ঘটনাটি ১৯৩৭ সালের, চেলসি-চার্লটনের মধ্যকার বক্সিং ডে ম্যাচের; যে ম্যাচটি ঘন কুয়াশার কারণে ৬০ মিনিটেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। অথচ, ম্যাচ পরিত্যাক্ত হবার ২০ মিনিট পরেও চার্লটন গোলরক্ষক পোষ্টের নিচে ঠায় দাড়িয়ে ছিলেন গোল বাঁচানোর আশায়!
অদ্ভুত এই ঘটনা নিয়ে কুয়াশার মতোই ধোয়াশা আছে ফুটবল প্রেমীদের মনে। অনেকেরই জিজ্ঞাসা ঘটনাটি অদৌও সত্য কি না?
সূত্রমতে যে দুটি বিষয় জানা যায়, তা হলো এটি বক্সিং ডে ম্যাচ ছিলো না, ম্যাচটি হয়েছিল ক্রিসমাসের দিন। এবং চার্লটন গোলরক্ষক ২০ মিনিট না, বেকুব বনেছিলেন মিনিট পনেরোর মত।
আসলে কি ঘটেছিলো সে দিন? স্যাম বার্টমান যিনি সেদিন চার্লটনের গোলবারের নিচে ছিলেন নিজের আত্মজীবনিতেই পরিষ্কার করেছেন কুয়াশাচ্ছন্ন সে দিনটির কথা।
১৯৩৭ সালের ক্রিসমাসের সে দিনটিতে মুখোমুখি হয়েছিল ইংলিশ লিগের দুই ক্লাব চেলসি-চার্লটন। ১-১ গোলে যখন সময়তায় খেলা তখনই রেফারি ম্যাচ পরিত্যাক্ত করেন মাত্রাতিরিক্ত কুয়াশার কারণে। তবে, মজার বিষয় হচ্ছে রেফারির এ সিদ্ধান্ত বার্টম্যান পর্যন্ত পৌঁছোয় নি। খেলার শুরুর সাথে সাথেই ফুটবল প্রেমিদের মত কুয়াশাও দখল নেয়া শুরু করে মাঠের। এবং সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে তার মাত্রা। প্রথম দফায় রেফারি একবার যখন খেলা বন্ধ করেন, সেটি সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন বার্টম্যান। কিন্তু পুণরায় চালু হবার পরেই বাঁধে বিপত্তি।
চোখের সামনে থেকে আবছা অবয়বগুলো এক এক করে সরতে শুরু করলে আত্মশ্লাঘায় ভুগছিলেন বার্টম্যান, এই ভেবে যে তার সতীর্থরা চেলসিকে এতটাই চেপে ধরেছে যে, চার্লটনের গোল মুখে আর কেউ আসছে না। তিনি এই ভেবে দারুণ খুশি ছিলেন যে তার সতীর্থরা এতটাই ভালো খেলছে যে, চেলসি সামান্য সুযোগও পাচ্ছে না চার্লটনের অর্ধে আসার। নতুবা, একটি দুটি মুখ তো অন্তত দেখা যেত। সময় যায়, কেউই যখন আসে না; নিজ উদ্যোগেই বার্টম্যান কয়েকবার ডি বক্সের সামনে থেকে ঘুরে এসেছে মাঠের অপর প্রান্তের দৃশ্য দেখার আশায়। কিন্তু কুয়াশার মাত্রা আরো বাড়তে থাকায় চেলসির পোষ্ট তো দুর নিজের সামনের দৃশ্যই ঠিক মত দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি।
দীর্ঘক্ষণ পর যখন কুয়াশা কিছুটা পাতলা হয়ে এসেছে তখন বার্টম্যান যাকে দেখেছিলেন ঘুমের ঘোরেও সেটি আসা করেননি। না, চার্লটনের কোনো সতীর্থ না, চেলসির কোনো স্ট্রাইকারও না; তার সামনে তারই মত অবাক হয়ে দাড়িয়ে রয়েছেন একজন পুলিশম্যান। ভূত দেখার মত চমকে উঠে সে পুলিশ বার্টম্যানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ধরণীর কোন পাপের ফলে তিনি সেখানে দাড়িয়ে রয়েছেন? ম্যাচ আরো আধা ঘন্টা আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে! পুরো মাঠ শূণ্য!
বিস্ময়ে বিমূড় বার্টম্যান যখন ড্রেসিংরুমে পৌছান ততক্ষণে তার সতীর্থরা শাওয়ার শেষে পোশাক পরিধানে ব্যস্ত। আর বার্টম্যান বেচারা এতটা সময় অদৃশ্য শত্রুর বিপক্ষে গোল না খাওয়ার পণ নিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন মাঠে!
স্যাম বার্টনের কিন্তু একটি প্রশংসা প্রাপ্য। পনেরোটি মিনিট একাই মাঠে থেকে গোল আটকানোর চিন্তাটাও কম কৃতিত্বের না, হোক সেটা তিনি না জেনেই করেছেন!