দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন খালেদা জিয়া

দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন খালেদা জিয়া

সুচিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ক একটি নথি এখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আটকে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি।

পাশাপাশি, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত তিনজন চিকিৎসক আশঙ্কা করছেন যে, তিনি (খালেদা জিয়া) পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন এবং ভালো কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে অবিলম্বে চিকিৎসা না দেয়া হলে তার দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ আনেন। সেখানে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত তিন চিকিৎসকও বক্তব্য রাখেন। ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিশেষায়িত হাসপাতালে চেয়ারপাসনের চিকিৎসার জন্য একটি সুপারিশ আমরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। যতদূর জানতে পেরেছি ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আটকে রয়েছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। সরকার রীতিমত তাকে ইউনাইটেড কিংবা অ্যাপোলো হাসপাতালে পাঠাতে দেরি করছে’। চিকিৎসকদের মতামতের ভিত্তিতে তিনি জানান, ‘অবিলম্বে যদি তাকে কোন ভালো হাসপাতালে চিকিৎসা না দেয়া হয় তবে। তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর অবনতির দিকে চলে যাবে। আমরা পুনরায় সরকারকে তার সুচিকিৎসার জন্য আবেদন জানাচ্ছি’।

মির্জা ফখরুল সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকার দায়ী থাকবে এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমরা আশাবাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জেল কর্তৃপক্ষের সুপারিশ মতো আমাদের নেতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে’।

২০০৭ সালের ১/১১-র সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চোখের চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য চিকিৎসা না দেয়ার মতো ‘অসৎ’ কাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে এচাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘২২ এপ্রিল কারাগারে বৈঠককালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজি আশ্বাস দেন যে, ডাক্তারদের সুপারিশ অনুযায়ী যেখানে প্রয়োজন সেখানে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন। তবে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি’। তিনি আরও বলেন, ‘৭৩ বছর বয়সী অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা না দেয়া অমানবিক’।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গেছেন বিএনপির তিন নেতা। এই তিন নেতা হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান। আজ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান। এর আগে আরও দুদিন খালেদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন এই তিন নেতা। তবে, সে সময় তাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও প্রত্যেকের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জারিমানা করে রায় ঘোষণা করেন আদালত।

রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। প্রথম শ্রেণির কারাবন্দি হিসেবে বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন। কারাবন্দির পর থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপির নেতারা।