আসছে ফুটবল বিশ্বকাপ। উন্মাদমায় মত্ত পৃথিবীর কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী মানুষ। আগ্রহের কমতি নেই আমাদের দেশের ফুটবল ভক্তদের মাঝেও। বিশ্বকাপের ময়দান থেকে যোজন যোজন দূরে থাকলেও ভক্তকুলের মন পড়ে থাকবে ময়দানেই। সবাই যার যার পছন্দের দলের সমর্থন দিবে, দালানে দালানে লক্ষাধিক পতাকা উড়বে। সবাই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মান, স্পেন নিয়ে মেতে থাকলেও কারো ছাদেই হয়ত কোন মুসলিম দেশের পতাকা থাকবে না। আমরা হয়তো খেয়াল রাখবো না কয়টা মুসলিম দেশ এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে বা এসব দেশের খেলোয়াড় কারা। এদের খেলায় হয়তো থাকবে না জার্মান খেলোয়াড়দের মতো গতি বা আর্জেন্টিনার মত শৈলী বা ব্রাজিলের মত ছন্দ। এদের দলে মেসি, রোনালদো, নেইমারের মত খেলোয়াড় নেই; জিততে হয়তো পারবে না বিশ্বকাপ। কিন্ত সালাহ, বেনেশিয়া, সাদিও মানেরা আপনাদের আশাহত করবে না সে বিষয়ে বাজি ধরতে পারেন। চলুন দেখে নেয়া যাক এবারের বিশ্বকাপে কোন দেশগুলো মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করবে।
তিউনিসিয়া
আফ্রিকান দেশ তিউনিসিয়ার ফুটবল ইতিহাস অনেক দিনের। ১৯৫৬ সালে স্বাধীন হওয়ার অনেক আগেই, ১৯২৮ সালে তিউনিসিয়ার আনঅফিসিয়াল ফুটবল দল গঠিত হয়। ১৯৫৭ সালে অফিসিয়ালি তিউনিসিয়ার ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হলেও প্রথম বিশ্বকাপের টিকিট পায় বিশ বছর পরে, ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপহ মোট পাঁচ বার বিশ্বকাপের বড় আসরে সুযোগ পেল দলটা। ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এবং বিশ্বকাপের প্রথম খেলায়ই তারা মেক্সিকোকে ৩-১ ব্যবধানে পরাস্ত করে নজরে পড়ে। কিন্ত সেখানেই থেমে যায় তারা। গ্রুপ পর্বে আর কোন খেলা জিততে না পেরে বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে। দীর্ঘ বিরতির পর আবার বিশ বছরের অপেক্ষার অবসান হলে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে সুযোগ মিলে তিউনিসিয়ার। এরপর ২০০২ এবং সবশেষ ২০০৬ সালের জার্মান বিশ্বকাপে খেলার পর আবার ছিটকে যায় ফুটবলের বড় এই আসর থেকে। তারা কখনোই গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে মেক্সিকোকে ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত করাই বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ অর্জন।
২০০৬ বিশ্বকাপের পর তাদের ফুটবলে ধ্বস নামায় ২০১০ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে জায়গা হয়নি তিউনিসিয়ার। আসন্ন বিশ্বকাপের দলে বেশ কয়েকজন তরুণ ফুটবলার ডাক পেয়েছে যাদের কাধে ভর করেই রাশিয়া বিশ্বকাপে চমক দেখানোর আশায় আছে কার্থেজের ঈগলেরা। তাদের মধ্যে আইমেন আব্দেননুর, আহমেদ আকাইসির মতো খেলোয়াড়রাই তিউনিসিয়ার মূল অস্ত্র। এখন দেখার পালা বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড ও পানামার সাথে খেলে গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করতে পারে কি না ‘জি’ গ্রুপে থাকা তিউনিসিয়ার তরুণরা।
কোচ : নাবিল মালুল
ফিফা র্যাঙ্কিং : ২৭তম
মরোক্কো
১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পায় মরোক্কো। তখন থেকেই ফুটবল বিশ্ব চেনে আফ্রিকার এই মুসলিম দেশটিকে। এর পরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়লেও ষোল বছর পর আবারো ফিরে আসে মেক্সিকো বিশ্বকাপেই। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তাক লাগিয়ে দেয় আফ্রিকার এই দেশটি। ইংল্যান্ড, পোল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে মরক্কো। শেষ খেলায় পর্তুগালকে ৩-২ গোলে হারিয়ে জায়গা করে নেয় বিশ্বকাপের শেষ ষোলতে। বিশ্বকাপে এটাই ছিল তাদের সর্বোচ্চ অর্জন। কিন্ত তার পরের বার জার্মান বিশ্বকাপে জায়গা না পেলেও ১৯৯৪ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নেদারল্যান্ডকে ২-১ গোলে পরাজিত করে আবারো চমক দেখায় অ্যাটলাসের সিংহরা। ৯৮-এর ফ্রান্স বিশ্বকাপেও সুযোগ পায় দলটি। সে বছর গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে ১ জয় ১ হার আর ১ ড্র নিয়ে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয় তারা। দুই দশক পরে আবারো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ হাসিল করল মরক্কো। এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে স্পেন, পর্তুগাল ও ইরানের মুখোমুখি হবে দলটা।
চার বিশ্বকাপ পর সুযোগ পেয়েছে মরক্কো। দীর্ঘ এই সময়ে বেশ কিছু প্রতিভা দলে ভিড়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জুভেন্টাসের সেন্টার ব্যাক মেহেদি বেনাশিয়া। এছাড়া আরো রয়েছে আশরাফ হাকিমি, নাবিল দিরার, সুফিয়ান বুফেলরা।
কোচ : হারভে রেনার্ড
২০১৬ সালে দেশটির কোচের দায়িত্ব দেয়া হয় সাবেক ফরাসি ডিফেন্ডার রেনার্ডকে। ফরাসি এই কোচ এর আগে আফ্রিকার দুটি দেশকে ‘আফ্রিকা কাপ অব নেশনস’ শিরোপা জিতিয়েছেন।
ফিফা র্যাঙ্কিং : ৪০তম
মিশর
সাতবার আফ্রিকান কাপ অব নেশনস জিতলেও বিশ্বকাপে তেমন সফলতা নেই মিশরের। ১৯২১ সালে মিশরের ফুটবল ফেডারেশন স্থাপিত হওয়ার ১৩ বছর পর ১৯৩৪ সালে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় তারা। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে তিনবার বিশ্বকাপের টিকিট হাতে পায় ফারাওরা। ১৯৩৪ সালের ইতালি বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগ পেয়েই প্রথম রাউন্ডে হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দেয় পিরামিডের দেশ মিশর। কিন্ত তারপর একদম যেন মানচিত্রের বাইরেই চলে যায় তারা। ৪৫ বছর পরে ১৯৯০ বিশ্বকাপে সেই ইতালির মাটিতেই আবারো বিশ্বকাপে সুযোগ মিলতেই চমক দেখায় তারা। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস এবং আয়ারল্যান্ডের সাথে ড্র করে এবং শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হয় মিশর। আবার দীর্ঘ ২৮ বছর বিরতি দিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপের টিকিট পায় ‘দ্য ফারাও’ খ্যাত মিশর ফুটবল দল। মাঝে ২০১০ সালে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস জিতলেও বিশ্বকাপের দরজা বন্ধই ছিল তাদের জন্যে।
এবারের বিশ্বকাপে স্বাগতিক দেশ রাশিয়াসহ উরুগুয়ে সৌদি-আরবের সাথে ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে মিশর। বর্তমানে তাদের দলে একাধিক তারকা খেলোয়াড় আছে। মিশরের বিভিন্ন লিগে দ্যুতি ছড়ানো কয়েকজন ফুটবলার ছাড়াও রয়েছে সালাহর মত বিশ্ব মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ানো একাধিক তরুণ। বলাই যায়, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে নজরে থাকবেন মিশরের মোহাম্মদ সালাহ, রামাদান সভি, আহমদ এল নেনি, আহমাদ এল মোহাম্মাদি, মাহমুদদের মত কয়েকজন ফুটবলার।
কোচ : হেক্টর কুপার
২০১৫ সালে মিশরের কোচের দায়িত্ব পান আর্জেন্টিনিয়ান হেক্টর কুপার। কোচিং ক্যারিয়ারে ভ্যালেন্সিয়া, ইন্টার মিলান, রিয়াল বেতিসের মতো ক্লাবে কোচের দায়িত্বে ছিলেন অভিজ্ঞ এই কোচ।
ফিফা র্যাঙ্কিং : ৩১তম
নাইজেরিয়া
আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়াকে বলা যায় বিশ্বকাপে সবচেয়ে ধারাবাহিক। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে প্রথমবার নাম লেখানোর পর থেকে এ পর্যন্ত সাত বিশ্বকাপের ছয়টিতেই সুযোগ পায় তারা। একমাত্র আফ্রিকান দেশ হিসেবে ২০১০, ২০১৪ এবং ২০১৮ তিন বিশ্বকাপের টিকিটই আসে আফ্রিকান ঈগলদের হাতে। ৯৪ এর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে গ্রুপ পর্বেই সবাইকে চমকে দেয় দেশটি। তিন ম্যাচে দুই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের প্রথম আসন দখল করে দ্বিতীয় রাউন্ডে যায় নাইজেরিয়া। সে বছর নকআউটে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ইতালি ও নাইজেরিয়ার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই; তবে শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেন নাইজেরিয়া। এরপর ৯৮’র ফ্রান্স বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত নাইজেরিয়াকে দেখে বিশ্ব। প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত স্পেনকে মাটিতে নামায় ৩-২ গোলে হারিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে বুলগেরিয়াকেও হারিয়ে দেয় তারা। শেষ ম্যাচে প্যারাগুয়ের সঙ্গে আর পেরে না উঠলেও নিশ্চিত করে নকআউট পর্ব। কিন্ত ডেনমার্কের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে তারা। এরপরে ২০০২ ও ২০১০ বিশ্বকাপে সুযোগ হলেও কোন খেলা জিততে পারেনি নাইজেরিয়া। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে বেশ কষ্ট করেই গ্রুপ পর্ব পার করে নাইজেরিয়া, কিন্ত নকআউট পর্বে ফ্রান্সের সাথে হেরে বিদায় নেয় দেশটি। ২০১৮ বিশ্বকাপেও ভালো করার ইচ্ছা নাইজেরিয়ানদের। ইতোমধ্যে বাছাইপর্বে দারুণ খেলা দেখিয়েছে আফ্রিকান দেশটি। জাম্বিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেব এবং সব মিলিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট হাতে পায় তারা।
বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার পরে আর্জেন্টিনাকে প্রীতি ম্যাচে হারিয়ে দারুণ প্রতিশ্রুতি দেখায় আফ্রিকান দলটি। লিলে’র সাবেক গোলকিপার ভিনসেন্ট এনাইমা কেবল জাতীয় দল নয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও পরিচিত। এছাড়া নাইজেরিয়ার দলে এমন কিছু ফুটবলার আছেন, যারা বিশ্বের নামিদামি ক্লাবে খেলেন। চেলসির সাবেক মাঝমাঠের তারকা জন ওবি মিকেল নাইজেরিয়ার বর্তমান দলপতি। এছাড়া ইন্টার মিলান, তুরিনে খেলা জোয়েল ওবি, লিসেস্টারের কেলেচি ও এনদিদি, চেলসির ভিক্টর মজেস, আর্সেনালের আইওবিদের মত তরুণদের নিয়ে গড়া নাইজেরিয়া দলটি এবার চমক দেখালে অবাক হবেন না যেন।
কোচ : গেরনট রোর
তিনবারের আফ্রিকান নেশনস কাপ জয়ী দলটির বর্তমান কোচ, একসময়ের বায়ার্ন তারকা গেরনট। তার তত্ত্বাবধানে নাইজেরিয়া রয়েছে দারুণ ছন্দে। দেখা যাক আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়াদের মত হ্যাভিওয়েট দের সাথে গ্রুপ ‘ডি’ তে কি করতে পারে সুপার ঈগলরা।
ফিফা র্যাঙ্কিং : ৫০তম
সেনেগাল
২০০২ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে জায়গা পায় সেনেগাল এবং প্রথমবারেই হতভম্ভ করে দেয় ফুটবল বিশ্বকে। ওই আসরের গ্রুপ পর্বে ফ্রান্সকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় দেশটি। পরের দুই ম্যাচে ডেনমার্ক, উরুগুয়ের সঙ্গে ড্র করে চলে যায় নকআউট পর্বে। নক আউটে সুইডেনকে ২-১ হারিয়ে প্রথম সুযোগেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে চলে যায় সেনেগাল। বিশ্বকাপে সেনেগালের অর্জন বলতে ২০০২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালই। তুরষ্কের সাথে অতিরিক্ত সময়ের খেলায় হেরে ওইবার বিশ্বকাপের যাত্রা থামে ‘লায়ন্স অফ তেরাঙ্গা’র। এরপর দীর্ঘদিন বিশ্বকাপে দেখা যায়নি সেনেগালকে। অবশেষ দীর্ঘ ১৬ বছর পর রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি।
হঠাৎ করেই প্রতিভাত হয়ে আবার হঠাতই যেন হারিয়ে যায় সেনেগাল। ২০০২ সালের পর ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে জায়গা হলো সেনেগালের। বর্তমান দলে বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার আছেন যারা রাশিয়ায় ঝলক দেখাতে পারেন। মৌসা সো, ডিউফ, সাদিও মানের মতো তারকারা প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখন দেখার পালা গ্রুপ ‘এইচ’ হতে জাপান, কলম্বিয়া ও পোল্যান্ডের সাথে কতটুক পেরে উঠতে পারে আফ্রিকার সিংহরা।
কোচ : আলিও সিসে
২০০২ সালের বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া দলের অধিনায়ক আলিও সিসেই এখন সেনেগাল দলের কোচ। ২০১৫ সালের পর থেকে সেনেগালকে কোচিং করাচ্ছেন তিনি।
ফিফা র্যাঙ্কিং : ২৩তম
সৌদি আরব
এবার নিয়ে পাঁচ বার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেল সৌদি আরব। ১৯৯৪ থেকে শুরু করে ২০০৬ পর্যন্ত টানা চার বিশ্বকাপে খেললেও তার পরবর্তী দুই বিশ্বকাপ দেখতে হয়েছে দর্শক হয়েই। ১২ বছর পর আবার রাশিয়া বিশ্বকাপে সুযোগ পেল ‘দ্য ফ্যালকন’রা। ১৯৯৪ সালে সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথম অভিষেক হয় সৌদি আরবের এবং প্রথমবারই বাজিমাত করে দেশটি। গ্রুপ পর্বে নেদারল্যান্ডস ও মরক্কোকে হারিয়ে নকআউট পর্বে চলে যায় আরব দেশটি। ১৬ দলের লড়াইয়ে সুইডেনের কাছে ৩-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়। এরপর ১৯৯৮, ২০০২ এবং ২০০৬ তিন বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্ব থেকেই ফিরে আসতে হয় সৌদি আরবকে। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় তারা। অবশেষে জাপানকে ১-০ হারিয়ে ১২ বছর পর বিশ্বকাপে বিশ্বকাপের টিকিট কাটল সৌদি আরব।
সর্বশেষ দুই বিশ্বকাপে ছিল না সৌদি আরবের নাম। ২০০৭ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেও বঞ্চিত হয় শিরোপা ঘরে তোলা থেকে। দিন যত যায়, ততই যেন ধার কমতে থাকে সৌদি ফুটবলের। শেষমেশ রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে স্বস্তিতে দেশটির ফুটবলপ্রেমীরা। সবাই মনেপ্রাণে চাচ্ছে এবার অন্তত ভালো কিছু করবে সৌদি। বর্তমান দলে বেশ কিছু ফুটবলার আছেন– ফাহাদ আল মুয়াল্লাদ, ইব্রাহিম মোহাম্মদ, দাওসারিরা আলো ছড়াতে পারেন রাশিয়া বিশ্বকাপে।
কোচ : এদগার্দো বাউজা
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সাবেক কোচ এদগার্দো বাউজা সৌদি আরবের প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন। দেখা যাক ‘এ’ গ্রুপের অন্য তিন দল রাশিয়া, মিশর ও উরুগুয়ের সাথে কেমন আলো ছড়ায় আরবরা।
ফিফা র্যাংকিং : ৬৩তম
ইরান
১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ দিয়ে বড় মঞ্চে পদার্পন করে ইরান। এখন পর্যন্ত মোট পাঁচবার বিশ্বকাপের টিকিট হাতে পেয়েছে তারা। ১৯৭৮, ১৯৯৮, ২০০৬, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ নিশ্চিত করে ‘টিম মেলি’ খ্যাত ফুটবল শক্তি। কিন্ত বিশ্বকাপে যুগোস্লাভিয়াকে হারানো ছাড়া তেমন অর্জন নেই তাদের। ৭৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে ভাল করতে পারেনি তারা। গ্রুপ পর্বে একটা জয়ও পায়নি ইরান। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচেই যুগোস্লাভিয়াকে হারিয়ে উৎসবে মাতে দেশটি। বিশ্বকাপের অর্জন বলতে এটুকুই। এরপর ২০০৬ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে জায়গা পেলেও গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচেই জয়ের স্বাদ পায়নি ইরান।
গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সাথে দারুণ লড়াই করে নিজেদের জাত চিনিয়েছিল তারা। ২০১৫ সালের এশিয়ান কাপেও ইরান ভাল করে। সে বছর ইরানের হয়ে আলো ছড়ান আসকান ও রেজা। রাশিয়া বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর অঘটনের কারণ হতে পারে ইরান।
কোচ : কার্লোস কুইরোজ
পর্তুগিজ কার্লোস কুইরোজ ইরানের বর্তমান কোচ। অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচ থাকাকালীন টানা দুইবার পর্তুগিজ যুবারা বিশ্বকাপ মুকুট উঁচিয়ে ধরে, যা কার্লোসের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এছাড়া রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেও কোচিং করান এই পর্তুগিজ। সবমিলে বলা যায় একজন ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ কোচের ছায়ায় রাশিয়া বিশ্বকাপে যাচ্ছে ইরান। দেখার পালা কোচের নিজ দেশ পর্তুগালের সাথে কেমন করে ইরান। এছাড়া গ্রুপ ‘বি’তে আরো রয়েছে মরোক্কো ও স্পেন।
বর্তমান ফিফা র্যাংকিং : ৩২তম