ইন্দোনেশিয়ার আলোচিত ১০ উৎসব

ইন্দোনেশিয়ার আলোচিত ১০ উৎসব

ইন্দোনেশিয়ার জনগণ খুবই উৎসব প্রিয়। এদেশে রয়েছে অসংখ্য উপজাতি, প্রত্যেক উপজাতির রয়েছে আলাদা আলাদা উৎসব। এছাড়া জাতীয় পর্যায়েও আয়োজন করা হয়ে থাকে বিভিন্ন উৎসব। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে এসব উৎসবে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। জবান এর পাঠকদের কাছে ইন্দোনেশিয়ার সেরা ১০টি আলোচিত উৎসবের পরিচিতি তুলে ধরা হল–

 

১. ইরাউ কার্তেনগারা উৎসব

‘ইরাউ’ হল একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব, যা প্রতি বছর ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব কালিমান্তান অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়। ইরাউ শব্দটি স্থানীয় ‘কুতাই’ ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ ভিড়, শোরগোল ও আনন্দময় পরিবেশ।

প্রায় ১০ লক্ষ বছর পূর্বে কুতাই অধিবাসীদের শক্তিশালী ‘কুতাই সাম্রাজ্য’ ছিল১‘। যদিও সেই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে গেছে, তবুও এখানকার অধিবাসীরা সেই সাম্রাজ্যের গৌরবকে স্মরণ করে এই উৎসবটির আয়োজন করে থাকে। বর্তমানে এই উৎসব জাতীয়ভাবে উদযাপিত হয়।

 

২. লিম্বাহ বালিম উৎসব

এই উৎসবটি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বালিম উৎসব সৌভাগ্যে ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

বালিম উপত্যকার আদিবাসীদের এই উৎসবে মূলত দুই গোত্রের মধ্যে প্রতীকী যুদ্ধ তুলে ধরে। উৎসবে অংশগ্রহণকারী আদিবাসীরা অস্ত্রসজ্জায় সজ্জিত হয়ে প্রতীকী যুদ্ধে মত্ত হয়।

তবে পর্যটকদের জন্য এটা এখন নিরাপদ উৎসব। এই উৎসবের প্রতিপাদ্য “ইয়াগোটেক হাবুলুক মোতোগ হানোরো”, যার অর্থ, ‘আগামী দিন আজকের দিন থেকে সুন্দর হওয়া উচিৎ’।

 

৩. পাসোলা

এই উৎসবটি ইন্দোনেশিয়ার সাম্বা অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়। সাম্বা দ্বীপে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এই উৎসব পালিত হয়।

পাসোলা একটি ঐতিহ্যবাহী যুদ্ধকে তুলে ধরে, যা ‘লেম্পার লেম্বিং’ নামে পরিচিত। এটাকে ঘোড়ার যুদ্ধ হিসাবেও অভিহিত করা যেতে পারে। এই উৎসব মূলত ফসলের ঋতুতে শুরু হয়।

এখানকার অধিবাসীদের বিশ্বাস, ‘নেইলি’ নামক এক দেবতা আছে। উৎসবের চলাকালে একদিন সকালে সূর্য উদিত হওয়ার সময়ে নেইলি পৃথিবীতে নেমে আসেন। তখন যদি তার শরীরে মোটা ও স্বাস্থ্যবান অবস্থায় থাকে, তবে তারা ধরে নেয়, এই বছর ভালো ফসল হবে। আর যদি পাতলা শরীরে আবির্ভূত হন, তবে তারা ধরে নেয়, এটি এই অঞ্চলের জন্য খারাপ ইঙ্গিত এবং সে বছর ফসল খারাপ হবে।

 

৪. ফাহমো উৎসব

ফাহামো হচ্ছে ‘নিয়াস’ উপজাতিদের এক ধরণের উচ্চলম্ফ প্রতিযোগিতা। উঁচু করে সাজানো পাথর লাফ দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। এই উৎসবটি অংশগ্রহণকারীদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

এই উৎসবকে ঘিরে একটি মজার ঐতিহ্য রয়েছে। যুবকগণ এই প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হলে তারা বিবাহের বয়সে উত্তীর্ণ ও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার যোগ্য হয়েছেন বলে বিবেচিত হন। যে পাথরের স্তুপ লাফিয়ে অতিক্রম করতে হয় তার উচ্চতা প্রায় ২ মিটার।

প্রতিযোগী যুবকগণ এ সময়ে নিয়াসদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করেন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে এটা খুবই উপভোগ্য খেলা। উৎসবের সময়ে প্রচুর মানুষ এটা দেখতে ভিড় জমায়।

 

৫. রামবু সলো উৎসব

রামবু সলো উৎসব সলো অঞ্চলের উৎসব নয় বরং এটা তানাহ তোরাজা অঞ্চলের উৎসব। এই উৎসব মূলত মৃত্যু বেক্তিকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। অভিজাত পরিবারের কেউ মৃত্যুবরণ করলে বা শক্তিমান ব্যক্তিদের সমাহিত করার সময়ে তাদের সম্মানে এই উৎসব আয়োজন করা হয়।

উৎসবে মহিষ ও শূকর জবাই করা হয়। যে যত বেশি অভিজাত তার জন্য তত বেশি সংখ্যক মহিষ ও শূকর জবাই করা হয়। সাধারণত দেখা যায় কয়েক ডজন মহিষ ও কয়েক’শ শূকর জবাই করা হয়। এ সময়ে গান বাজানো হয় এবং নৃত্য করা হয়। অতিথিদের মাঝে মাংস বিতরণ করা হয়।

 

৬. কমোদো উৎসব

ইন্দোনেশিয়ার কমোদো দ্বীপে এই উৎসব পালিত হয়। এই উৎসবে স্থানীয়রা তাদের শিল্প-সংস্কৃতি তুলে ধরে। স্থানীয়রা উৎসবের সময়ে তাদের তৈরি নানা জিনিসপত্র প্রদর্শনী করে। এই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ‘চাছি নৃত্য’। এই নৃত্য প্রচলিত নৃত্য থেকে ভিন্ন। এখানে ২ জন পুরুষ চাবুক ও ঢাল নিয়ে যুদ্ধে মত্ত থাকেন, যুদ্ধের তালে তালে নৃত্য করতে থাকেন। প্রতি বছর অসংখ্য বিদেশি পর্যটক এই উৎসব দেখতে ইন্দোনেশিয়ায় ভিড় জমান।

 

৭. তেলুক জাইলোলো উৎসব

জাইলোলো উৎসবের আরেক নাম হালমাহেরা উৎসব। উত্তর মালুকুর হালমাহেরা দ্বীপে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। অনুষ্ঠানে নানা ধরনের আয়োজন থাকে যেমন, গান, নাচ, খাবার প্রদর্শনী ইত্যাদি। তবে এসব নাচ-গানে স্থানীয় ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। এটি স্থানীয় মালুকু সরকারের সহযোগিতায় পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য আয়োজন করা হয়ে থাকে।

 

৮. সলো বাতিক উৎসব

সলি শহর মধ্য জাভায় অবস্থিত। সলিতে বাটিক সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রয়েছে। ‘বাটিক’ তাদের কাছে প্রতীকী ও আত্মপরিচয়মূলক শব্দ। সলি উৎসব মূলত স্থানীয়রা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও শক্তিশালী করতে আয়োজন করে থাকে। তারা এই উৎসবের মধ্য দিয়ে তাদের ঐতিহ্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে দিতে চায়। অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের ফ্যাশন শো।

 

৯. গ্রেবেগ মিলাদ উৎসব

জাভা ভাষায় ‘গ্রেবেগ’ শব্দের অর্থ ভিড় বা মানুষের সমাগম আর ‘মিলাদ’ বলতে স্থানীয় জাভা ক্যালেন্ডারের একটি বিশেষ দিন, যেদিন নবী মুহাম্মদ (সঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন। এই উৎসব ‘সেকাতেন’ নামেও পরিচিত।

দিনব্যাপী মিছিলের মাধ্যমে এই উৎসব পালিত হয়। একটি বিশেষ ধরণের গম্বুজ সদৃশ বস্তুকে তারা ধারণ করে মিছিল করেন। মিছিলের সাথে সাথে ‘গ্যামেলান’ বা বিশেষ ধরণের স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। দিন শেষে গ্রান্ড মসজিদে এসে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

এ সময়ে শহরের উত্তরে স্থানীয় পন্যের মেলা বসে। ইন্দোনেশিয়ার জাভায় এই অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে থাকে।

 

১০. বালি আর্ট উৎসব

ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম বৃহৎ উৎসব হচ্ছে বালি আর্ট উৎসব। এখানে ইন্দোনেশিয়ার আর্ট-কালচার তুলে ধরা হয়। এই উৎসবে প্রতি বছর প্রচুর বিদেশি পর্যটক ভিড় জমান।

এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ায় অনেক প্রথাগত ও ধর্মীয় উৎসব উদযাপিত হয়। প্রায় সব উৎসব তাদের ঐতিহ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। পর্যটকদের আকর্ষণ করাও তাদের উৎসবের অন্যতম কারণ।