বিশ্বকাপের একবিংশতম আসর বসছে সুদূর রাশিয়ায়। বাংলাদেশে কি এর উত্তেজনা কম? মোটেই না! নিজেরা বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও সাপোর্ট দিতে বাঁধা কিসের। ব্রাজিল আর্জেন্টিনার চিরায়ত তর্কে হালফিলে ভাগ বসিয়েছে পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেন। আমরা এশিয়ার মানুষ। বিশ্বকাপে এশিয়ার দলও খেলে। সাফল্য কিংবা সম্ভাবনায় তারা পিছিয়ে থাকায় আলোচনা হয় না তেমন। বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের আসরে অংশ নেওয়া ৩২ দল আসছে ভিন্ন পাঁচটি অঞ্চল থেকে। সেসব অঞ্চল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে আজ থাকছে আমাদের মহাদেশ এশিয়ার দলগুলো।
অস্ট্রেলিয়া
ডাকনাম : সকারু
হেডকোচ : বার্ট ফন মারউইক (হল্যান্ড)
অধিনায়ক : মাইল জিদনিক
ফিফা র্যাংকিং : ৪০
বিশ্বকাপে মোট অংশগ্রহণ : চারবার
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্য : দ্বিতীয় রাউন্ড
সি গ্রপে ফ্রান্স, পেরু আর ডেনমার্কের সঙ্গে ৩১তম দল হিসেবে রাশিয়ার টিকিট কেটেছে অস্ট্রেলিয়া। প্লে অফ খেলে বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সকারুদের বিশ্বআসরে প্রথম পদার্পণ ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে। সেবার দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়েছিল টিম কাহিলের দেশ। এরপর ২০১০ ও ২০১৪তে থাকলেও যাত্রা থেমেছে গ্রুপ পর্বেই। এবারো যে তাদের নিয়ে খুব বেশি আশা করা যায় তা নয়। কেননা, ফন মারউইকের দলকে খেলতে হবে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্স, লাতিন পরাশক্তি পেরুর সঙ্গে। র্যাংকিংয়ে দ্বাদশ অবস্থানে থাকা ডেনমার্কও চোখ রাঙাচ্ছে ইয়েলো বয়েজদের।
ইরান
ডাকনাম : টিম মিল্লি
হেডকোচ : কার্লোস কুইরোজ (পর্তুগাল)
অধিনায়ক : মাসউদ মোজায়ি
ফিফা র্যাংকিং : ৩৬
বিশ্বকাপে মোট অংশগ্রহণ : ৫
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্য : গ্রুপ স্টেজ
ইরানের বিশ্বকাপ অধ্যায়টা বেশ রোমাঞ্চকর। ১৯৭৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপে খেলে তারা। তারপর যুদ্ধবিরতি। ফেরে ১৯৯৮ তে। তারপর আবার দীর্ঘ বিরতি। ২০১০ বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব পেরোতে ব্যর্থ তারা। ২০১১ সালে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ কার্লোস কুইরোজের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয় ইরান ফুটবল। কুইরোজ রিয়াল ছাড়াও কোচিং করিয়েছেন পর্তুগালের যুবদলের, অভিজ্ঞতা আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে কোচিং করানোর। ২০১৪ বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ‘১৮ পর্যন্ত করা হয়। এশিয়া থেকে এবার সবার আগে বিশ্বকাপের একবিংশতম আসরে খেলা নিশ্চিত করে ইরানিয়ানরা। তবু, তারা স্বপ্ন দেখতে পারছে না! একই গ্রুপে যদি পর্তুগাল স্পেনের মতো দুই হেভিওয়েট থাকে তখন অংশগ্রহণেই সন্তুষ্টির জাবর কাটতে হয়। বি গ্রুপে ইরানের আরেক প্রতিপক্ষের নাম মরক্কো।
জাপান
ডাকনাম : ব্লু সামুরাই
হেডকোচ : আকিরা নিশিনো (জাপান)
অধিনায়ক : মাকোতো হাসিবে
ফিফা র্যাংকিং : ৬০
বিশ্বকাপে মোট অংশগ্রহণ : ৫
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্য : দ্বিতীয় রাউন্ড
১৯৯৮-২০১৪, বিশ্বকাপের প্রত্যেকটি আসরে চেনা দল জাপান। এর মাঝে ২০০২ এবং ২০১০ বিশ্বকাপে রাউন্ড অব সিক্সটিন পর্যন্ত যায় ২০০২ আসরের সহ-আয়োজক দেশ। জাপান বরাবরই সমীহ জাগানিয়া দল। বাছাই পর্বে গ্রুপসেরা হয়ে রাশিয়ায় আসা জাপানিরা অন্যরকম এক রেকর্ডও করেছে। এবার নিয়ে ষষ্ঠবার দ্য গ্রেটেস্ট শো তে জাপানের বিশ্বকাপ রান চলছে টানা ষষ্ঠবার। প্রথম অংশগ্রহণের পর একমাত্রর ব্রাজিলই খেলে আসছে একটানা। জায়ান্ট কিলার জাপানের সঙ্গে এইচ গ্রুপে আছে পোল্যান্ড, সেনেগাল ও কলম্বিয়া। ব্লু সামুরাইদের তাই যেমন ফেলে দেয়া যায় না একেবারে বাতিলের খাতায়, তেমনি আবার কাট্টা বাজিও ধরা যাবে না। অবশ্য পাশার দান এর আগেও উল্টে দিয়েছিল সূর্যোদয়ের দেশ জাপান।
দক্ষিণ কোরিয়া
ডাকনাম : এশিয়ান টাইগারস
হেডকোচ : শিন তায়ি-ইয়ং (কোরিয়া)
অধিনায়ক : কি সুং ইউয়েং
ফিফা র্যাংকিং : ৬১
বিশ্বকাপে মোট অংশগ্রহণ : ৯
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্য : চতুর্থ
২০০২ বিশ্বকাপের চমক দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার বড় নাম। তাদের অনেক ফুটবলারই ইউরোপে খেলেন যা দলটির বড় শক্তি। দ্বিতীয় এশিয়ান দল হিসেবে ১৯৫৪ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে কোরিয়া। তারপর ১৯৯০ থেকে সবকটা আসরে টানা খেলে আসছে তারা। ২০০২ বিশ্বকাপে জাপানের সঙ্গে যৌথ আয়োজক দেশ ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এর আগে কখনোই বিশ্বআসরে জয় না পাওয়া এশিয়ান টাইগার্স পোল্যান্ডকে হারিয়ে চমকে দেয় বিশ্বকে। গাস হিডিংয়ের কোচিংয়ে যেন ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় সব। অবশেষে সেমিতে জার্মানির কাছে মাত্র ০-১ গোলে হারলে থামে অবিশ্বাস্য যাত্রা। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তুরস্কের কাছে ৩-২ গোলের পরাজয়ে চতুর্থ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে কোন এশিয়ান টিমের এটিই সেরা সাফল্য। মহাযজ্ঞের গ্রুপ পর্বে এফ গ্রুপে দক্ষিণ কেরিয়ার প্রতিপক্ষ জার্মানি, মেক্সিকো, সুইডেন।
সৌদি আরব
ডাকনাম : আল সোগুর আল আখদার
হেডকোচ : হুয়ান অ্যান্তোনিও পিজ্জি (আর্জেন্টিনা)
অধিনায়ক : ওসামা হওসায়ি
ফিফা র্যাংকিং : ৬৭
বিশ্বকাপে মোট অংশগ্রহণ : ৪
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্য : দ্বিতীয় রাউন্ড
এবার নিয়ে পাঁচ বার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেল সৌদি আরব। ১৯৯৪ থেকে শুরু করে ২০০৬ পর্যন্ত টানা চার বিশ্বকাপে খেললেও তার পরবর্তী দুই বিশ্বকাপ দেখতে হয়েছে দর্শক হয়েই। ১২ বছর পর আবার রাশিয়া বিশ্বকাপে সুযোগ পেল ‘দ্য ফ্যালকন’রা। ১৯৯৪ সালে সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথম অভিষেক হয় সৌদি আরবের এবং প্রথমবারই বাজিমাত করে দেশটি। গ্রুপ পর্বে নেদারল্যান্ডস ও মরক্কোকে হারিয়ে নকআউট পর্বে চলে যায় আরব দেশটি। ১৬ দলের লড়াইয়ে সুইডেনের কাছে ৩-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়। এরপর ১৯৯৮, ২০০২ এবং ২০০৬ তিন বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্ব থেকেই ফিরে আসতে হয় সৌদি আরবকে। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় তারা। অবশেষে জাপানকে ১-০ হারিয়ে ১২ বছর পর বিশ্বকাপের টিকিট কাটল সৌদি আরব। রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে স্বস্তিতে দেশটির ফুটবলপ্রেমীরা। সবাই মনেপ্রাণে চাচ্ছে এবার অন্তত ভালো কিছু করবে সৌদি। ‘এ’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক রাশিয়া, সালাহর মিশর আর সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। উদ্বোধনী দিনেই মাঠে নামা আরবদের ‘মিশন ১৮’ কেমন যায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।