খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোট নয় ছিল ‘সিলের উৎসব’। শিশুকে দিয়ে সিল মারা, দলীয় ক্যাডারদের কেন্দ্র দখলসহ সব রকম অনিয়মের পরে ভোট গণনায় জয়ী নৌকা। যথারীতি বিএনপির পরাজয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ১,৭৬,৯০২ ভোট পেয়ে পরাজিত করেছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে। যিনি পেয়েছেন ১,০৮,৯৫৬ ভোট। নির্বাচনের এই ফলাফল সম্পর্কে জনগণ নির্বাচন চলাকালেই ধারণা করতে পেরেছিলেন। কেননা, নির্বাচনের পুরোটা জুড়েই ছিল ক্ষমতাসীন দলের দাপট। নির্বাচনে জয়ী হতে এজেন্টদের মারধর থেকে শুরু করে প্রিজাইডিং অফিসারদের জিম্মি করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। হামলা হয়েছে পুলিশেরে ওপরও।
সিটি নির্বাচন স্থগিতের আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে, আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয় খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আর কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট, ব্যলটে জোরপূর্বক সিল মারা এবং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়ার মধ্য দিয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়।
সকাল ৯টার দিকে ভোট দিতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন বিনএপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। মিডিয়ার সামেন তিনি নিজে জাল ভোট দেয়ার চিত্র তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক অভিযোগ অস্বীকার করলেও সারেজমিনে অনেক কেন্দ্রেই বিএনপির কোন এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নির্বাচন চলাকালে নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডের ইকবাল নগর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের অস্ত্রের মুখে বন্দি করে জাল ভোট দিয়ে যাওয়ার কথা জানা যায়। পরে দুপুরে কেন্দ্র পরিদর্শন করে রিটার্নিং অফিসার কেন্দ্রটির ভোট বাতিল করে। একই ভাবে সিল মারার উৎসবের শিকার হয় ৩১ নম্বার ওয়ার্ডের ২৭৮ নাম্বার কেন্দ্র। স্থগিত হয় কেন্দ্রটির ভোটগ্রহণ।
এছাড়া ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে ২৪নং ও ২২ নং ওয়ার্ডের। ৯ নংওয়ার্ডে পুলিশের উপর হামলা করে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা। অনেক কেন্দ্রের বিএনপি ক্যাম্পে ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ৪০ কেন্দ্রে কেন্দ্র দখল ও ধানের শীষ সমর্থকদের বের করে দেয়ার অভিযোগ জানায়। এর প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ হচ্ছে।
মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে হাতে নাতে জালভোট ধরিয়ে দেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তারপরও ইসি সচিব বলেন, ‘চমৎকার নির্বাচন’ হয়েছে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও সে সুরে সুর মেলান। তিনি বলেন, ‘জনগণ স্বতস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়েছে?’। অথচ অনেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখে তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এবার প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক, ‘নির্বাচন কি আদৌ সুষ্ঠু হয়েছে?’
উল্লেখ্য, খুলনা সিটিতে ৪১টি ওয়ার্ড রয়েছে; যার ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। পাঁচ জন মেয়র ছাড়াও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জনপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।