রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে ফাইনালে লিভারপুল

রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে ফাইনালে লিভারপুল

রোমা                ৪ – ২                   লিভারপুর
মিলনার(১৫”) (ওউন গোল)            মানে(৯”)
জেকো (৫২”)                                উয়িজনালডম (২৫”)
নাইঙ্গোলান(৮৬”, ৯০+৪”-পেনাল্টি)

আবারও লিভারপুলের কাছে থমকে গেল রোমা। ৩৪ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের (তখন ইউরোপিয়ান কাপ নাম ছিল) ফাইনালে লিভারপুলের কাছে ট্রাইবেকারে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল তারা। আজ ৩৪ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি ফাইনালে লিভারপুলের কাছে হেরেই এ সিজনের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যাত্রার ইতি টানতে হল এই ইতালিয়ান লা লুপাদের।

অন্যদিকে,  ক্লপের নেতৃত্বে প্রায় ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে লিভারপুল। এর আগে ৭ বার ফাইনাল খেলে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ডের সফলতম ক্লাবটি।

৮ম বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স  লিগের ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করল লিভারপুল। এর আগে ৭ ফাইনালে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন্স হয়েছে অল রেডসরা।

এ সিজনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হোমগ্রাউন্ডে অপরাজিত থাকলো রোমা।

লাইন আপ

রোমা (ফরমেশন ৪-৩-৩)

এলিসন, ফাজিও, মানোলাস, ফাজিও্, কলারভ, নাইঙ্গোলান, ডি রসি, পেল্লেগ্রিনি, জেকো, প্যাট্রিক, এল শারাওয়ী।

সাব : পেল্লেগ্রিনি-উন্ডের, ডি রসি-গঞ্জালেস, এল শারাওয়ী-মির্কো।

লিভারপুল (ফরমেশন ৪-৪-৩)

লরিস, অারনোল্ড, লোভরেন, ডিজক, রোবের্টসন, উয়িজনালডম, হ্যান্ডারসন, মিলনার, মানে, ফিরমিনহো, মো. সালাহ।

সাব : মানে-ক্লাভান, ফিরমিনহো-সোলানকে, আরনোল্ড-নাথানিয়েল।

প্রথমার্ধ

কোয়াটার ফাইনালে স্তাদিও অলিম্পিকোতে বার্সেলোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে রূপকথার জন্ম দিয়েছিল রোমা। সেমি ফাইনালেও একই সমীকরণ ছিল। তবে এবারের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারেনি লা লুপারা।

এ সিজনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রতিপক্ষের দাপট এবং সদ্য ঘোষিত প্রিমিয়ার লিগে সেরা প্লেয়ার যে দলে সেই দলকে আটকানো কতটা কষ্ট সাধ্য কাজ তা জানা ছিল স্বাগতিকদের। তবে স্তাদিও অলিম্পিকো উপস্থিত ৭০ হাজার লা ম্যাজিকা সমর্থকদের হতাশ করতে চায়নি রোমা।

ম্যাচের একদম শুরু থেকেই লিভারপুলের উপর প্রেসিং ফুটবল খেলছিল রোমা। তবে ম্যাচের ৯ মিনিটের মাথায় নাইঙ্গোলানের ভুল পাসে বল পেয়ে যায় অল রেডসরা। সেখান থেকে ফিরমিনহোর দেয়া পাসকে গোলে রূপান্তর করে সাদিও মানে। তার গোলের সুবাদে ম্যাচের শুরুতেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় লিভারপুল। তবে বেশিক্ষণ লিড ধরে রাখতে পারেনি অতিথিরা। ৬ মিনিট পর ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় আরনোল্ড ও রোবের্টসনকে কাটিয়ে আক্রমণে চলে যায় রোমার ইতালিয়ান স্ট্রাইকার এল শারাওয়ী। তার করা শ্যুট লিভারপুল মিডফিল্ডার মিলনারের মুখে লেগে গোল হওয়ায় সমতায় ফেরে রোমা।

ম্যাচের ২৫তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় অতিথিরা। লিভারপুলের নেয়া কর্নার শ্যুটকে ক্লিয়ার করতে গিয়ে জেকোর হেডে উল্টো বল চলে যায় প্রতিপক্ষের পায়ে। এমন সুবিধাজনক জায়গায় বল পেয়ে কোনো ভুল করেনি ডাচ মিডফিল্ডার উয়িজনালডম। তার গোলের সুবাদে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় অতিথিরা। ততক্ষণে রোমার ফাইনাল খেলার স্বপ্ন প্রায় ধূলিস্মাৎ। কারণ তখন দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৩ গোলে এগিয়ে ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী লিভারপুল।

তবে তখনও হাল ছাড়েনি রোমা। তারা একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছিল লিভারপুলের গোলমুখে তবে প্রথমার্ধে আর কোনো গোলের দেখা পায়নি কেউই।

তাই ২-১ গোলে এগিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে ক্লপ বাহিনী।

দ্বিতীয়ার্ধ

প্রথম লেগ ও দ্বিতীয় লেগের প্রথমার্ধ মিলিয়ে ৭-৩ গোলে এগিয়ে লিভারপুল তাই দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ধীরে সুস্থে খেলার মানসিকতা নিয়েই মাঠে নেমেছিলে ক্লপ বাহিনী। তবে এটা হিতে বিপরীত হয় তাদের জন্য। রোমা তখন আহত সিংহের মত আক্রমণের পর আক্রমণ করে যাচ্ছিল লিভারপুলের গোল মুখে। ম্যাচের ৫২ মিনিটে এল শারাওয়ীর শ্যুট ঠেকিয়ে দেন লিভারপুলের গোলকিপার লরিস। তবে বল তালুবন্দি করতে না পারায় বল চলে যায় রোমার আক্রমণভাগের ফুটবলার জেকোর কাছে। এবার তার শ্যুটের কাছে পরাস্ত লিভারপুলের জার্মান গোল কিপার। এই গোলের পর পরই বেশ কিছু ভালো সুযোগ পেয়েছিল স্বাগতিকরা। তবে তার একটিও কাজে লাগাতে পারেনি। উল্টো, ৬৬ মিনিটে সহজ সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শ্যুট নিয়ে স্তাদিও অলিম্পিকোতে উপস্থিতদের হতাশ করে রোমার বসনিয়ান স্ট্রাইকার জেকো। ৮০ মিনিটে আবারও সুযোগ পান জেকো। তবে তার জোরালো শ্যুট দক্ষতার সাথেই রুখে দেন লরিস।

ম্যাচের ৮৬ মিনিটে রোমার ডিফেন্ডার কোলারভের পাসে গোল করেন নাইঙ্গোলান। লিভারপুলের প্রথম গোলটি তার ভুল পাসে হয়েছিল, এবার গোল করে যেন তার প্রায়শ্চিত্ত করলেন। তখন দুই লেগ মিলিয়ে লিভারপুলের চাইতে মাত্র ২ গোলে পিছিয়ে রোমা। অতিরিক্ত মিনিটে ম্যাচে রোমাঞ্চের নতুন মাত্রা যোগ করেন নাইঙ্গোলান।ম্যাচের অতিরিক্ত মিনিটে লিভারপুল ডিফেন্ডার ক্লাভান ডি বক্সের মধ্যে বাজে ট্যাকল করায় পেনাল্টি পায় রোমা। আর পেনাল্টি থেকে গোল করেন নাইঙ্গোলান। তখন রোমা দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলে পিছিয়ে। তবে ম্যাচের একদম শেষ মুহুর্তে আর নতুন করে ম্যাচের রূপ বদলাতে পারেনি রোমা। তাই শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় লেগে ৪-২ গোলে জয় পেলেও দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলে হেরে সেমি ফাইনাল থেকে বিদায় নিল রোমা।

আর অন্যদিকে ১১ বছর পর সালাহ, ফিরমিনহো, মানে দের হাত ধরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুল।

২৬ মে ইউক্রেনের কিয়েভে ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে অল রেডসরা।

ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ : নাইঙ্গোলান (রোমা)