ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আমেরিকার হস্তক্ষেপের কোন প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ইলান প্যাপে। সর্বশেষ জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের ঘোষণাই প্রমাণ করে সে অঞ্চলে কোন প্রকার শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইলান প্যাপে যিনি নিজেই ইহুদি এবং জন্মসূত্রে ইসরায়েলি হলেও তিনি ফিলিস্তিনিদের নিজের দেশ ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে সবসময় কথা বলে আসছেন। সে অঞ্চলে ইহুদীদের ভবিষ্যতও তাকে ভাবিয়ে তুলে প্রতিনিয়ত। আল জাজিরার সাথে এক বিশেষ স্বাক্ষাতে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ট্রাম্পের মত ওবামা প্রশাসনসহ পূর্বের মার্কিন শাসকরা ফিলিস্তিন নিয়ে নানাসময়ে ‘ডাবল গেম’ খেলে ফিলিস্তিনকে বারবার আশাহত করেছে। সেসব প্রশাসকরা সকলেই ফিলিস্তিনে ইহুদিদের প্রকল্প বাস্তবায়নেই কাজ করে গেছেন।
ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতির কোন বদল হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ট্রাম্প অন্যদের তুলনায় স্পষ্টভাষী। তার পূর্বসূরীরা তো ফিলিস্তিনবাসীদের সাথে দ্বিচারীতা করেছে। তিনি বরং প্রকাশ্যে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সেই ঘোষণা অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী।
মূলত ট্রাম্পের এমন কট্টর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে আমেরিকার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বেশ কিছু যায়নবাদী সমর্থকরা। তাদের ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন সেখানকার ইহুদিদের থেকেও শক্তিশালী। ইলান প্যাপে এই যায়নবাদী খ্রিষ্টানদের ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার প্রস্তাবও করেছেন।
যদি ফিলিস্তিনিরা তাদের ন্যায্য অধিকার মাতৃভূমি ফিরে পায় তাহলে সেখানে বসবাসরত ইহুদিদের কি হবে এমন জিজ্ঞাসার উত্তরে প্যাপে দাবি করেন, সেখানে প্রায় ৬০ লাখ ইহুদি বসবাস করছে। তারা সাধারণ নাগরিক হিসেবে সেখানে তাদের ন্যায্য অধিকার পেতে পারে।
প্যাপের নিজের পরিবারও ইসরায়েলে আছে জানিয়ে প্যাপ দাবি করেন, ইহুদিরা ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করলেও সেখানেও তারা খুব ভাল নেই। তারা সেখানে প্রতিদিন অনিশ্চয়তা নিয়েই জীবন অতিবাহিত করছে। এই ব্যাপারটি বুঝাতে তিনি টাইটানিক জাহাজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আপনি টাইটানিক জাহাজটির সবচেয়ে উন্নত কেবিনে অবস্থান করছেন। কিন্তু কোনভাবে জাহাজটির কিছু হলে আপনিও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বেন। ইসরায়েলের ক্ষেত্রে ঠিক তাই হচ্ছে।
টু-স্টেট সল্যুশন কি কার্যকর সমাধান হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কোন হেরফের হবেনা। বরং এসবের বাইরে নতুন কোন সমাধান আমাদের খুজতে হবে। তবে এক্ষেত্রে মার্কিনীরা কোন গঠণমূলক ভূমিকা রাখার মত নৈতিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
ইলান প্যাপে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে প্রায় পনেরোটির অধিক বই লিখেছেন। তার বিখ্যাত বই ‘এথনিক ক্লিনজিং অফ প্যালেস্টাইন’ নানাসময়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বর্তমানে এক্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপিয়ান সেন্টার অফ প্যালেস্টাইনের সম্মানিত পরিচালক।