মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ফিলিস্তিনের রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুরো রমজান মাসজুড়ে এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। সম্প্রতি দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কতৃক অন্তত ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মিশরের প্রেসিডেন্ট এই ঘোষণা দিলেন। বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসবাসরত নাগরিকদের দুঃখকষ্ট দূর করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে’।
রাফাহ ক্রসিং হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকার একমাত্র প্রবেশদ্বার, যেটি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা হুমকির অজুহাতে মিশর সরকার এই ক্রসিংটি সীলমোহর করে রেখেছে।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে মাত্র ৩ সপ্তাহের জন্য এটি খুলে দেয়া হয়েছিল। সাধারণত ফিলিস্তিনিরা বছরের অল্পকিছু দিনের জন্য এই ক্রসিং অতিক্রম করতে পারে।
সিনাই উপত্যাকায় সহিংসতার কারণে রাফাহ ক্রসিংয়ে মিশরের কতৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণের পক্ষে আরও অনেক অজুহাত পেশ করে।
সিসির এই ঘোষণা এমন সময়ে দিলেন, যখন ইসরায়েলিদের গুলিতে কমপক্ষে ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রায় তিন হাজারের মতো আহত ফিলিস্তিনির চিকিৎসার জন্য এই সিদ্ধান্তকে আশির্বাদ স্বরুপ বলা হচ্ছে। এমনকি মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে নিহত মুক্তিকামীদের ‘শহীদ’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।
৩০ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১৪ জন মুক্তিকামী নাগরিক গাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা প্রধান প্রিন্স জায়েদ বিন রা’দ গত শুক্রবারে বলেছেন, গাজা সীমান্তের প্রতিবাদকারীদের সাথে ইসরায়েলের এই আচরণ নিন্দনীয় এবং “পুরোপুরি অনাকাঙ্ক্ষিত”।
মিশর ইসরায়েল ও গাজার ক্ষমতাসীন দল হামাস উভয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে চায়। কায়রো দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চায় এবং এলাকাটিতে বসবাসরত প্রায় দুই মিলিয়ন বাসিন্দাদের উপর চাপ কমাতে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে চায়।
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া গত রবিবারে এক সংক্ষিপ্ত সফরে মিশরে যান। সেখানে তিনি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক আব্বাস কামেলের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
কঠোর বার্তা
কতৃপক্ষ জানিয়েছে, রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং রমজানের শেষ পর্যন্ত খোলা থাকবে। এসময়ে অসুস্থ, বৃদ্ধ, বিদেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং যাদের পরিবারের সদস্য মিশরে বসবাসরত রয়েছে তারা এই ক্রসিং অতিক্রম করতে পারবেন।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল গাজায় অমানবিক এই অবরোধ জারি রেখেছে। তাদের যুক্তি, যে কোন মূল্যে হামাসকে দমন করা জরুরি। হামাস তাদের বিরুদ্ধে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩বার যুদ্ধ পরিচালনা করে এসেছে।
কিন্তু সমালোচনাকারীদের মতে, ফিলিস্তিনের অধীবাসীদের উপরে এই সহিংসতা অন্যায়। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, সেখানকার ৪৭ ভাগ অধিবাসী মারাত্মক খাদ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।