সিলভেস্টার স্ট্যালন
সিলভেস্টার স্ট্যালনকে হলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় একশোন হিরো বললে বোধ হয় ভুল হবেনা। সুঠামদেহী রকি খ্যাত স্ট্যালন, মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েছেন বহু আগেই। কিন্তু এই স্ট্যালনই এক সময়ে রাত কাটাতেন বাসের সিটে ঘুমিয়ে। নিউ ইয়র্কের হেলস কিচেনে জন্ম নেয়া স্ট্যালনের জায়গা ছিলনা থাকার। বাসের সিটে শুয়ে শুয়েই একদিন পত্রিকার বিজ্ঞাপন পড়ছিলেন। তখন দেখেন, ছবিতে অভিনয়ে আগ্রহীদের একদিন কাজ করলে ১০০ ডলার দেওয়া হবে। কিছু টাকা কামাইয়ের নিয়ত নিয়ে স্ট্যালন পরের দিনই চলে যান অভিনয় করতে। সেখান থেকেই শুরু। তারপর রকি ব্যাল্বোয়ার চরিত্র দিয়ে উঠেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তার জনপ্রিয় চরিত্র রকিকে নিজের শৈশবের আদলেই লিখেছিলেন তিনি। ‘রকি’ ছাড়াও ‘র্যাম্বো’, ‘এক্সপেনডেবলস’, ‘ডেমলিশন ম্যান’ ইত্যাদি পর্দা কাঁপানো সিনেমা করেছেন তিনি।
ক্রিস প্র্যাট
হলিউডের তরুণদের মধ্যে ক্রিস প্র্যাটকে দারুণ সম্ভাবনাময় এক তারকা বলা যায়। আগে টিভি সিরিজে অভিনয় করলেও ২০১৪ সালে ‘দ্য লেগো মুভি’ ও ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি’ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্ত হালের এই জনপ্রিয় অভিনেতাকে একসময় গৃহহীন অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। কলেজে উঠে প্রথম সেমিস্টারেই পড়ালেখা ছেড়ে মাউই চলে যান ক্রিস। মাউইতে একটা হোটেলের ওয়েটারের কাজ করে শুধু মাত্র পেট চলত তার। থাকার জায়গার বন্দোবস্ত না থাকায় রাতে কোন ভ্যান অথবা বিচে ঘুমিয়ে কাটাতে হত। এভাবেই কোনরকমে চলছিল অভিনেত্রী র্যা ডং চং এর নজরে পড়ার আগ পর্যন্ত। তার সাথে সাক্ষাতের পর সুযোগ পেয়ে গেলেন সেই অভিনেত্রীর প্রথম কাজ কার্সড এর তৃতীয় কিস্তিতে অভিনয়ের মাধ্যমে আর পা রাখলেন তারকা জগতে। তারপরের কাহিনী তো সবারই জানা। টিভি সিরিজ ‘পার্কস এন্ড রিক্রিয়েশন’ ছাড়াও ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি’, ‘এভেঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
ড্যানিয়েল ক্রেইগ
হলিউড সিনেমা যারা দেখেন জেমস বন্ড তাদের কাছে পরিচিত মুখ। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় জেমস বন্ড তারকা ড্যানিয়েল ক্রেইগ। তারকা হওয়ার পর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন ক্রেইগ। হোটেলের ওয়েটারের কাজ করার পাশাপাশি পার্কের বেঞ্চে ঘুমিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে দুধর্ষ জনপ্রিয় এই নায়ককে। প্রচন্ড টাকার অভাবে থাকা ক্রেইগ ‘লারা ক্রফটঃ টম্ব র্যাইডার’এ অভিনয়ের সুযোগ পেলে তা লুফে নিতে ভুল করেন নি।
আর তার বন্ড সিরিজের কথা তো আজ সমগ্র দুনিয়া জুড়ে সবারই জানা।
চার্লি চ্যাপলিন
চার্লি চ্যাপলিন নামেই পরিচিত সিনেমা জগতের এই মহীরুহ। স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র একজন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা। হলিউডের ইতিহাসের সাদা-কালো পর্দা কাঁপানো এই অভিনেতা চ্যাপলিন পৃথিবীর বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকও বটে। চ্যাপলিনকে চলচ্চি্ত্রের পর্দায় শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতাদের একজন বলেও মনে করা হয়। নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের অন্যতম মৌলিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব চ্যাপলিন নিজের ছবিতে নিজেই অভিনয়, সংলাপ রচনা, পরিচালনা, প্রযোজনা এমন কী সঙ্গীত পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। দশ বছর বয়সে বিখ্যাত এই অভিনেতার বাবার অন্তর্ধান এবং মায়ের মানসিক অসুস্থতা চ্যাপলিন ও তার ভাই সিডনিকে পথে নামিয়ে দেয়। তখন থেকেই নিজের এবং তার ভাইয়ের জন্যে জন্যে আয় করতে হয় চ্যাপলিনের; ছিলেন ঘরহারা। ট্যাপ ড্যান্স দিয়ে যাত্রা শুরু করা গৃহহীন বালক চ্যাপলিন তার ক্যারিয়ার শেষ করেন হলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনেতার মর্যাদায়।
জিম ক্যারি
অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বাবা। বাবার কষ্ট দেখে স্কুলে যেতে সায় দিতনা তার মন। পরিবারে বাবার কষ্টের ভাগ নিতে ১৪ বছর বয়সেই কাজ নেন স্টিল কারখানায়। প্রতি রাতে ৮ ঘণ্টা কারখানায় শ্রম দিয়ে সকালে স্কুলে গিয়ে কিছুই মাথায় ঢুকত না তার। কিছুদিন পরে বাবার নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি চলে গেলে ১৬ বছর বয়সে এসে একেবারেই ছেড়ে দিলেন পড়ালেখা। অভাবের সংসারে ঘর ছেড়ে শেষমেষ বস্তিতে নামতে হল তাদের। জিম ক্যারি তখন পার্কের বেঞ্চিতে রাত কাটানো শুরু করলেন। একদিন তিনি সাহস করে একটি কমেডি ক্লাবে গিয়ে হাজির হলেন। আর এটাই ছিল তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। পরিচালক রডলি ডেনগারফিল্ডের নজরে পড়ে যান তিনি আর শুরু হয় রুপালী পর্দায় পথচলা। এভাবেই শূন্য থেকে শুরু করা নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে সফল এই তারকা কখনোই তার অতীতকে ভুলে যাননি।
হেল বেরি
একুশ শতকের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকে কাজ করা আবেদনময়ী কৃষাঙ্গ সুন্দরি হেল বেরি। ১৯৯১ সালে ‘জঙ্গল ফিবার’ দিয়ে সিনে দুনিয়ায় প্রবেশ তার। গৃহহীনদের আশ্রয়স্থলে থাকা হেল বেরি কখনো ভাবেননি এতদূর এসে পৌঁছুবেন। ১৯৮৭ সালে একুশ বছর বয়সী হেল বেরি তার শেষ ডলারটাও খরচ করে মায়ের কাছে গেলে তার মাও তাকে ফিরিয়ে দেয়। তখন তিনি গৃহহীনদের আশ্রমে ঠাই নেন। এক সময় কপর্দকহীন হেল বেরি এখন হলিউডের সেরা অভিনেত্রীদের একজন। ‘মনস্টার বল’ সিনেমার জন্য ২০০২ সালে পেয়েছেন প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান অভিনেত্রি হিসেবে সেরা অভিনেত্রির ক্যাটাগরিতে একাডেমি এওয়ার্ডের সম্মাননা।
হিলারি সোয়াঙ্ক
১৯৯৯ সালে ‘বয়েজ ডোন্ট ক্রাই’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে দর্শকমন জয় করেন হিলারি সোয়াঙ্ক, পেয়ে যান অস্কারও। দুইবার অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রির শৈশব কাটে প্রচন্ড দুঃখ দুর্দশায়। ক্যারিয়ারের খোজে পরিবারসহ লস এঞ্জেলেসে সামান্য থাকার জায়গা হয়নি হিলারি সোয়াঙ্ক এর। কখনো গাড়িতে কখনো বা রাতে বন্ধুর বাসায় থেকে দিন পার করেছেন এই অভিনেত্রী। কিন্ত বন্ধুর বাসায় শুধু তাদের পরিবার রাতে ঘুমাতে পারত। মূলত ওই বাড়িতে কেউ থাকতনা এবং বাড়িটা বিক্রির জন্যে নির্ধারিত থাকায় তার পরিবার মাথা গুঁজবার একটু ঠাই পায়। ফলে তারা রাতে সেখানে থেকে সকালে আবার সব গুছিয়ে বের হয়ে যেত। ১৯৯২ সালে ‘বাফি দ্য ভ্যাম্পায়ার স্লেয়ার’ দিয়ে বড় পর্দায় আসেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ‘বয়েজ ডোন্ট ক্রাই’ এবং ২০০৫ সালে ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’ তে অভিনয়ের জন্যে জিতেন অস্কার পুরষ্কার।