্পারের হয়ে লামেলার উত্থান হটাথই আছড়ে পড়ে কোমড়ে ইনজুরির কারণে। টটেনহামের অন্যতম সদস্য এরিক লামেলা ২০১৬ সালের অক্টবরে কোমড়ে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যায় এক বছরের জন্যে। গতবছরের নভেম্বরে আবার তিনি ডাক্তারদের সবুজ বাতি পান মাঠে নামার জন্যে। দলে ফেরার পর টটেনহাম ৩১ ম্যাচ খেললেও তার মধ্যে লামেলাকে ১১ ম্যাচে সুযোগ দেয়া হয়। আর এর মধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেন প্রতিভাবান এই উইংগার। ১১ ম্যাচে ৪ গোল ও ২ এসিস্ট করেন তিনি এবং তার পাসিং একুরেসি ৮৩ শতাংশ। তার খেলার হাই প্রেসিং স্টাইল এবং দ্রুততাকে কাজে লাগানো যেত যেকোন রক্ষণাত্মক দলের বিপক্ষে। আশা করা যায় ২৬ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারকে সামনের বছরের কোপা আমেরিকায় দেখা যাবে নীল সাদার হয়ে।

দিয়েগো পেরোত্তি

ইনজুরির বদৌলতে মৌসুমের ১৪টা ম্যাচ না খেলতে পারলেও রোমার এই উইংগার এ মৌসুমে সকলের নজর কাড়েন। ২৫ ম্যাচে ১১ গোল ২ এবং ৫ এসিস্ট করেন ২৯ বছর বয়সী পেরোত্তি। কিন্ত তিনি ব্রাত্যই থেকে গেলেন হোর্হে সামপাওলির নজরে। সামপাওলির পছন্দের ফরম্যাশনে পেরোত্তির জন্যে সুযোগ কম। এই কারণে গত বছর মাত্র দুইবার দলে ডাক পান তিনি। কিন্ত লেফট ফ্ল্যাঙকে পেরোত্তির ড্রিবলিং এবং গতি দুইই কাজে লাগাতে পারতো আর্জেন্টিনা। ৩৫ সদস্যের দলে ডাক পেলেও ২৩ সদস্যের দলে অবাঞ্চিতই রয়ে যায় ২৯ বছর বয়সী এই এটাকার। বলাই বাহুল্য নিয়মিত খেলোয়াড়দের বদলি খেলোয়াড় হিসেবে হলেও ২৩ সদস্যের দলে সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল পেরোত্তির।

মাউরো ইকার্দি

আর্জেন্টিনার কোচ সবচেয়ে বড় ভেলকি দেখিয়েছেন ইকার্দিকে দলে না রেখে। গত কয়েক বছরে ইন্টার মিলানের হয়ে তার নজরকাড়া পারফর্মেন্সের পরে আর্জেন্টিনা ভক্তরা ইকার্দিকে এক রকমের অটো চয়েজ হিসেবেই ধরে রেখেছিল। ইকার্দি ২০১৭/১৮ মৌসুম শেষ করে ইতালিয়ান লিগের যুগ্ম সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে। ক্যারিয়ার সেরা ২৯ গোলের রেকর্ড করেন এই মৌসুমে এবং ইন্টার মিলানকে ফিরিয়ে আনেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গণ্ডিতে। শুধু এই মৌসুমই না, গত চার মৌসুম ধরে তিনি ইন্টার মিলানের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় দলে মাত্র চারবার খেলার সুযোগ হয় তার।

ইন্টার অধিনায়কের দল থেকে বাদ পড়ার কারণ হতে পারে আগুয়েরো, হিগুয়েন দের মত বড় নাম। কিন্ত এই মৌসুমে হিগুয়েন তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনাই জুভেন্টাসের হয়ে। অন্যদিকে মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ইনজুরির কারণে দলের বাইরে কাটান আগুয়েরো। একমাত্র ইকার্দিই পুরো মৌসুম খেলেছেন এবং নান্দনিক ফুটবল খেলা সত্ত্বেও দল থেকে ইকার্দির বাদ যাওয়া অবশ্যই হাজারো প্রশ্ন তোলে।

 

চূড়ান্ত স্কোয়াড

গোলকিপার : সার্জিও রোমেরো (ম্যান ইউনাইটেড)*, উইলফ্রেড ক্যাবেয়ারো (চেলসি), ফ্রাঙ্কো আর্মানি (রিভার প্লেট)

ডিফেন্ডার : নিকোলাস ওটামেন্ডি (ম্যানসিটি), মার্কোস রোহো (ম্যান ইউনাইটেড), গ্যাব্রিয়েল মার্সেদো (সেভিয়া), মার্কোস আকুনিয়া (স্পোর্টিং লিসবন) নিকোলাস টাগলিয়াফিকো (আয়াক্স), ক্রিশ্চিয়ান আনসালদি (তুরিনো), ফ্রেডেরিকো ফাজিও (রোমা)

মিডফিল্ডার : হাভিয়ের মাসচেরানো (চায়না ফরচুন) লুকাস বিগলিয়া(এসি মিলান), এদুয়ার্দো সালভিও (বেনফিকা), জিওভানি লো সেলসো (পিএসজি), ম্যানুয়েল লানজিনি (ওয়েস্ট হাম), এভার বানেগা (সেভিয়া), ডি মারিয়া (পিএসজি), ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজা (ইনডিপেন্ডেন্ট), ক্রিশ্চিয়ান পাভন (বোকা জুনিয়র)

ফরোয়ার্ড : লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা), গঞ্জালো হিগুয়াইন (জুভেন্তাস), সার্জিও আগুয়েরো (ম্যানসিটি), পাওলো দিবালা (জুভেন্তাস)

কোচ : হোর্হে সামপাওলি

*সার্জিও রোমেরোর বদলে কাকে নিতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা তা এখনো ঘোষণা হয়নি।