দেপোর্তিভো ২ – ৪ বার্সেলোনা
পেরেজ (৪০”) কৌতিনহো (৭”)
চলাক (৬৪”) মেসি (৩৮”, ৮২”, ৮৫”)
চার ম্যাচ হাতে রেখেই লিগ জয় নিশ্চিত করল বার্সেলোনা। সিজনের শুরু থেকেই লিগে অপ্রতিরোধ্য ছিল ভালভার্দের শিষ্যরা। গত সপ্তাহে কোপা দেল রে জয়ের এক সপ্তাহ পর সিজনের দ্বিতীয় ট্রফি জয় নিশ্চিত করলো তারা। স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ী এবং বার্সেলোনার বর্তমান অধিনায়ক ইনিয়েস্তা সদ্যই বার্সেলোনা ছেড়ে চায়নিজ ক্লাবে পাড়ি দেয়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। এমন সাফল্য নিয়ে ক্লাব এবং নেতৃত্ব ছাড়ার সৌভাগ্য কয়জন ফুটবলারের ভাগ্যেই জোটে?
তবে বার্সেলোনার এ সিজনে সকল সফলতাই ফিকে হয়ে গেছে ইনিয়েস্তার বিদায়ের কাছে। কারণ কাতালান এই ক্লাবটি বেশ ভালো করেই জানে ইনিয়েস্তার অভাব পূরন করা বেশ কঠিন কাজ। ইনিয়েস্তা তাদের মাঝ মাঠে একমাত্র প্রাণ সঞ্চারক ও একজন সফল দলনেতা ছিলেন।
★ লা লিগা ইতিহাসে এক সিজনে টানা ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত থেকে লিগ জয়ের রেকর্ড গড়ল বার্সেলোনা।
★ বার্সেলোনা তাদের সর্বশেষ ২১টি অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত ছিল এবং প্রতিটি ম্যাচেই গোল পেয়েছে।
★ লিওনেল মেসি দেপোর্তিভোর বিপক্ষে ১৭ ম্যাচে ২০ গোল করেছেন।
লাইন আপ
দেপোর্তিভো লা করুনা (৪-১-২-১-২)
মার্টিনেজ, ইয়ুয়ানফ্রেম, আলবেনতোসা, ফাবিয়ান, লুইসিনহো, দেহলি, উলিহের্মে, বোর্গেস, চলাক, পেরেজ এবং ভাল্লে।
সাব : উলিহের্মে-মুনতারি, ভাল্লে-কারতাবিয়া, বোর্গেস-আন্দান।
বার্সেলোনা (৪-৪-২)
স্টেগেন, সেমেদো, পিকে, উমতিতি, আলবা, কৌতিনহো, রিকিতিচ, বুস্কেটস, দেম্বেলে, সুয়ারেজ এবং মেসি।
সাব : দেম্বেলে-ডেনিস, কৌতিনহো-পাউলিনহো, রিকিতিচ-ইনিয়েস্তা।
প্রথমার্ধ
ম্যাচের শুরুতেই শিরোপা জয়ের সহজ সমীকরণ হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। অ্যাওয়ে ম্যাচ হলেও ম্যাচ নিজেদের আয়ত্ত নিতে বেশি সময় লাগেনি ভালভার্দের শিষ্যদের। ম্যাচের সপ্তম মিনিটে ডি বক্সের ভেতরে দেম্বেলের বাড়ানো পাস থেকে কোনাকুনি শ্যুট করে দলকে প্রথম লিড এনে দেয় বার্সেলোনার ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কৌতিনহো। তার ১০ মিনিট পরেই গোল করে স্বাগতিকদের সমতায় ফেরায় দেপোর্তিভোর স্প্যানিশ স্ট্রাইকার পেরেজ। তবে গোল করার বেশ কিছুক্ষণ পর রেফারি গোলটি অফ সাইড বলে বাতিল করেন। এতে দেপোর্তিভের ফুটবলাররা কিছুটা হতাশ হলেও তারা ছন্দে ফিরে বার্সেলোনার বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। ম্যাচের ৩০ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর আরেকটি সুযোগ পেয়ে যায় অতিথিরা। ডি বক্সের একদম সামনে মেসিকে ফাউল করায় ফ্রি কিক পায় বার্সেলোনা। তবে মেসির নেয়া দূর্দান্ত ফ্রি কিকটি বেশ দক্ষতার সাথে ঠেকিয়ে দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করে দেপোর্তিভোর গোলকিপার মার্টিনেজ। তবে বেশিক্ষণ মেসিকে গোল শূন্য রাখতে পারেনি মার্টিনেজ। ম্যাচের ৩৮ মিনিটে লুইজ সুয়ারেজের উঁচু করে বাড়ানো পাসে ভলি করে চমৎকার একটি গোল করেন মেসি। এটি এ সিজনে লা লিগায় তার ৩০ তম গোল। লিগে এখন পর্যন্ত তিনি এ সিজনের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার।
মেসির গোলের দুই মিনিট পরেই লুকাস পেরেজের নেয়া জোরালো শ্যুটে পরাস্ত হন বার্সার জার্মান গোলকিপার স্টেগেন। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে বার্সেলোনা। প্রথমার্ধে ৬৬ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল বার্সেলোনা। এ সময়ে ৪টি অন টার্গেট শ্যুট নিয়েছিল।
দ্বিতীয়ার্ধ
২-১ গোলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তেমন সুবিধা করতে পারছিল না বার্সেলোনা। বেশ কিছু আক্রমণ করলেও তা দেপোর্তিভোর রক্ষণের কাছেই রুখে যাচ্ছিল। এমন সময় ম্যাচের ৬৪ মিনিটে ভাল্লে ডান দিক দিয়ে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে আক্রমণে চলে যায় সেখানে সতীর্থ প্লেয়ার বোর্গেসকে বাড়িয়ে দিলে বোর্গেস সে বল পাস দেয় দেপোর্তিভের স্ট্রাইকার কোলাকের কাছে। কোলাক সেই পাস থেকে গোল করতে কোনো ভুল করেনি। ৬৪ মিনিটে ২-২ এ সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা। ম্যাচের ৮০ মিনিট পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচ ড্র হওয়ার সম্ভবনা উঁকি দিচ্ছিল দেপোর্তিভোর ফ্যানদের মনে। কিন্তুু তখনও মেসির জাদু দেখানো বাকি ছিল। ম্যাচের ৮২ মিনিটে লুইজ সুয়ারেজের বাড়ানো বল থেকে গোল করে দলের ব্যবধান বাড়ান আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। তার ৩ মিনিট পর আবারও লুইজ সুয়ারেজের দেয়া পাস থেকে গোল করে দলের জয় ও নিজের হ্যাট্রিক নিশ্চিত করেন মেসি।
আজকের ম্যাচে মেসির তিনটি গোলেই এ্যাসিস্ট করে এ্যাসিস্টের হ্যাট্রিক করেছে উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার লুইজ সুয়ারেজ।
ম্যাচের বাকি সময় আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-৪ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠে ছাড়ে ভালভার্দে বাহিনী।
এ জয়ের মধ্য দিয়েই ৪ ম্যাচ হাতে রেখেই ২০১৭/১৮ সিজনের লা লিগা জয় নিশ্চিত করল বার্সেলোনা।
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ : লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা)
ম্যাচ শেষে পয়েন্ট টেবিলের অবস্থান : আজকের ম্যাচে জয়ের মধ্য দিয়ে ৩৪ ম্যাচ শেষে ৮৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে বার্সেলোনা। অন্যদিকে ৩৫ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে আগামী সিজনে লা লিগা থেকে রেলিগেশন নিশ্চিত দেপোর্তিভো লা করুনার।