চীনের ‘অনুশাসন ক্যাম্প’ এর নামে নানা ভয়াবহতার কথা প্রকাশ করেছে সেখানকার সাবেক কয়েদীরা। সেখানে চলমান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের উপর চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের জন্য করা এই ‘রি-এডুকেশন’ ক্যাম্পগুলোতে শারাীরিক মানসিক দু’ধরণের নির্যাতনের শিকারই হতে হয় কয়েদীদের।
ওমির বেকালি ও কেরাত সমরকান্দ নামক দু’জন সাবেক কয়েদি ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান যে, শাস্তি হিসেবে বন্দিদের শূকরের মাংস ও মদ পান করানো হতো যা কিনা ইসলামি অনুশাসনে নিষিদ্ধ। এছাড়াও ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন ওমির বেকালি ও অন্যান্য বন্দিদের বাধ্য করা হতো ইসলামি বিশ্বাসকে অস্বীকার করতে, নিজেদের এবং নিজেদের পছন্দের সমালোচনা করতে এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে অকারণেই ধন্যবাদ জানাতে।
কাজাখিস্তানের অধিবাসী বেকালি যখন এই সকল আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শাস্তিস্বরুপ পাঁচ ঘন্টা দেয়ালের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো, এক সপ্তাহ পর নির্জন কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো যেখানে ২৪ ঘন্টা অনাহারে রাখা হতো এবং ২০ দিনের মাথায় উচ্চ-নিরাপত্তাবেষ্টিত ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়। অত্যাচারের সীমা সহ্য করতে না পেরে বেকালি সেখানে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে।
এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, “ক্যাম্পে মানসিক চাপ ছিলো প্রচণ্ড, যখন আপনার নিজেকে গালাগাল করতে হয়, নিজের গোষ্ঠীর এবং তার চিন্তার নিন্দা করতে হয়”
গত জানুয়ারি থেকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলে হাজার হাজার মুসলিমকে ক্যাম্পে গণ-অন্তরায়ণ বা বন্দি করে চীন প্রশাসন। যাদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও রয়েছে। বন্দির সময় কাউকেই তাদের অপরাধ সম্পর্কে জানানো হয়না বলে জানিয়েছে স্থানীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটিকে বিশ্বের বৃহৎ ‘সংখ্যালঘু কারাবাস’ বলেও উল্লেখ করেছে ইউএস কমিশন।
অবশ্য এই বিষয়ে চীনা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্যাম্প বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে তারা উল্লেখ করেছেন যে, বিচ্ছিন্নতা ও ‘ইসলামি চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাদের মতাদর্শগতভাবে পরিবর্তন দরকার। এভাবেই তারা এই ‘রি-এডুকেশন’ ক্যাম্পের গুরুত্ব উল্লেখ করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও এ অঞ্চলে বসবাসকারী স্বাধীনতাকামী উইঘুর সম্প্রদায়ের উপরও চীনা সরকারের নির্যাতনের দৃশ্য সামনে বারবার এসেছে। ৬০ বছর আগে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষমতা হারিয়েছে।
কিন্তু সমগ্র চীন বা পাশের দেশগুলো থেকে মুসলমানদের বন্দি করে ‘রি-এডুকেশন’ এর নামে সাংস্কৃতিক বিনাশের পথ বেছে নিয়েছে চীন। এ সম্পর্কে চীনের ইতিহাসবিদ জেমস মিলওয়ার্ড বলেন, “সাংস্কৃতিক বিনাশকেই বেইজিং ‘জিনজিয়ান সমস্যা’র চুড়ান্ত সমাধান হিসেবে খুঁজে পেয়েছে”। নিউ অর্লিন্সের লোওলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, “চীনের এই রি-এডুকেশন সিস্টেম পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবাধিকার লঙ্ঘন এর নজির।
উল্লেখ্য, চীনের পশ্চিমাঞ্চলে জিনজিয়ানের মতো ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ বন্দি রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।