গত পাচ বছরে সরকার, রাজনৈতিক নেতা এবং ধর্ম নিয়ে ফেসবুকসহ নানা ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করার দরুণ আইসিটি আইনের অধীনে অসংখ্য লোক গ্রেফতার হয়েছে, বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
তার উপর পূর্বের এই আইনের নতুন সংস্করণ প্রস্তাবিত ডিজিটাল আইন জনগণের মতামতের স্বাধীনতাকে আরো বেশী খর্ব করবে বলে দাবি তাদের।
“বাংলাদেশ সরকারের এই ৫৭ ধারা সরকারের নিজ দাবি মতেই বেশ শক্ত, তাই এই আইন বাতিল হওয়া উচিত” বলে মনে করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ভিত্তিক পরিচালক ব্র্যাড এডামস। তিনি আরো বলেন, “কিন্তু নতুন যে আইন প্রস্তাব করা হচ্ছে, সেটিও দেশে অস্থিরতা তৈরি করবে, এবং এই আইনকে সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে”
৮৯ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টটি ২০০৬ সালে করা আইসিটি আইনের অধীনে গ্রেফতার হওয়া বেশ কিছু ব্যক্তিদের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। এবং রিপোর্টমতে সর্বশেষ এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ এই আইনের অধীনে সাইবার ট্রাইব্যুনালে ১২৭১টি মামলা করেছে।
এসব গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগেরই প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবার কিংবা তার দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সমালোচনার অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা মতে, যেকোন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ভুয়া, অবমাননাকর কিংবা আইন-শৃংখলা বিনষ্টকারী যেকোন পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে এই ধারায় অভিযুক্ত হতে পারেন।

এই রিপোর্টে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইতিহাস তুলে এনে বলে, বিএনপি-জামায়াত সরকারের (২০০১-২০০৬) সময়েও সরকারের সমালোচকদের নানাভাবে হেনস্থা করা হত। সেসময়ে আওয়ামী সরকারের সময়ে অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি চ্যানেল ইটিভি সরকার বন্ধ করে দেয়্। এছাড়া সাংবাদিকসহ নানা সুশীল সমাজের ব্যক্তিত্বদের মানহানি মামলাও দেওয়া হয়।
সংস্থাটি এই সরকারের নানা সময়ে এই আইনের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কথাও বলেছে। ২০১৫ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থা দুটি সর্বোচ্চ জনপ্রিয় দৈনিককে কোন বিজ্ঞাপন না দেওয়ার আদেশও দিয়েছিল কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে। এছাড়া বিএনপি নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করায় একুশে টিভির মালিককেও গ্রেফতার করে বর্তমান সরকার।
সংস্থাটি ঢাকা ট্রিবিউনের বরাত দিয়ে বলে, সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ কৌশলী নজরুল ইসলাম শামীম জানান, ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলাগুলোর ৬৫ থেকে ৭০ ভাগই ভুয়া, কেবল হেনস্থা করতেই ব্যবহার করা হয়। এবং ১৮ সালের প্রথম তিন মাসে এই ধারার ৯টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে, তার মধ্যে ৮টি কার্যকর হয়েছে।
এছাড়া এই রিপোর্টে আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, অধিকার এর আদিলুর রহমান সর্বশেষ বিডিজবসের ফাহিম মাশরুরসহ নানা সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পর্যবেক্ষন উঠে এসেছে।
সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারকে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, প্রস্তাবিত আইনগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রাখা এবং যেকোন প্রয়োজনে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূতদের সাথে পরামর্শ করারও আহবান জানায় উক্ত নাতিদীর্ঘ রিপোর্টে।