রিয়াল মাদ্রিদ ২-২ বায়ার্ন মিউনিখ
বেনজেমা ১১’, ৪৬’ কিমিচ ৩’, হামেস ৬৩’
বার্নাব্যুতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ২-২ গোলে ড্র করেছে রিয়াল-বায়ার্ন। স্নায়ুক্ষয়ী এ ম্যাচে ৩ মিনিটেই কিমিচের গোলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। ১১ মিনিটে বেনজেমার গোলে সমতা ফেরানো রিয়াল বিরতিতে যায় ১-১ গোলের সমতায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই উলেরিখের ক্ষমার অযোগ্য ভুলে রিয়ালকে এগিয়ে নেন বেনজেমা। হামেস রদ্রিগেজ বায়ার্নকে সমতায় ফেরালেও এরপর আর গোলের দেখা পায়নি কেউই। প্রথম ম্যাচে জয়ের সুবাদে ৪-৩ গোলের অ্যাগ্রিগেটে কিয়েভ যাত্রা নিশ্চিত করল রিয়াল। হাতছানি টানা তৃতীয় শিরোপার। আশ্চর্যজনক ভাবে ম্যাচের নায়ক মৌসুমজুড়ে ফ্লপ নাভাস এবং বেনজেমা।
• আউট ফিল্ড প্লেয়ার হিসাবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়লেন রোনালদো
• আজকে দুই গোল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের তালিকায় ৫ম স্থানে উঠে আসলেন বেনজেমা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার গোল সংখ্যা এখন ৫৪
লাইন-আপ :
রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৪-২)
নাভাস, লুকাস ভাস্কুয়েজ, ভারান, রামোস, মার্সেলো, অ্যাসেন্সিও, মদ্রিচ, কোভাচিচ, ক্রুস, বেনজেমা, রোনালদো
সাব : বেনজেমা-বেল, কোভাচিচ-কাসেমিরো, অ্যাসেন্সিও-নাচো
বায়ার্ন মিউনিখ (৪-৪-১-১)
উলরিখ, আলাবা, হামেসল, সুলে, কিমিচ, রিবেরি, থিয়াগো, তোলিসো, মুলার, হামেস, লেওয়ানডস্কি
সাব : তোলিসো-ওয়াগনার, হামেস-মার্টিনেজ
প্রথমার্ধ
সেমির বাধা পেরিয়া ফাইনাল যাত্রা নিশ্চিত করতে যেমন শুরু প্রয়োজন ঠিক তেমন শুরুই করেছিল বায়ার্ন। তোলিসোর ক্রস ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়ে রিয়াল ক্যাপ্টেন রামোস বল তুলে দেন কিমিচের পায়ে। হেলায় পাওয়া সুযোগ হাতছাড়া করেননি কিমিচ। গত ম্যাচের দেজা ভ্যুই যেন দেখা গেল। বিদ্যুত গতির সে শ্যুট আটকানোর ক্ষমতা নাভাসের ছিল না। শুুরুতেই কাঙ্খিত গোল পেয়ে রিয়ালের ওপর যেন ঝাপিয়ে পড়ে বায়ার্ন। সেমি স্নায়ুর যে পরীক্ষা নেয় তা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল রিয়ালের রক্ষণ দেখে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব, সাথে তীব্র গতির বায়ার্ন। নাভিশ্বাসই যেন উঠিয়ে ছেড়েছিল জিদান শিষ্যদের। এরই মাঝে পাল্টা একটি আক্রমণ থেকে রিয়ালকে সমতায় ফেরান মৌসুম জুড়ে সমালোচকদের শানিত জিহ্বায় ক্ষতবিক্ষত বেনজেমা। কোভাচিচের চমৎকার সুইচ দারুণভাবে নিজের দখলে নিয়ে মার্সেলোর বাড়ানো ক্রসে মাথার ছোয়ায় জাল খুঁজে নিতে সামান্য সমস্যাও হয়নি বেনজেমার। এরপরের সময়টা বায়ার্নের তীব্র গতির প্রেসিং ফুটবলের বিপরীতে রিয়ালের কাউন্টারের লড়াই। আক্রমণের পর আক্রমণের ঢেউ তোলা বায়ার্ন এগিয়ে যেত বেশ কয়েকবারই। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে লেওয়ানডস্কির শ্যুট নাভাস ফিরিয়ে দিলে একদম ফাকা পোস্ট পেয়েও জালে বল জড়াতে ব্যর্থ হন হামেস রদ্রিগেজ। ওইরকম জায়গা থেকে গোল করার চেয়ে না করাটাই বরং কঠিন। আর হামেস কঠিনেরেই ভালোবেসে অবিশ্বাস্যভাবে বল পাঠালেন বারের ওপর দিয়ে। প্রথমার্থের এরপরের সময়টুকু কেটেছে বায়ার্নের আক্রমণেই। প্রথমার্ধে বায়ার্ন কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ সময় বল পায়ে রেখে রিয়ালের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে মোট ১১টি শ্যুট নিয়েছে বাভারিয়ানরা। যার মধ্যে অন টার্গেট ছিল চারটি, রিয়ালের রক্ষণে প্রতিহত হয়েছে আরো চারটি শ্যুট। কর্ণার ছিল তিনটি। বিপরীতে রিয়াল মাত্র পাঁচটি শ্যুটই নিতে সক্ষম হয়েছে বায়ার্নের পোস্টে।
দ্বিতীয়ার্ধ
এটিকে একবাক্যে বললে নাভাস বনাম বায়ার্নের আর্ধ বলা যায়। প্রথমার্ধে তিনটি সেভ করা এই কোষ্টারিকান দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন বায়ার্ন আক্রমণ প্রতিহত করে। দ্বিতীয়ার্ধে আরো পাঁচটি সেভের সাথে পাঞ্চ করেছেন তিনটি। ৫১ মিনিটে আলাবার শ্যুট, ৬০ মিনিটে হামেলস এর লো ক্রস, ৭৪ মিনিটে তোলিসোর শ্যুট, ৯০ মিনিটে থিয়াগোর ডেলিভারিতে চমৎকার পাঞ্চ, ৯৩ মিনিটে আরো একবার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে রক্ষা করেছেন রিয়ালকে। মৌসুমজুড়ে তো বটেই গেল ম্যাচেও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন এই কোষ্টারিকান গোলরক্ষক। সমস্ত সমালোচনার জবাব দেয়ার জন্য যেন বেছে নিয়েছিলেন ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চকেই। সন্দেহ নেই নাভাসের হাতজোড়াই নিশ্চিত করেছে রিয়ালের কিয়েভ যাত্রা। তবে শুধু নাভাস বন্দনা করলে অন্যায়ই হবে। সমালোচনার জবাব দেয়ার জন্য এদিন মুখিয়ে ছিলেন আরেকজন, করিম বেনজেমা। তোলিসোর ব্যাকপাসে বিভ্রান্ত উলেরিখের হাস্যকর ভুলের ফায়দা নিতে সামান্য ভুলও করেননি এই ফরাসি তারকা। ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থেকে রিয়ালকে এনে দিয়েছিলেন লিড। ৭২ মিনিট মাঠে ছিলেন, এবং প্রাণ হয়েছিলেন রিয়ালের বেশ কয়েকটি আক্রমণের। তিনি উঠে যাবার পরই মূলত প্রাণ হারায় রিয়াল। তার বদলে নামা বেল বলতে গেলে কিছুই করতে পারেননি। এর মাঝে ৬৩ মিনিটে হামেস গোল করে বায়ার্নের স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছিলেন। সুলের নেয়া শ্যুট ডিফ্লেক্টেড হয়ে হামেসের পায়ে পৌছালে পোস্ট খুঁজে নিতে সামান্য সমস্যাও হয়নি এ কলম্বিয়ানের। তবে তার আগেই রিয়ালের স্কোর ৩-১ করার সুযোগ পেয়েছিলেন রোনালদো। অ্যাসেন্সিওর চমৎকার লো ক্রস অবিশ্বাস্যভাবে বারের ওপরে মারেন তিনি। পুরো ম্যাচে বলতে গেলে নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন দ্য বেস্ট। এ জয়ে অসাধারণ এক কীর্তি গড়লেন জিদান। এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক-আউট পর্বে তাকে কেউ নক-আউট করতে পারেনি। অপরদিকে ম্যাচ শেষে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হবে বায়ার্ন কোচ ইয়ুপ হেইঙ্ককে। গোলের জন্য যখন দল মরিয়া তখন দারুণ খেলা হামেসকে তুলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মার্টিনেজকে কেন নামালেন তিনি? পরিকল্পনা যাই থাকুক, তা যে কাজে আসেনি সেটি তো ম্যাচ শেষেই স্পষ্ট।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ)