ফুটবল মৌসুমের এই সময়টায় এসে সাধারণত আলোচনা শুরু হয়ে যায় সম্ভাব্য ব্যালন বিজয়ী কে হচ্ছেন তা নিয়ে। বিগত দশ বছর ধরে মেসি-রোনালদোই রাজ করছেন ফুটবল বিশ্ব। সুতরাং আলোচনার কেন্দ্রেও থাকেন তারা। মৌসুম বিবেচনায় মোটামুটি আঁচও করা যায় কে হচ্ছেন বিজয়ী। তবে এবার বোধয় কিছুটা ব্যতিক্রম হচ্ছে, এবং এর পেছনের কারিগর মিসরীয় মোহাম্মদ সালাহ।
সালাহ জিতবেন কি জিতবেন না, সেটা ভবিষ্যতের হাতে। তবে এবারের ব্যালন জয়ের মূল নিয়ামক হবে বিশ্বকাপ সেটি বেশ ভালোমতোই বোঝা যাচ্ছে। ক্লাবের হয়ে একক নৈপুণ্যে ব্যালন বগলদবা করার মতন সুযোগ এবার কঠিনই।
লিওনেল মেসি
মৌসুমের মাঝপথ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল মেসির ষষ্ঠ ব্যালন জয় কেবলই সময়ের ব্যাপার। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানোর অফ ফর্ম এবং নিজের দুর্দান্ত ছন্দ মেসি সমর্থকদের মনে এ আশা জাগিয়েছিল বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু মৌসুমের এ পর্যায়ে এসে হিসাবে কিছুটা গোলমাল দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই কোপা জেতা মেসি অপেক্ষায় রয়েছেন লা লিগা বগলদাবা করার। কিন্তু চলতি মৌসুমে এটুকু এখন আর যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে না। মেসির ক্ষেত্রে ইতিবাচক হচ্ছে বার্সার এ মৌসুমে শিরোপা যুগলে তার অবদান। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দলের প্রয়োজনের মুহুর্তে যেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন সেটি বেশ বড় একটি প্রশ্নবোধক বসিয়ে দিচ্ছে। যেহেতু এটি বিশ্বকাপের বছর, তাই বিশ্বকাপের নৈপুণ্যও প্রভাব ফেলবে ব্যালন জয়ের ক্ষেত্রে। এখানে যেটি সমস্যা, দলীয়ভাবে সে অর্থে পারফর্ম করতে না পারলেও কাগজে কলমে আর্জেন্টনা বেশ শক্তিশালী দল। তাই শুধু মাত্র নক-আউট পর্ব খেলাটাই মেসির জন্য যথেষ্ট হবে না।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
সন্দেহ নেই অন্যান্যবারের তুলনায় এবার কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছেন বর্তমান বিশ্বসেরা রোনালদো। লিগ স্বপ্ন আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় পাখির চোখ করেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে। এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার যে পারফরমেন্স তা তাকে ব্যালনের দৌড়ে রাখলেও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। রোনালদোর স্বপ্ন পূরণে দুটি জিনিস এখন আবশ্যক। এক, রিয়ালকে হ্যাট্রিক শিরোপা জেতানো এবং দুই, বিশ্বকাপে নজরকাড়া কিছু করা। এক্ষেত্রে মেসির চেয়ে রোনালদো কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন। কারণ, পর্তুগাল দলটা পুরাই রোনালদো নির্ভর। তার শিরোপা জিতবে এমন স্বপ্ন কট্টর পর্তুগিজ সমর্থকও দেখেন বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে নিদেনপক্ষে সেমিতে পৌছাতে পারলেও রোনালদোর সম্ভাবনা থাকবে আরো একবার ব্যালন হাতে নেয়ার।
মোহাম্মদ সালাহ
বিস্ময়কর হলেও সত্য এই মুহুর্তে সম্ভাব্য ব্যলন জয়ী হিসাবে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে সালাহর নাম। গোলের সংখ্যায় ইতোমধ্যেই রোনালদো-মেসিকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। দলকে প্রায় একাই টেনে তুলেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে। সেখানেও দারুণ ঔজ্জ্বল্য দেখিয়ে লিভারপুলকে এনে দিয়েছেন ৫-২ গোলের জয়। এখন সালাহর পায়ে ভর করেই লিভারপুল দেখছে নিজেদের ষষ্ঠ শিরোপার স্বপ্ন। আর সেটি করতে পারলে মেসি-রোনালদোর এক দশকের রাজত্বের অবসান ঘটবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেটি যদি নাও পারেন সুযোগ থাকছে বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনা-পর্তুগালের তুলনায় মিসর সে অর্থে কোনো শক্তিই না। এখন সালাহ যদি মিসরকে গ্রুপ পর্ব পার করাতে পারেন সেটিও হবে দারুণ অর্জন। হ্যা, শুরুতেই যা বলা হয়েছে; অবিশ্বাস্য শোনালেও এখন এটিই সত্য যে, মিসরীয় ফারাওই এই মুহুর্তে ব্যালন জয়ের সবচেয়ে বড় দাবিদার।
মাঝে কয়েক বছর ফিফা এবং ফ্রান্স ফুটবল একত্রিত হয়ে এ পুরষ্কার দেয়ার সময় এর স্বচ্ছতা, প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া ছিল সবার মধ্যে। ২০১৬ সাল থেকে আবারো ফ্রান্স ফুটবল একক ভাবেই এটি দিতে শুরু করলে কমে আসে বিতর্ক। কারণ, অদ্ভুত ভোটিং প্রক্রিয়ার বদলে ব্যালন জয়ী বাছাই করেন বিশ্বের বাছাই করা ফুটবল সাংবাদিকরা। সে হিসাবে সালাহ স্বপ্ন দেখতেই পারেন মেসি-রোনালদোর সেরা সময়েই তাদের রাজত্ব নিজের দখলে নেয়ার।