ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপির সমালোচনা করায় বলিউডের কোন চলচ্চিত্রের প্রস্তাব পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন দক্ষিণের শক্তিমান অভিনেতা প্রকাশ রাজ। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা ভারতীয় দৈনিক ‘দ্য প্রিন্ট’ কে জানায়, যখন থেকে তিনি সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট গৌরি লঙ্কেশের হত্যাকাণ্ডে মোদির ‘শীতল নীরবতা’র সমালোচনা করছেন, তারপর থেকে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে নন্দিত এই অভিনেতা বলেছেন, ‘যদি আমি কোন প্রশ্ন করি, আমি হিন্দুবিরোধী। যদি কেউ তাদের বিরুদ্ধে বলে, তারা বলে, পাকিস্তান পাঠিয়ে দেব। আরে… সুন্দর কোন সমুদ্র সৈকতে পাঠাও, অথবা কোন অবকাশ কেন্দ্রে। পাকিস্তান কেন? কারণ তা আপনার মগজে, আপনার ধারণা যে ওই ধর্ম (ইসলাম) ভুল। দয়া করে পাকিস্তানের কাছ থেকে শিক্ষা নিন, যারা ইসলামকে একমাত্র রাষ্ট্রধর্ম করেছে এবং এটি দরিদ্রতায় ভুগছে। আপনারা কি ভারতকে এই অবস্থায় নিয়ে যেতে চান?’
তিনি মনে করেন সমকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের অরাজনৈতিক অবস্থান থেকেও কথা বলা প্রয়োজন।
প্রকাশ রাজ সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশের বহুদিনের বন্ধু ছিলেন। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তেমন কোন সমস্যা নেই, কিন্তু হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে কোন প্রস্তাব পাইনি। যা আমি বলা শুরু করেছি, বলে যাবো, এতে আমি মোটেও আতঙ্কিত নই। আমার যথেষ্ঠ অর্থ রয়েছে’।
তিনি বলেন ‘গৌরির মৃত্যু আমাকে ভাবায়… সে প্রশ্ন করতো। তার নিরব হয়ে যাওয়ায় আমি নিজের মনের কাছে দোষী অনুভব করি। আমরা কি তাকে যুদ্ধে একা ছেড়ে দিলাম?’
এই অভিনেতা আগেও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি’র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এখন কর্ণাটক সংসদীয় নির্বাচনে দলটির বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। প্রকাশ রাজ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কেন আমরা অমিত শাহজিকে ভয় পাব? নেতা হিসেবে তার কৃতিত্ব কী? আপনি (অমিত) কি দেশের উন্নয়নে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া দিয়েছেন? আপনি কি বৈজ্ঞানিক কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন? তিনি সরকারকে পরাজিত করে ছাড়বেন? তিনি নির্বাচনে জিততে পারবেন… এটা কি আমি চাই?’
রাজ উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘কথা’ দিয়েছিলেন, দুই কোটি কর্মসংস্থান করবেন, কালো টাকা নির্মূল করবেন কিন্তু সাড়ে তিন বছরে কিছুই করেন নি। তিনি হিসেব দেননি, কত টাকা ফেরত এসেছে।
প্রকাশ রাজ রাজনীতিতে যোগদান সম্পর্কে বলেন, ‘একবার আপনি ওখানে গেলে, আপনি ফেঁসে যাবেন। আমি ইতিমধ্যে রাজনীতির মধ্যে আছি। আমাকে এমএলএ কিংবা এমপি হওয়ার প্রয়োজন নেই। রাজনীতি হল রাজনৈতিক সচেতনতা… এই সচেতনতা মাত্র দুই-তিন মাসের না। আমার ধৈর্য আছে। আমি রাতারাতি বদলে যাই না… আমি কোন দল গঠন করতে চাই না’।
উল্লেখ্য, ‘কন্নাড়া উইকলি’র সম্পাদক গৌরি লঙ্কেশ গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর তার বেঙ্গালুরুর বাড়ির বাইরে গুলিতে নিহত হন। এ বছর মার্চে ‘স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম’ খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট একজনকে গ্রেফতার করে যে কিনা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের সক্রিয় কর্মী। এই অনুসন্ধান এখনো চলছে।