যতই বলা হোক বন্ধু রাষ্ট্র, অর্থনৈতিক সহায়তা ও বাণিজ্যে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের অর্জন লজ্জাজনক। অন্য সূচক বাদ দিলেও শুধু বাণিজ্য ঘাটতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের মধ্যে প্রতিবেশী ভারতের সাথে বাংলাদেশের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৭ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য ভারতে রফতানি করে। পক্ষান্তরে ৬১৬ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে ভারত থেকে। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের সাম্প্রতকি হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এই বছরের এটা আরও বাড়বে তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ৯০ দশমিক ১৬ শতাংশ ভারত এবং ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাংলাদেশ রফতানি করে। এই অনুপাত এতই অসম যে তা নিয়ে বিশ্লেষক মহলে গভীর উদ্বেগ দেখা দিলেও এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
এই ঘাটতি কমি আনার কোন প্রক্রিয়া না থাকলেও নেতা ও সরকারি মন্ত্রীদের দাবি, ভারতের সাথে সম্পর্ক দিন দিন উন্নত হচ্ছে আর বাংলাদেশ যেন ক্রমেই লাভবান হচ্ছে এমনটাই প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র নিয়ে কোন মহলে মাথাব্যাথা নেই। দিন দিন এই অসম বাণিজ্য ঘাটতি প্রকট হচ্ছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ৮৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯১ দশমিক ৭০ শতাংশ পণ্য রফতানি করে ভারত আর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে ৫ হাজার ৮১১ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। পক্ষান্তরে ৫২৭ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। রফতানির এই করুণ চিত্র নিয়ে তেমন কোন আলোচনা ও এই চিত্র পরির্বতনের জন্য দ্রুত কোন পরিকল্পনা না নিলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ভারতের পণ্য উপনিবেশে পরিণত হবে বলে আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
দেখা যাচ্ছে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ২৮৪ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে কোটির হিসাবে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ৫৮২ কোটি ডলার আর ভারতে বাংলাদেশে রফতানির পরিমাণ মাত্র ৫৩ কোটি ডলার।
অথচ এক যুগ আগে অর্থাৎ ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ঘাটতি ছিল ১৬০ কোটি ডলার। এই পরিসংখ্যানের আলোকে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির জন্য বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী। রাজনৈতিক ভাবে অভ্যন্তরীন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান ও দেশে গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিতা মূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে এই ধরনের বৈষম্য কমিয়ে আনার সম্ভাবনা নেই– বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারের দুই বছর এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ৯ বছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় চার গুণের বেশি।