ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বহিস্কার করল চীন

ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বহিস্কার করল চীন

ভারত ‘ভুল শিক্ষা’ প্রদান করেছে এমন অভিযোগে তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে নিষিদ্ধ করেছে চীনের একটি অঞ্চল। সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন আশঙ্কা করছে, এসব ভিক্ষু ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ প্রচার করতে পারেন।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’ অঞ্চলটির প্রশাসনের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেছে। সেখানে প্রশাসন জানিয়েছে, ‘ভারত যে সকল ভিক্ষুদের ভুল শিক্ষা প্রদান করেছে তাদেরকে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশের লিংটা অঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা বৌদ্ধ ধর্মের কোন শিক্ষা প্রদান করতে পারবেন না’।

লিংটা অঞ্চলের একজন ধর্মীয় প্রতিনিধি জানান, ‘প্রতি বছর অত্র এলাকায় দেশপ্রেম বিষয়ক শিক্ষা প্রদান করা হয়। যারা ভারত থেকে তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রি জেক্সি লাহরাম্পা অর্জন করতে পারেন তাদেরকে এই শিক্ষার সুযোগ দেয়া হয়’।

তিনি আরও জানান, ‘যাদের আচরণ দেশপ্রেমের সাথে কোন ভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয় অথবা যাদের মধ্যে ‘কোন ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা’ আছে বলে বিবেচিত হয় তাদেরকে এই শিক্ষার সুযোগ দেয়া হয় না। তাদেরকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয় এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিস্কার করা হয়’।

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই এভাবে বাছাই করা হয়। বর্তমানে বিচ্ছিন্নতাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে লিংটা কতৃপক্ষের জন্য এই বাছাই প্রক্রিয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পরিণত হয়েছে’।

চীনা সরকার তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা এবং তার সহযোগীদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। ১৯৫৯ সালে দেড় লাখেরও বেশি তিব্বতের অধিবাসী দালাই লামার সাথে ভারতে বসবাস করার জন্য চলে যায়। তারা সেখানে ‘তিব্বতিয়ান বুদ্ধিজম’ নামে একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছে।

পত্রিকাটি জানায়, চীনে জেক্সি লাহরাম্পা ডিগ্রি অর্জনের জন্য তাদের নিজস্ব কিছু শর্ত রয়েছে। প্রার্থীদের প্রথমে চীনা বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কিত একটি পরীক্ষা ও ‘সুত্রা বিতর্কে’ উত্তীর্ণ হতে হয়।

চীনের সাবেক জাতি ও ধর্ম বিষয়ক কমিটির প্রধান ঝু ওয়েইকুন পত্রিকাটিকে বলেন, ‘বিদেশে যারা ডিগ্রি প্রদান করে তারা চীন কতৃপক্ষ দ্বারা স্বীকৃতি পায় না এবং তারা এদেশের বৌদ্ধদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য নয়’।

তবে বার্তা সংস্থা জিংহুয়ার তথ্য মতে, ২০০৪ সালে প্রায় ১০৫ জন তিব্বতি সন্যাসী বৌদ্ধ ধর্মের চীনা সংস্করণে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল।

সুযোগ পাওয়া এসব সন্যাসীদের মধ্যে অনেকেই দালাই লামার ১৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিল। যেহেতু এখন চীনা সরকার দালাই লামাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে বিবেচনা করছে তাই দালাই লামার ছাত্রদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত করা জরুরি। যাতে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদ তৈরি করার জন্য স্থানীয় বৌদ্ধদের ব্যবহার না করতে পারে।

তবে লিংটার উক্ত ধর্মীয় প্রতিনিধি নিশ্চিত করে বলেননি যে, এ বছর ভারতে ‘ভুল শিক্ষা’ গ্রহণ করা কতজন সন্যাসীকে লিংটা থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।