যুক্তরাষ্ট্রের যে রাজ্যে ইসরায়েলের সমালোচনা নিষিদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের যে রাজ্যে ইসরায়েলের সমালোচনা নিষিদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনা অঞ্চলের ‘বাক-স্বাধীনতা’ সমর্থনকারী ব্যক্তিরা দেশটির ‘এন্টি-সেমিটিক ল’ এর একটি অনুচ্ছেদের তীব্র বিরোধিতা করছেন; যে আইনে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ড ও পলিসির সমালোচনা সম্পূর্ণ অবৈধ।

নতুন এই বিলটিতে ইসরায়েলের সব ধরণের সমালোচনাকে ‘এন্টি-সেমিটিক’ এবং অবৈধ বলে মনে করা হচ্ছে।

সাংবিধানিক প্রশ্নের মুখে গত দুই বছরে এই বিলটি স্বতন্ত্ররূপে পাস করাতে ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্টরা। এই বিলের পক্ষের সমর্থকরা বিলটি পাস করানোর ‘রাইডার’ নামক একটি আইনি কৌশল অবলম্বন করছে যা রাজ্যটির ২০১৮-১৯ বাজেটে সন্নিবেশ করা হয়েছে। ইসরায়েলের সমর্থকরা এই বিতর্কিত বিলকে একটি বিজয় হিসেবে দেখছে। এবং তারা বলছেন, ইসরায়েলের সমালোচনা সহজাতভাবেই এন্টি-সেমিটিক এবং তা কলেজ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা উচিত।

বিরোধিরা বলছে, এই বিলটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এন্টি-সেমিটিজমের আসল সমস্যা নিয়ে কিছুই করার নেই। তারা বলছেন, আইনটি একাডেমিক বৃত্তে ভয় সৃষ্টি করবে এবং ছাত্র ও অধ্যাপকদের মধ্যে সেল্ফ-সেন্সরশিপ তৈরি করবে যা তাদের রাজনৈতিক আলোচনায় ইসরায়েলকে অন্তর্ভূক্ত করতে বাঁধা দেবে।

দক্ষিণ ক্যারোলিনার ডেমোক্রেটিক সিনেটর ব্রাড হুটো নতুন এই আইনের প্রভাব উপেক্ষা করে বলেন, এটি দক্ষিণ ক্যারোলিনার স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাক-স্বাধীনতা পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন এবং বলেন, ‘বাক-স্বাধীনতা জীবিত আছে এবং দক্ষিণ ক্যারোলিনায় ভালোভাবেই আছে’।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলিনা’র গণিতের অধ্যাপক জশুয়া কুপার বলেন, কেবল বাক-স্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করে বা একাডেমিক বিতর্ক তৈরি করে বলে আমি এই আইনটির বিরোধিতা করি না বরং এটি ইহুদি ধর্মের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বাক-স্বাধীনতার তীব্র বিতর্ক প্রয়োজন হলে আইনটি শীতল হতে বাধ্য’।

ইহুদিদের ইসরায়েলের মাধ্যমে চিহ্নিতকরণ

ব্যারি ট্রাচেনবার্গ, জ্যাক ফরেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইহুদি স্টাডিজ’ বিভাগের পরিচালক এবং এন্টি-সেমিটিজমের একটি কোর্স পড়ান; তিনি বলেন, ‘সত্যিকার এন্টি-সেমিটিজম ঘৃণা ও ইসরায়েলের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বৈধ সমালোচনা’র মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য থাকা উচিত’।

‘জিউস ভয়েস ফর পিস’-এর অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের সদস্য কুপার বলেন যে, একজন ইহুদি হিসেবে তিনি ইসরায়েলের সাথে স্বীকৃত হতে চান না যখন তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং ফিলিস্তিন অঞ্চল দখল করে চলেছে। কুপার বলেন, ‘এই বিলটি ইহুদিদের ইসরায়েলের সাথে চিহ্নিত করছে। একজন ইহুদি হিসেবে আমি কখনোই ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথী হতে চাই না’।

এন্টিসেমিটিজমের পুনর্বহাল

ট্রাচেনবার্গ যুক্তি দেন, ‘এই আইনটি আসলে ইহুদিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী ঘৃণাকে শক্তিশালী করবে তা হ্রাস করবে না’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই আইন এন্টি-সেমিটিজমকে মোকাবেলার পরিবর্তে আরও বাড়িয়ে তুলবে, কারণ এটি এই ধারণা জোরদার করে যে, ইহুদিরা একটি ব্যতিক্রমী জাতি যারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনীয় আইনগুলি পালন করে’।

ট্রাচেনবার্গ বলেন, ‘বক্তব্য এই যে, বর্ণবাদ, জাতিগত অনুপ্রেরণাপ্রাপ্ত বৈষম্য আমেরিকায় বৈধ, কিন্তু স্বাধীনতা, সমতা ও মানবাধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে এর বিরোধিতা করতে হবে। বক্তব্য হতে হবে, ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা নীতি, পলিসি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা বৈধ’।

সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টুডেন্ট ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ (এসজেপি) এর সভাপতি দানা আল হাসান বলেন, আমরা ইহুদি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ঘৃণাত্মক বক্তব্য ও এন্টি-সেমিটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করি।

দানা আল হাসান জানান, ‘বলার অপেক্ষা রাখে না, এসজেপিতে আমরা এন্টি-সেমিটিজমকে নিন্দা করি এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ মনে করি। আমরা এবং ইহুদিরা হাতে হাত রেখে এ কাজ করি’।

বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতকের শিক্ষার্থী আরিয়া নবীনবখ্ত, ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে বলেন, ‘এই আইনটি আমাদের শুধু মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি পলিসি ও আচরণ নিয়ে আলোচনা করতে বাঁধা দেয় যা মোটেই স্বাস্থ্যকর বা গঠণমূলক নয়’।

নবীনবখ্ত আমেরিকা ও আফ্রিকার ছাত্রদের মধ্যে বৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে কিছু না করায় সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন। তিনি ‘পক্ষপাতহীন’ভাবে এই আইন সমর্থনের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়টির সমালোচনা করেন।

সূত্র: ইউর নিউজ ওয়্যার ডটকম