গোল বলের খেলা ফুটবল। সকল খেলারই লক্ষ থাকে জয়। ফুটবলেও তাই। আর এই জয়ের জন্যে প্রয়োজন হয় গোলের। যে দল বেশি গোল দিবে সে দলই হয় জয়ী। আর ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ। আর কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। আমরা আজকে জানব ১৯৩০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের প্রতি আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকা।
১৯৩০ উরুগুয়ে বিশ্বকাপ
আর্জেন্টিনিয়ান স্ট্রাইকার গুইলেরমো ইস্তাবিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বপ্রথম সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নিজেকে অমর করে নিয়েছেন। সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা কাপ জিততে না পারলেও, গুইলেরমো ৮ গোল করে, সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় সবার আগে ছিলেন।
১৯৩৪ ইতালি বিশ্বকাপ
ইতালিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ইতালি হলেও ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব নিজের করে নিয়েছিল চেক প্রজাতন্ত্রের খেলোয়াড় অলদ্রিচ নেজেলি।
১৯৩৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপ
আবারো চ্যাম্পিয়ন ইতালি। এবার ব্রাজিলীয় তারকা লিওনাইদাস ৭ গোল করে সেই আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা নির্বাচিত হয়।
১৯৫০ ব্রাজিল বিশ্বকাপ
ফুটবল পাগল দেশ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হওয়া এই আসরের চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। ব্রাজিলীয় ফুটবলার আদেমির সেবার সব থেকে বেশি ৮ গোল করেছিলেন।
১৯৫৪ সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপ
জার্মান তথা পশ্চিম জার্মান প্রথম ট্রফি জিতলেও হাঙ্গেরীয় ফুটবলার সান্দোর ককসিস এমন অদম্য ছিলেন, যা তাকে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের এক আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে পরিচিতি দিয়ে থাকে। একাই ১১ গোল করে ১৯৫৪ বিশ্বকাপে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে আসীন হন।
১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপ
ফ্রেঞ্চ ফুটবলার জা ফন্তেইন পুরো বিশ্বের চোখ কপালে তুলে দিয়েছিল সেই বিশ্বকাপে। এক আসরের সর্বোচ্চ ১৩ গোলের রেকর্ডের মালিক এই ফ্রেঞ্চ তারকা। এটাই বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।
১৯৬২ চিলি বিশ্বকাপ
এই বিশ্বকাপে কোনো একক সর্বোচ্চ গোলদাতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। হাঙ্গেরীর ফ্লোরিয়ান আলবার্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভ্যালেন্টিন আইভানোভ, ব্রাজিলের গারিঞ্চা এবং ভাভা, য়ুগোস্লোভিয়ার দ্রাজান জারকভিচ এবং চিলির লিওনেল সানচেজ প্রত্যেকে সেই বিশ্বকাপে ৪টি করে গোল করেছিল।
১৯৬৬ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ
ইংল্যান্ড প্রথম এবং শেষবারের মত বিশ্বকাপ জয়ী হয় এই আসরে। এবং পর্তুগাল তারকা ইউসেবিও ৯ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা নির্বাচিত হয়।
১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপ
জার্মান গোল মেশিন গার্ড মুলার একাই প্রতিপক্ষের জালে ১০ বার বল পাঠিয়েছিল এই বিশ্বকাপে কিন্ত জার্মানকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেনাই তিনি। ব্রাজিল তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপ ঘরে নিয়ে আসে।
১৯৭৪ পশ্চিম জার্মান বিশ্বকাপ
পশ্চিম জার্মান চ্যাম্পিয়ন হলেও প্রতিবেশি পোলান্ডের তারকা গ্রেজর্জ লাটো ৭ গোল করে সেই আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা নির্বাচিত হয়।
১৯৭৮ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ
বিশ্বকাপের এই আসরে দুনিয়া এক নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখেছিল। ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনা সেবার সব প্রতিপক্ষকে নাকানিচুবানি খাইয়ে তাদের প্রথম শিরোপা জয় করে। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মারিও কেম্পেস নিজেদের মাটিতে ৬ গোল নিয়ে সে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়।
১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপ
এই আসরের সর্বপ্রথম গোল্ডেন বুট দেওয়ার রীতি চালু হয়। চ্যাম্পিয়ন ইতালি দলের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় পাওলো রসি ৬ গোল করে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বপ্রথম গোল্ডেন বুট জয় করে।
১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ
বিশ্ব ফুটবলের বরপুত্র ডিয়েগো ম্যারাডোনার একক কৃতিত্বে আর্জেন্টিনা সেবার বিশ্বকাপ জয় করে। কিন্তু ইংলিশ ফুটবলার গ্যারি লিনেকার তার ব্যক্তিগত নৈপূণ্য প্রদর্শন করে এই আসরের সর্বোচ্চ ৬ বার প্রতিপক্ষের জালে বল প্রেরণ করেন।
১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপ
জার্মান মেশিন তাদের শক্তিমত্তা আবার প্রমাণ করে বিশ্বকাপ জয় করলেও, ইতালীয় স্যালভাতোর শিলাচি নিজের দেশের মাটিতে ৬ গোল করে সর্বোচ্চ গলদাতার মালিক হন।
১৯৯৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপ
ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতলেও তাদের দলের কেউই সর্বোচ্চ গোলদাতার তকমা পায়নাই। রাশিয়ার অলেগ সালেনকো এবং বুলগেরিয়ার হ্রিস্টো স্টোইচকোভ দুই জনেই ৬ গোল করেণ সেই আসরে।
১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপ
জিনেদিন জিদানের নেতৃত্বে সেবার ফ্রান্স ব্রাজিলকে ফাইনালে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রথম বারের মত বিশ্ব জয়ী দলে পরিণত হয়। ক্রোয়াট স্ট্রাইকার ডাভোর সুকের ৬ গোল করেন।
২০০২ জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপ
পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ২০০২ সালে সর্বশেষ বার বিশ্বকে তাদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে। তাদের এই বিজয় অভিযানে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন “ফেনোমেনন” খ্যাত ব্রাজিলীয় তারকা রোনালদো। তিনি একাই ৮ গোল করেন।
২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ
এই আসরের ফাইনালকে ফুটবলপ্রেমীরা কোনোদিনও ভূলতে পারবে না। জিদানের লাল কার্ডের ফলস্বরূপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ইতালি আর ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয় মিরাস্লভ কোসা।
২০১০ সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপ
প্রথপবারের মত স্পেনকে কাপ জিততে তাদের স্ট্রাইকার ডেভিড ভিয়া ৫ গোল করলেও, সেবার উরুগুয়ের ডিয়েগো ফোরলান, ডাচ ফুটবলার ওয়েস্লি স্নেইডার, জার্মান গোলমেশিন থমাস মুলারও ৫টি করে গোল করেন।
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ
জার্মানরা আবার তাদের আধিপত্য দেখিয়ে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে জিতলেও সেসময়ের সেনসেশন কলম্বিয়ান তারকা হামেস রদ্রিগেজ পুরো টুর্নামেন্টে বিষ্ময়কর ফুটবল খেলে ৬ গোল করেন।