বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সম্মেলনে কোটা সংস্কার নিয়ে ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোটা ছাত্রদের বিষয় না। এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। ছাত্ররা কোটা ব্যবস্থা বাতিল চেয়েছে, বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে আলোচনার কী আছে?
সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় এবং যেদিন প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল ঘোষণা দেন সেদিন থেকেই আন্দোলনকারীরা বলে আসছেন তাদের দাবি কোটা বাতিল নয় বরং কোটা সংস্কার। আজ সংবাদ সম্মেলনে কোটা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী একবারও সংস্কার শব্দটি উল্লেখ না করে বাতিল করার কথাই বলেছেন। এবং এও বলেছেন, বাতিল চেয়েছে, বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী কয়েকজন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী আগের অবস্থানই ব্যক্ত করেছেন এবং আমাদের আন্দোলনটা যে বাতিল নয় বরং সংস্কারের তা ভুলে গেছেন। আমরা আশাবাদী হওয়ার মতো কোন ব্যাপার দেখতে পাচ্ছি না। আন্দোলনকারীদের ছবি নিয়ে রাখার কথা বলায় আমরা এ নিয়ে আতঙ্কিত বোধ করছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্ররা দাবি করেছে, সেটি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন হা-হুতাশের কী আছে?’
প্রধানমন্ত্রী এও উল্লেখ করেন, জেলা কোটাও বাতিল হয়ে গেছে। এখন পিছিয়ে পড়া বলে কেউ অভিযোগ করতে পারবে না। আন্দোলনের সময় অনেকের ছবি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, এখন কেউ এসে পিছিয়ে পড়া হিসেবে চাকরি না পাওয়ার জন্য কান্নাকাটিও করতেও পারবে না।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জিয়াউর রহমান যদিও নিজে মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু অবৈধভাবে সরকার গঠন করেছিল। কাদের নিয়ে সরকার গঠন করেছিল? যারা স্বাধীনতাবিরোধী ও জাতির পিতার হত্যাকারী তাদের নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। ওই সময় অনেক অফিসার ভয়ে মুক্তিযুদ্ধের নামটাও নিত না? কত শতাংশ তখন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছে?
শেখ হাসিনা বলেন, কোটা নিয়ে নানা কথাবার্তা বলা হয়েছে, ব্যঙ্গ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমরা অনেক দেশ থেকে এই ধরনের আসামি এনে থাকি। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তার তো নানা ধরনের অপরাধ। নিশ্চয় এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত নিয়ে আসব।
তারেক রহমানের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে হলে তাকে পাসপোর্ট সারেন্ডার করতে হয়। এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিএনপি মনে করে সবচেয়ে জনপ্রিয় লোক। তারা লোক খুঁজে পেল না? সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চেয়ারম্যান করা হলো।
উল্লেখ্য, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে গত মাসের ১৫ তারিখে দুদিনের সফরে সৌদি আরব যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ‘গালফ শিল্ড-১ নামে একটি যৌথ সামরিক মহড়ার কুচকাওয়াজ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
এরপর সেখান থেকে কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের বৈঠকে (সিএইচওজিএম) যোগ দিতে যুক্তরাজ্য যান প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে আট দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে ২৩ এপ্রিল দেশে ফেরেন তিনি।
এর তিন দিন পর ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গ্লোবাল সামিট অন উইমেন’ সম্মেলনে যোগ দিতে অস্ট্রেলিয়া যান। এই সম্মেলনে নারী নেতৃত্বে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। তিন দিনের অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে রোববার মধ্যরাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।