বিশ্বকাপে এশিয়ার সেরা সাফল্য বলতে গেলে ফিরে তাকাতে হবে ২০০২ সালের বিশ্বকাপের দিকে। স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া ভাগ্যদেবীর সাহচর্যে পৌঁছে গিয়েছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। অবিশ্বাস্যভাবে পর্তুগাল, ইতালির মতো ফেবারিট দলকে পরাজিত করে শেষ চারে জায়গা করে নিয়ে ফুটবল বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল তারা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মর্যাদাপূর্ণ লড়াইয়ের মঞ্চে জাপানের সাথে স্বাগতিক দেশের মর্যাদা পেয়ে এমন সেরা সাফল্যে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি এশিয়াও গর্বিত হয়েছিল। কিন্তু সেই শেষ। এরপর আর সাফল্য এসে ধরা দেয়নি এশিয়ার দুয়ারে। নিয়মিত অংশগ্রহণ, প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়– এটাই যেন অমোঘ নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল এশীয় অঞ্চলের কাছে। টিকে থাকার লড়াইয়ে যদিও এশিয়ার দেশগুলো অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে আছে।
অন্যদিকে, ইউরোপ-আমেরিকায় এশীয় দলগুলো নিয়ে নেই মাতামাতি। অবশ্য, র্যাংকিং বিবেচনায় ও বিশ্বকাপের নৈপুণ্য বিশ্লেষণে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করাও ঠিক হবে না। তবে এশিয়া অঞ্চলের সেরা দল ইরানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে। অবশ্য, স্বপ্নের ভীত গড়ে দিয়েছেন ইরানের পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজ। লুইস ফিগো, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের সাবেক গুরু কার্লোস কুইরোজ এবার ইরানকে বিশ্বকাপে নিয়ে এসে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন প্রতিপক্ষ দলগুলোকে। দলকে দারুণভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দলের সদস্যদের উত্তরোত্তর উন্নতি দলটিকে আরো সমৃদ্ধশালী করে প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এবারের বিশ্বকাপে তারা নিজেদের শক্তিমত্তা দেখাতে প্রস্তুত রয়েছে। ফিফার সদস্য হওয়ার পর ১৯৫০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ইরান। তারপরের সময়টাতে যতটা উন্নতি হওয়ার কথা তা হয়নি। তিনবারের এশিয়ার সেরা দেশটির মাঝে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ লাগার কারণে অনেকটা সময় ফুটবল কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধই ছিল।
পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপের বনেদি আসরে খেলতে যাচ্ছে এশিয়ার প্রতিনিধিরা। এর আগে ১৯৭৮, ১৯৯৮ ও ২০০৬, ২০১৪ সালে বিশ্বকাপে খেলেছিল দেশটি। প্রথম বিশ্বকাপ খেলার পর তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে পাক্কা ২০ বছর। লম্বা সময়ের অপেক্ষা শেষে ১৯৯৮ সালে তারা ফিরেছিল বিশ্বকাপ মঞ্চে। তবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। ২০০২ সালে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট জোগাতে ব্যর্থ হয় ইরান।
ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ। টানা দুবার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করল ইরান। শুধু কি তাই? এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে সর্বপ্রথম দল হিসেবে এবারের বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা দল ইরান। আট বছর অপেক্ষার পর ২০১৪ সালে তাঁরা বিশ্বকাপের মূল পর্বের টিকেট নিশ্চিত করেছিল। অবশ্য এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে ফিফা র্যাংকিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে তারাই। এখন পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করলেও কোনোটিরও গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারেনি এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি এই দলটি। কিন্তু এবার পর্তুগিজ তারকা কার্লোস কুইরোজের অধীনের এই দলটি দারুণ গতিতে এগিয়ে চলেছে। তবে কি রাশিয়া বিশ্বকাপের এই আসরে ঝলক দেখাতে চলেছে ইরান?
ইরান এবারের বিশ্বকাপে আছে ‘বি’ দলে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন, পর্তুগাল ও মরক্কো। ২০১০ সালের বিশ্বকাপজয়ী স্পেন তো শিরোপার অন্যতম দাবিদার। অন্যদিকে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল সামর্থ্য বিবেচনায় এগিয়ে আছে ইরানের চেয়েও বেশি। আছে আফ্রিকান জায়ান্ট মরক্কো। তাই গ্রুপ পর্ব টপকানো সহজ কাজ হবে না ইরানের কাছে। তবে দলের খেলোয়াড়য়া ইউরোপের বিভিন্ন দলে খেলে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হচ্ছেন। অন্যদিকে, তাদের ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ খেলার দারুণ অভিজ্ঞতাও রয়েছে। সুতরাং দলটা নিয়ে কুইরোজ দারুণ আশাবাদী। অবশ্য পরপর দুবার বিশ্বকাপের মূল পর্বে ওঠার কারণে দলটির ওপর ভালো করার চাপও রয়েছে। কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে জুনের চূড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত।
মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপিয়ান দ্বিতীয় সারির দলগুলোতে বর্তমানে খেলছেন ইরানিয়ান ফুটবলাররা, সাফল্যও পাচ্ছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগের চেয়েও তাঁরা আরো বেশি সক্রিয়। ইরানি উইঙ্গার আলিরেজা জাহানবক্স এজে আলমার ক্লাবের সাফল্যের জন্য নেদারল্যান্ডসের এই মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় হতে যাচ্ছেন। ২৩ বছর বয়সী সরদার আজমাউন এশিয়ার অন্যতম সেরা তারকা। সামান গোডোস ইউরোপিয়ান তারকা হওয়ার পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছেন। এঁদের দিকে তাকিয়ে ইরান প্রত্যাশার ঝুলি স্ফীত করতেই পারে।
যদিও বিশ্বকাপে ইরানের সামনে কঠিন বাধা। তবে সে বাধা টপকালেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই। ইরানের মেধাবী খেলোয়াড়রা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে বরং ইরানের ফুটবলের এই উত্থানের সুসময়ে বিশ্বকাপ মিশনে ভালো ফল কুইরোজের প্রাপ্যই।