আর্সেনাল ১ – ১ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
লাকাজেত (৬১’) গ্রিজমান (৮২’)
এমিরেটস স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের যেন ঠিকভাবে দাঁড়াতেই দেয়নি আর্সেনাল। বল পজিশন, আক্রমণ, শ্যুট, পাস সব কিছুতেই এগিয়ে ছিল তারা। ম্যাচের পুরো ৯০ মিনিট জুড়েই ছিল গানার্সদের অধিপত্য।
কিন্তুু তবুও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি স্বাগতিকরা। গ্রিজমানের শেষ মুহুর্তের গোলে ড্র নিয়েই খুশি থাকতে হয় আর্সেনালকে।সদ্যই আর্সেনালের দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। তাই তিনি খুব করেই চাচ্ছেন ইউরোপা জয়ের মাধ্যমেই তার আর্সেনালে কাটানো বর্নিল ২২ বছরের ইতি টানতে।
তার এই অভিপ্রায় আজকের ম্যাচে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।
★ ইউরোপীয়ান কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এটি আর্সেনাল ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের প্রথম দেখা।
★ এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে আর্সেন ওয়েঙ্গার আর্সেনালের কোচ হিসেবে ১২৫ তম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করলেন।
লাইন আপ
আর্সেনাল (৪-৩-২-১)
অস্পিনা, বেলেরিন, মুস্তাফি, কোশিয়েলনি, মনরিয়াল, রামসে, জাকা, উইলশেয়ার, ওয়েলবেক, ওজিল এবং লাকাজেত
সাব: কোনো প্লেয়ার পরিবর্তন করা হয়নি
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (৪-৪-২)
অবলাক, জিমেনেজ, গোদিন, হের্নান্দেজ, নিগুয়েজ, ভ্রসালকো, থমাস, কোকে, কোররেয়া, গামেরিও এবং গ্রিজমান।
সাব: গামেরিও-গাবি(৬৫’), কোররেয়া-সাভিচ, (৭৫’), গ্রিজমান-তোরেস (৮৫’)
প্রথমার্ধ
এমিরেটসে ম্যাচের শুরু থেকেই বেশ চাঙ্গা ছিলো স্বাগতিকরা। হয়তো নিজেদের গুরু আর্সেন ওঙ্গেগারকে বিদায় মুহুর্তে শূন্য হাতে বিদায় দিতে চায় না গানার্সরা। আর ইউরোপাই এখন তাদের শেষ ভরসা। তাই আজকের ম্যাচে পূর্ণ শক্তির আর্সেনালই আজ মাঠে নেমেছিল। অন্যদিকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদও চাচ্ছে না ট্রফিলেস সিজন পার করতে তাই তারাও বেশ মরিয়া ছিল আজকের ম্যাচে জয় আদায় করে ইউরোপার ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করার জন্য। তবে ম্যাচের শুরু থেকেই এমিরেটসে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছিল না সিমিওনের শিষ্যরা। ম্যাচের মাত্র ২ মিনিটেই উইলশেয়ারকে ফাউল করে প্রথম হলুদ কার্ড দেখে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের রাইট ব্যাক ভ্রসালকো। ৮ মিনিটের মাথায় আর্সেনালের সাজানো এক আক্রমণ থেকে লাকাজেতের জোরালো হেড ঠেকিয়ে দিয়ে দলকে নির্ঘাত গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করে অবলাক।
ম্যাচের দশম মিনিটে লাকাজেতকে ফাউল করে ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ভ্রসালকোকে। ম্যাচের একদম শুরু থেকেই অতিথিরা তাদের রাইট ব্যাককে হারিয়ে ১০ জনের দলে পরিণত হয়। যদিও এর বিশেষ কোনো ফায়দা প্রথমার্ধে নিতে পারেনি আর্সেনাল। অন্যদিকে নিজের প্লেয়ারের কার্ড দেখানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে রেফারির উপর উত্তেজিত হওয়ায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কোচ সিমিওনেকে ডগ আউট থেকে বহিঃস্কার করেন ম্যাচ রেফারি তুরপিন।
ম্যাচের ২৩ তম মিনিটে অ্যাটলেটিকোর ডি বক্সের ভিতরে লাকাজেতেকে গোদিন অবৈধ ভাবে বাঁধা দেয়ায় আর্সেনাল পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি তাতে সাড়া দেয়নি।
গ্রিজমান ৩৭ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের ভেতর থেকে জোরালো শ্যুট নিলে তা অস্পিনা রুখে দেয়। এই একটি শ্যুট ছাড়া প্রথমার্ধে আর কোনো ভালো আক্রমণ সাজাতে পারেনি অতিথিরা। প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটে ৬৯ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল গানার্সরা। ১৫টি গোলমুখী শ্যুট নিলেও তার মাত্র ৪টি অন টার্গেট শ্যুট ছিল। এর মাঝে প্রথমার্ধে আর্সেনাল বেশ কিছু ভালো সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। তাছাড়া অ্যাটলেটিকোর গোলকিপার অবলাকের পারফর্মও ছিল দূর্দান্ত। তার ভাল পারফর্মের সুবাদে ১ জন কম নিয়েও প্রথমার্ধে কোনো গোল হজম করতে হয়নি অতিথিদের।
দ্বিতীয়ার্ধ
প্রথমার্ধে গোল শূন্য ড্র হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আরও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে আর্সেনাল। অন্যদিকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ শুধু তাদের রক্ষণভাগ সামাল দিতে ব্যস্ত ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে ৮২ শতাংশ বল গানার্সদের দখলে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে অ্যটলেটিকোর গোলমুখে তারা ১৩টি শ্যুট করে যার মাঝে ৪টি ছিল অন টার্গেট শ্যুট পক্ষান্তের অতিথিরা দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ২টি শ্যুট নিতে পেরেছিলেন যার দুটিই ছিলে অন টার্গেট শ্যুট। ম্যাচের ৬১ মিনিটে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ডি বক্সের ডান পাশ থেকে উইলশেয়ারের হাওয়ায় ভাসানো বলকে হেড দিয়ে গোলে রূপান্তর করে গানার্স নাম্বার নাইন লাকাজেত। তার এই গোলের মাধ্যমে আর্সেনাল ১৯৯৯-২০০০ সালের পর ইউরোপার এক সিজনে তাদের করা ৩০ গোলের মাইল ফলক স্পর্শ করেছে। গোলের পর আর্সেনালের আক্রমণের ধার আরও বেড়ে যায়। অন্যদিকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাগতিকদের আক্রমণ প্রতিহত করতেই ব্যস্ত ছিল। তবে ম্যাচের শেষ দিকে ৮১ মিনিটের মাথায় আর্সেনালের রক্ষণভাগের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে যায় অ্যাটলেটিকোর ফরাসি স্ট্রাইকার গ্রিজমান। দুজন ডিফেন্ডার এবং গোলকিপারকে কাটিয়ে সেই আক্রমণ থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান তিনি।
ম্যাচের বাকি সময়টুকু তে আর কোনো গোল না হওয়ায় ১-১ গোলে ড্র নিয়ে মাঠে ছাড়তে হয় দু’দলকে। এ ম্যাচ থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে গোলে আপাতত কিছুটা এগিয়ে আছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ইউরোপা সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি ৩ মে অ্যাটলেটিকোর মাঠ স্তাদিও ওয়ান্দা মেট্রোপলিটন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ : আলেক্সসান্দ্রে লাকাজেত (আর্সেনাল)