লেভান্তে ৫ – ৪ বার্সেলোনা
বোয়াটেং (৯”, ৩০”, ৪৯”) কৌতিনহো (৩৮”,৫৯”,৬৪)
বার্দি(৪৬”, ৫৬”) সুয়ারেজ (৭১” পেনাল্টি)
৩৬ ম্যাচ পর এ সিজনে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পেলো বার্সেলোনা। সব মিলিয়ে ৪৫ ম্যাচ পর গ্রানাটোসরা রুখে দিলো কাতালান জায়ান্টদের। মেসিবিহীন বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের নয় মিনিটে এগিয়ে যায় লেভান্তে। শেষ পর্যন্ত বোয়াটেং এর হ্যাট্রিক এবং বার্দির দুই গোলের সুবাদে ৫-৪ গোলে জয় পায় স্বাগতিকরা। পক্ষান্তরে কৌতিনহোর হ্যাট্রিক ও সুয়ারেজের গোলে ম্যাচে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত পরাজয় এড়াতে পারেনি ভালভার্দের শিষ্যরা।
সর্বশেষ ১৯৬৪ সালে লেভান্তের হোম গ্রাউন্ড সিয়াতাত দে ভ্যালেন্সিয়ায় ৫-১ গোলে হেরে ছিলো বার্সা। তার প্রায় ৫৪ বছর পর গতকালকের ম্যাচে লেভান্তের হোমগ্রাউন্ডে হারলো তারা।
লাইন আপ
লেভান্তে ( ৪-৪-২)
ওলজাবাল, কোকে, পোস্টগো, রবার, লুনা, মোরালেস, ক্যাম্পনা, লুকিস, বার্দি, বোয়াটেং, রজার।
সাব : রজার-লরমা, বোয়াটেং-পাজ্জিনি, মোরালেস-রচ্চিনি।
বার্সেলোনা (৪-৩-৩)
টের স্টেগেন, সেমেডু, মিনা, ভারমিউলেন, আলবা, রাকিটিচ,বুস্কেটস, ইনিয়েস্তা, দেম্বেলে, সুয়ারেজ, কৌতিনহো।
সাব : ভারমিউলেন-পিকে, ইনিয়েস্তা-ড্যানিস সুয়ারেজ, দেম্বেলে-পাকো আলকাসার।
প্রথমার্ধ
ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই সমীকরণটা সহজ ছিল বার্সেলোনার জন্য। লেভান্তের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ৫৪ বছরে ২৩ ম্যাচের সবগুলোতেই অপরাজিত এবং শেষ ৯ দেখায় ৩৬ গোলে সবকিছুই বার্সার অনুকূলে। চলতি সিজনের ৩৬ ম্যাচের একটিও হারেনি বার্সেলোনা। ইতিহাস এবং দলের বর্তমান পারফর্মেন্স কথা বলছিল বার্সেলোনার পক্ষেই।
তবে ম্যাচের নবম মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় গ্রানাটোসরা। ডি বক্সের বাহির থেকে লেভান্তের অধিনায়ক মোরালেসের অসাধারণ ক্রস থেকে বল পেয়ে যায় বোয়াটেং। বোয়াটেং এর শ্যুট ঠেকানোর জন্য বার্সার গোলকিপার স্টেগেন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে পরাস্ত হতে হয়েছে বোয়াটেংর শ্যুটের কাছে।
ম্যাচের ১১ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় লেভান্তে। বোয়াটেং এর বাড়ানো বল সুবিধাজনক জায়গায় পেয়েও গোল করতে পারেনি লেভান্তের স্ট্রাইকার বার্দি। তার নেয়া শ্যুটটি ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। তবে ব্যবধান ১-০ থেকে ২-০ করতে খুব বেশি সময় নেয়নি স্বাগতিকরা। ম্যাচের ৩১ মিনিটে বার্সেলোনার ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে দূর্দান্ত একটি পাস দেয় লেভান্তের মিডফিল্ডার লুকিস। তার বাড়ানো বল পেয়ে যায় বোয়াটেং, এবারও গোল করতে ভুল করেনি লেভান্তের এই স্ট্রাইকার। এবারও বল ঠেকাতে ব্যর্থ হয় কাতালানদের জার্মান গোলকিপার স্টেগেন।
ম্যাচের একদম শুরুর দিকেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়লেও ম্যাচের ৩৮ মিনিটে বার্সাকে ম্যাচে ফেরান কৌতিনহো। পিকের দেয়া পাস থেকে ডি বক্সের ভেতর থেকে জোরালো শ্যুটে গোল করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর কোন গোল না হওয়ায় ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে বার্সা।
দ্বিতীয়ার্ধ
প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা লেভান্তে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই ব্যবধান বাড়ায়। ক্যাম্পনার ব্যাক পাসে ডি বক্সের সামান্য বাহিরে একদম ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে যায় বার্দি। এবার আর সুযোগ মিস করেননি তিনি। ডি বক্সের বাহির থেকেই বাঁকানো শ্যুটে গোল করে দলকে ৩-১ গোলে লিড এনে দেয় বার্দি। ততক্ষণে কিছুটা চাপেই পড়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। তার ঠিক ৩ মিনিট পরই বোয়াটেং গোল করে নিজের হ্যাট্রিক পূরণ করে। তখন বার্সেলোনা ৪-১ গোলে পিছিয়ে থেকে রীতিমতো বিধ্বস্ত। ম্যাচের ৫৬ মিনিটের মধ্যেই যেন বার্সেলোনার ডিফেন্সকে তছনছ করে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। এবার রজারের বাড়ানো বল থেকে দলের পঞ্চম গোলটি করে বার্দি। বার্সেলোনার ডিফেন্সের এতটা করুণ দশা মনে হয় না এ সিজনে এর আগে কোন ম্যাচে দেখা গিয়েছে।
৫-১ গোলে পিছিয়ে পড়লেও লড়াই থামায়নি ভালভার্দের শিষ্যরা। ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েও সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছিল তারা।
৫৯ মিনিটে ব্যবধান কমান বার্সেলোনার ব্রাজিলিয়ান রিক্রুট কৌতিনহো। তার মিনিট পাঁচেক পর ডি বক্সের বাহির থেকে জোরালো শ্যুটে নিজের হ্যাট্রিক আদায় করে নেন তিনি। তার এই হ্যাট্রিক বার্সা ভক্তদের যতটা না আনন্দ দিয়েছে তার চাইতেও ঢের কয়েকগুন বেশি স্বস্তি এনে দিয়েছিল। এবার ৭১ মিনিটে পেনাল্টি পায় বার্সা। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমিয়ে ৫-৪ করে সুয়ারেজ। রোমাঞ্চকর ম্যাচের ৭১ মিনিটের মধ্যেই সিয়াতাত দে ভ্যালেন্সিয়ায় উপস্থিত দর্শকরা ৯ গোল এবং ২ টি হ্যাট্রিক দেখেছে!!
ব্যবধান কমিয়ে আনায় বার্সেলোনার ফ্যানরা তখন পরাজয় এড়ানোর পাশাপাশি এ সিজনে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, কিন্তু ম্যাচের বাকি ২০ মিনিটে লেভান্তের রক্ষণভাগ ভেঙ্গে আর কোন গোল আদায় করতে পারেনি বার্সেলোনা। অবশেষে টানা ৪৫ টি লিগ ম্যাচ এবং এ সিজনের ৩৬ ম্যাচ পর পরাজয়ের স্বাদ নিতে হল তাদের।
আজকের ম্যাচের পর ৩৭ ম্যাচে ৯০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের ১ এ অবস্থান করছে বার্সেলোনা এবং সমান সংখ্যক ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের ১৫ তে অবস্থান করছে লেভান্তে।
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ : ফিলিপে কৌতিনহো (বার্সেলোনা)