বহুদিন পর যুদ্ধংদেহী এল ক্লাসিকো

বহুদিন পর যুদ্ধংদেহী এল ক্লাসিকো

বার্সেলোনা             ২ – ২         রিয়াল মাদ্রিদ
সুয়ারেজ ১০’                            রোনালদো ১৪’
মেসি ৫২’                                 বেল ৭২’

মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোর সমাপ্তি ঘটলো ক্লাসিকভাবেই। রোনালদো, মেসির গোল; চোখ ধাঁধানো ফুটবল, ক্লাসিকোর সমস্ত উপাদানই ছিল ম্যাচটিতে। দশজনের বার্সার বিপক্ষে জয় সূচক গোল না পাওয়া নিয়ে রিয়াল শিবিরে অসন্তোষ থাকতে পারে, কিন্তু রাত শেষে মুগ্ধকর একটি ম্যাচ উপহার দেয়ার কৃতিত্ব নিয়েই মাঠ ছেড়েছে দু’দল।

লাইন-আপ

বার্সেলোনা (৪-৩-৩)
টার স্টাগেন, সার্জিও রবার্তো, পিকে, উমতিতি, আলবা, রাকিটিচ, বুস্কেটস, ইনিয়েস্তা, কৌতিনহো, মেসি, সুয়ারেজ

সাব : কৌতিনহো-সেমেদো, ইনিয়েস্তা-পৌলিনহো, সুয়ারেজ-আলকাসার

রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩)
নাভাস, মার্সেলো, ভারান, রামোস, নাচো, ক্রুস, কাসেমিরো, মদ্রিচ, বেল, বেনজেমা, রোনালদো

সাব : রোনালদো-অ্যাসেন্সিও, নাচো-ভাস্কেজ, ক্রুস-কোভাচিচ

প্রথমার্ধ

লিগ শিরোপার নিষ্পত্তি আগেই হয়ে যাওয়ায় ‘ক্লাসিকো’ কতটা ক্লাসিক হবে তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন অনেকেই। সে দ্বিধাগ্রস্থ মনগুলোকে দাতভাঙ্গা জওয়াবই যেন দিয়েছে ক্লাসিকোর প্রথমার্ধ। দু পক্ষের দুটি অসাধারণ গোল, অ্যাটাক-কাউন্টার অ্যাটাক, স্কিল, কার্ড; কি ছিল না প্রথমার্ধে? ক্লাসিক এক ক্লাসিকোর সম্ভাবনা জাগিয়ে যেটি শেষ হয়েছে। ক্লাসিকো স্নায়ুর কতটা পরীক্ষা নেয়, তা দেখা গিয়েছে সদা শান্ত মদ্রিচ-মেসির মেজাজ হারানোর দৃশ্যতে। ম্যাচের বয়স দশ মিনিট হতেই বুনো উল্লাসে মত্ত ক্যাম্প ন্যু। চোখ ধাঁধানো এক কাউন্টার থেকে স্বাগতিকদের তখন এগিয়ে নিয়েছেন সুয়ারেজ। ফ্ল্যাংক ধরে সার্জিও রবার্তোর অসাধারণ রান; মাপা ক্রস, নিখুঁত পজিশন সেন্স এবং ফিনিশিংয়ের সমন্বয়ে চোখকে প্রশান্তি দেয়া এক গোল। শুরুর যে চাপটা রিয়াল কেবল কাটিয়ে উঠছে যখন তখনই এমন আঘাতে ডিসেম্বরের শেষ ক্লাসিকোর পুনরাবৃত্তির শঙ্কাই যেন চেপে বসেছিল ব্লাঙ্কোস সমর্থকদের ওপর। শঙ্কা সত্যতে রুপ না নিয়ে প্রথমার্ধটি বরং শেষ হয়েছে বহু বছরের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় প্রথমার্থের তকমা গায়ে জড়িয়ে। বার্সার গোলের ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই সমতা; স্কোরার রোনালদো। মাঝমাঠে ক্রুসের চমৎকার বল দখল; সেখান থেকে রোনালদোর উদ্দেশ্যে পাস, রোনালদোর চমৎকার কাট-ইন, সেখান থেকে ব্যাক হিলে আবারো ক্রুস, ক্রুসের ক্রস; বেনজেমার হেড থেকে পাওয়া বলে রোনালদোর সহজ ফিনিশিং। নিখুত টিম গোল। এরপরে আর গোল না হলেও ক্লাসিকোর সমস্ত উপাদানই ছিল। টার স্টেগানকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি রোনালদো, একইভাবে মেসিও মিস করেছেন একা নাভাসকে পেয়েও। দেখা গিয়েছে রোনালদোর ট্রেডমার্ক জাম্প, মেসির অফ দ্য বল মুভমেন্টও। তবে ক্লাসিকোর স্নায়ুক্ষয় করা মুহূর্তগুলো দেখা গিয়েছে আধা ঘন্টার মার্ক পেরোনোর পর থেকে। আলবা-মদ্রিচ বিবাদ দিয়ে শুরু। এরপরে রামোস-সুয়ারেজ, মেসি-রামোস হয়ে যার সমাপ্তি ঘটেছে সার্জিও রবার্তোর লাল কার্ড পাওয়ার মধ্য দিয়ে।

চিত্র: ডেইলি মেইল ইউকে

দ্বিতীয়ার্ধ

সন্দেহাতীতভাবে কিছুটা বাড়তি চাপ নিয়ে মাঠে নামে বার্সা। ক্লাসিকোর মত ম্যাচে পুরো দ্বিতীয়ার্ধ একজন কম নিয়ে খেলা; কোনো দলই এমনটা চাইবে না নিশ্চিত। এটা অস্বস্তির দিক হলে বার্সার জন্য স্বস্তি হয়ে আসে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই রোনালদোর না থাকাটা। গোল করার সময়ই চোট পাওয়ার আভাস পাওয়া গিয়েছিল, তা নিয়েই খেলেছেন প্রথমার্ধ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল মাথায় রেখেই সম্ভবত নিজের সেরা অস্ত্র নিয়ে কোনো ঝুকি নিতে চাননি জিদান। কিন্তু তাতে, বার্সার কৃতিত্ব বিন্দু পরিমাণও কমে না। একজন কম থাকায় হাই প্রেসিং এর বদলে কিছুটা স্লথ গতিতে নিজেদের পায়ে বল রেখে খেলা শুরু করে কাতালানরা। সুফল আসতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। দারুণ ছন্দে থাকা মেসি আরো একবার দেখালেন ম্যাজিক। ডি বক্সে রামোস এবং কাসেমিরোকে পায়ের কাজে বোকা বানিয়ে যে দক্ষতায় বলটি জালে জড়ালেন তা মেসির পক্ষেই সম্ভব। এরপরে রিয়ালের সমতায় ফেরার লড়াই আর বার্সার সুযোগ সন্ধানী ফুটবল। রিয়াল-বার্সা সমর্থকদের বাইরে যারা, সেই নিরপেক্ষ দর্শকদের জন্য যা ছিল দারুণ উপভোগ্য। রিয়ালের আক্রমণের ঢেউ দারুণভাবেই সামাল দিচ্ছিলেন টার স্টেগানসহ বার্সার রক্ষণ। ৭০ মিনিটে আরো একটি মেসি ম্যাজিক অসাধারণ দক্ষতায় নাভাস রুখে দেয়ার দুই মিনিট পরেই রঙ্গমঞ্চে কার্ডিফ এক্সপ্রেস, গ্যারেথ বেল। অ্যাসেন্সিওর বাড়ানো থ্রু ধরে ডি বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির যে শ্যুটটি নিয়েছেন তা ঠেকানোর সাধ্য কারোই নেই। ৮৩ মিনিটে আরো একটি সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি, এবারো বাধার দেয়াল হয়ে রিয়ালকে রক্ষা করেছেন নাভাস। এরপর দু’দলই চেষ্টা করলেও জয়সূচক গোলের দেখা পায়নি কেউই। ম্যাচটি দেখলে ফলটিকে ন্যায্যই বলতে হবে। দু’দলই নিজস্ব শক্তির ওপর ভর করে দারুণ একটি রাত উপহার দিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। ভালভার্দের এ ম্যাচ থেকে চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, জয়টি হতে পারত বোনাস। জিদানের জন্য যেটি সুখকর লাগার কথা সেটি হচ্ছে বিবিসি ত্রয়ীর পারফরমেন্স। রিয়ালের দুটি গোলেই সরাসরি অবদান ছিল তিনজনের। সুতরাং, যেমনটা বাতাসে ভাসছে, বিবিসির যে কাউকে বিক্রি করে দেয়ার আগে আরো একটু ভাবার বোধয় প্রয়োজন রয়েছে।

দু’দলের সমর্থকরাই রেফারির কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, তা সত্ত্বেও নির্দ্বিধায় বলা যায়, বহুদিনের মধ্যে সেরা এল ক্লাসিকো ছিল এটি।

উল্লেখ্য, বার্সা কিংবদন্তি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার শেষ এল ক্লাসিকো ছিল এটি।

ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা)