আর্সেনালে শেষ ওয়েঙ্গার অধ্যায়

আর্সেনালে শেষ ওয়েঙ্গার অধ্যায়

ওরা ভুল ব্যানার নিয়ে উড়েছে!

শেষ বেলায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন রসিকতাই করলেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। যে ব্যানারটির কথা তিনি বলেছেন, সেটিতে লেখা ছিল ‘মার্সি আর্সেন’; ম্যাচের বাইশ মিনিটের মাথায় যেটি বহন করেছিল দুটি বিমান। আর তার ইঙ্গিতটি ছিল স্পষ্টতই ‘ওয়েঙ্গার আউট’ এর দিকে।

‘ওয়েঙ্গার আউট’; এ দুটো শব্দে লেখা ব্যানার, প্লেকার্ড শুধু ফুটবল মাঠেই না, কখনো আন্দোলনে, কখনো ক্রিকেট মাঠে কখনো বা বিচিত্র সব জায়গায় দেখা গিয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে সে অর্থে কথা না বললেও সম্পুর্ণ রুপেই যে ওয়াকবিহাল ছিলেন তা স্পষ্টই বোঝা গিয়েছে ওয়েঙ্গারের কথায়।

‘দ্য ইনভিন্সিবল’র অবিশ্বাস্য কীর্তির পর গানার্স সমর্থকরা যখন আরো বড় কিছুর স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, তার কিছু দিন পর থেকেই কেমন যেন উল্টো পথে হাটা শুরু করল দল। সেটি এতটাই যে, নতুন প্রজন্ম এখনো আর্সেনালকে কোনো লিগ বা মেজর টাইটেল জিততে দেখেনি। যার ফলে হতাশা ধীরে ধীরে বদলে যায় ক্ষোভে। আর দলের পরিচালনা ভার যেহেতু ওয়েঙ্গারের হাতে ছিল, তাই পুরো ক্ষোভটাই গিয়ে পড়ে তার ওপর। সেখান থেকেই জন্ম ‘ওয়েঙ্গার আউট’র। এটি আসলে কতটা ঠিক বা ওয়েঙ্গারের এমন কিছুর প্রাপ্য কি না, সেটি নিয়ে দ্বিমুখী মত রয়েছে।

নব প্রজন্ম আবেগের চেয়ে ফল সর্বস্বতায় বিশ্বাসী। তাদের একটি বড় অংশের প্রশ্ন ছিল ওয়েঙ্গারের ট্রান্সফার পলিসি নিয়ে। কিন্তু ওয়েঙ্গার কেন কখনো ট্রান্সফার মার্কেটে হাত খুলে খরচ করতে পারেননি সেটি অনেকেই তলিয়ে দেখেননি। আর্সেনাল যখন হাইবুরি থেকে এমিরেটসে আসার কাজে হাত দিল, তখন বোর্ডকে পড়তে হয়েছে বিশাল এক দেনার ওপর। সে অবস্থায় ট্রান্সফার মার্কেটে যথেচ্ছা খরচের সুযোগ ছিল না। একই সাথে ‘দ্য ইনভিন্সবল’ প্রজন্মও ছিল ক্যারিয়ারের শেষের দিকে। দুটো মিলিয়েই আর্সেনালে দেখা দেয় একটি শূন্যতার।

এদের ব্যাকআপ হিসাবে একাডেমির যে সকল খেলোয়াড়কে ওয়েঙ্গার প্রস্তুত করেছিলেন, আর যাদের স্বল্প মূল্যে কিনে এনে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলেন, ফল দেয়ার সময় তাদের বেশিভাগই ওয়েঙ্গারকে পিঠ দেখিয়ে ক্লাব ছেড়েছিলেন। যেমন, সামির নাসরি, সেস্ক ফ্যাব্রিগাস কিংবা রবিন ভ্যান পার্সি। এমন ত্রিমুখী সংকট ওয়েঙ্গারের জন্য কাজ করে তুলেছিল দুঃসাধ্য।

এ বিষয়ে সবচেয়ে চমৎকার প্রশ্ন করেছিলেন গালাস। তিনি বলেছিলেন, এমিরেটসের জন্য ওয়েঙ্গোর যে স্যাক্রিফাইসটা করেছেন সেটির জন্য তিনি অনুতপ্ত কি না? কারণ, সে সময় এ লড়াই চালিয়ে না গিয়ে অন্য ক্লাবে যোগ দিলে আর্সেনের নামের শেষে নিশ্চিত ভাবেই কিছু ট্রফি যোগ হত। আর্সেনও উত্তরটি দিয়েছিলেন চমৎকারভাবে। বলেছিলেন, এটি নিয়ে তার কোনো আফসোস নেই, বরং ক্লাবকে যে অবস্থানে রেখে যেতে পারছেন সেটিতেই তিনি খুশি। যারা ওয়েঙ্গারের ট্রান্সফার পলিসির নিয়ত সমালোচক ছিলেন, তারা চাইলে সদ্য শেষ মৌসুমের দিকে তাকাতে পারেন। সানচেজ-মিখিতারিয়ান-বেৎসুয়িইর ত্রিমুখি ট্রান্সফারটা যে অসাধারণ দক্ষতায় সামলেছেন সেটিই প্রমাণ করে তার যোগ্যতা।

এগুলো এখন অতীত। সত্যটা হচ্ছে দীর্ঘ বাইশ বছর পর আর্সেনালের ডাগ আউটে দেখা যাবে নতুন কোন মুখ। চলতি শতাব্দীতে প্রিমিয়াল লিগ প্রথমবারের মত দেখবে স্যার ফার্গুসন এবং ওয়েঙ্গার ছাড়া মৌসুম। যতই সমালোচনা থাকুক, ওয়েঙ্গার যে এখনো আর্সেনালের সমর্থকদের একটি বড় অংশের হৃদয়ে অবস্থান করছেন সেটি দেখা গিয়েছে ওয়েঙ্গারের বিদায় ঘোষণার পর থেকেই। যেই আসুক, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় এমিরেটস অনুভব করবে ওয়েঙ্গারের শূন্যতা। কারণ, এটি গড়তে গিয়েই যে বিসর্জন দিয়েছেন আরো সফল ক্যারিয়ারের হাতছানি।