কথায় আছে, ‘রোগীর চেয়ে ডাক্তার বেশি’। আমাদের দেশে কোনো ধরনের শারীরিক অসুবিধা বা সাধারণ শরীরবৃত্তীয় সমস্যা দেখা দিলে আমরা কোন না কোন জটিল রোগ বা ‘দূরারোগ্য’ ব্যাধির লক্ষণ মনে করে ফেলি। কেউ কেউ আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসাও গ্রহণ করি। এর ফলে আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। ভুল ঔষধ সেবনে আমাদের শরীরে নানা ক্ষতি সাধিত হয়। এই লেখায় তেমনি ১৫টি রোগের লক্ষণ নিয়ে ভুল ধারণা ও রোগের সঠিক লক্ষণ জবানের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল–
১. ভুল: কোমর ব্যথা মানে কিডনি রোগ!
সঠিক: কিডনি রোগে প্রসাব কমে যায়, খাওয়ার রুচি কমে যায়, বমি বমি লাগে, মুখ ফুলে যায়!
২. ভুল : ঘন ঘন প্রসাব মানেই ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ!
সঠিক : ডায়াবেটিস হলে প্রথম অনুভূতি হল– এতো খেলাম, তবুও কেন শক্তি পাই না, এছাড়া ওজন কমে যায়, মুখে দুর্গন্ধ হয়, ঘা শুকাতে চায় না!
৩. ভুল : ঘাড়ে ব্যথা মানেই প্রেসার!
সঠিক : প্রেসার বাড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ পাওয়া যায় না! একটু অস্বস্তিকর অনুভুতি হয় মাত্র।
৪. ভুল : বুকের বামে ব্যথা মানে হার্টের রোগ!
সঠিক : হার্টের রোগে সাধারণত বুকে ব্যথা হয় না। হলেও বামে নয়তো বুকের মাঝখানে ব্যথা হয়… হার্টের সমস্যায় সাধারণত বুকের মাঝখানে চাপ অনুভূত হয়, মনে হয় বুকের মাঝখানটা যেন কেউ শক্ত করে ধরে আছে।
৫. ভুল : মিষ্টি খেলেই ডায়াবেটিস হয়।
সঠিক : ডায়াবেটিস হরমোনাল অসুখ। অগ্ন্যাশয় ঠিকমত কাজ না করলে ডায়াবেটিস হয়। তাই মিষ্টি খাওয়ার সাথে এই রোগ হবার সম্পর্ক নেই। কিন্তু ডায়াবেটিস হয়ে গেলে মিষ্টি খেতে হয় না।
৬. ভুল: প্রেগন্যান্সিতে বেশি পানি খেলে পায়ে পানি আসে।
সঠিক : প্রেগন্যান্সিতে প্রোটিন কম খেয়ে, কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে পায়ে পানি আসে। তাই প্রোটিন বেশি বেশি খেতে হয়।
৭. ভুল: এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং করাকালীন বাচ্চার (৬মাসের আগে পানিও খাওয়ানো যায় না এ কারণে) ডায়রিয়া হলে, মা স্যালাইন খেলেই বাচ্চারও চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
সঠিক : মা খেলেই বাচ্চার চাহিদা পূরণ হয় না… বাচ্চাকেও স্যালাইন খাওয়াতে হয়।
৮. ভুল : দাঁত তুললে চোখের আর ব্রেইনের ক্ষতি হয়।
সঠিক : দাঁত তোলার সাথে চোখের আর ব্রেইনের কোনো সম্পর্ক নেই। দাঁত, চোখ, মাথার নার্ভ সাপ্লাই সম্পূর্ণ আলাদা।
৯. ভুল : মাস্টারবেশন করলে চোখের জ্যোতি কমে যায়!
সঠিক : ভিটামিন এ জাতীয় খাবার না খেলে চোখের জ্যোতি কমে যায়।
১০. ভুল : টক/ডিম/দুধ খেলে ঘা দেরিতে শুকায়।
সঠিক : টক, ডিমের সাদা অংশ বা দুধ খেলে ঘা তাড়াতাড়ি শুকায়।
১১. ভুল : অস্বাভাবিক আচরণ, ভাংচুর, পাগলামি মানেই জ্বিন ভুতে ধরা!
সঠিক : এটা বাইপোলার ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, হ্যালুসিনেশন।
১২. ভুল : তালু কাটা, এক চোখ, কপালে চোখ, বাঘের মত ডোরাকাটা দাগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করা বাচ্চা কিয়ামতের আলামত, আল্লাহর গজব, বাঘের বাচ্চা।
সঠিক : মানুষের পেট থেকে বাঘের বাচ্চা হয় না আর কিয়ামতের আলামত বা গজব বাচ্চাদের উপর আসে না। এসব জিনগত রোগ বা জন্মগত রোগ।
১৩. ভুল : প্রেগন্যান্ট মহিলা আয়রন, ক্যালসিয়াম সম্পন্ন খাবার খেলে বাচ্চা বড় হয়ে যায়। তাই গাইনী ডাক্তার সিজার করার জন্য এধরনের খাবার খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন…
সঠিক : প্রেগন্যান্ট মহিলা আয়রন, ক্যালসিয়াম না খেলে গর্ভস্থ বেবির নিউরাল টিউব ডিফেক্ট হয়।
১৪. ভুল : প্রেগন্যান্সিতে সাদাস্রাব হলে ফ্লুইড কমে যায়।
সঠিক : White discharge এবং Amniotic fluid সম্পূর্ণ আলাদা দুটো ফ্লুইড.. একটার সাথে আর একটার কোনো সম্পর্ক নেই।
১৫. ভুল : বাচ্চা না হওয়া মানেই বন্ধ্যা নারী।
সঠিক : বন্ধ্যা নারী এবং পুরুষ উভয়ই হতে পারে।
এ ধরনের আরো অনেক গুজব বা কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত, যেগুলোর কোনো ভিত্তি বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এইসব বিষয় নিয়ে গুজবে কান না দিয়ে প্রকৃত তথ্য ও সঠিক পদ্ধতি জেনে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।