অ্যাসেন্সিওতে স্তব্ধ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনা

অ্যাসেন্সিওতে স্তব্ধ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনা

বায়ার্ন মিউনিখ         ১ – ২      রিয়াল মাদ্রিদ
জোশুয়া কিমিচ ২৮’                মার্সেলো ৪৪’, অ্যাসেন্সিও ৫৭’

ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সার্বাধিকবার মুখোমুখি হওয়া বায়ার্ন-রিয়াল মুখোমুখি হয়েছিল অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায়; চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে। মার্সেলো এবং অ্যাসেন্সিওর লক্ষ্যভেদে বাভারিয়ানদের মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফেরা রিয়াল এক পা দিয়ে রাখলো কিয়েভের পথে।

• পুরো ম্যাচে অন টার্গেটে একটি শ্যুটও নিতে পারেননি রোনালদো। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির পর প্রথম এমনটি ঘটলো
• ‎টানা ১৬ ম্যাচের গোল স্ট্রিক ভাঙলো রোনালদোর
• ‎এটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের ১৫০তম জয়। যেটি প্রতিযোগিতার ইতিহাসের সর্বোচ্চ

লাইন-আপ

বায়ার্ন মিউনিখ (৪-১-৪-১)
উলরিখ, কিমিচ, বোয়েটাং, হামেলস, রাফিনহা, হাভিয়ের মার্টিনেজ, রবেন, মুলার, হামেস, রিবেরি, লেওয়ানডস্কি
সাব: রবেন-থিয়াগো, বোয়েটাং-সুলে, মার্টিনেজ-তুলিসো

রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩)
নাভাস, কার্ভাহাল, ভারান, রামোস, মার্সেলো, ক্রুস, ক্যাসেমিরো, মদ্রিচ, লুকাস ভাস্কুয়েজ, রোনালদো, ইস্কো
সাব: ইস্কো-অ্যাসেন্সিও, কার্ভাহাল-বেনজেমা, ক্যাসেমিরো-কোভাচিচ

প্রথমার্ধ

ম্যাচের শুরু থেকেই নেই নয়্যার, ভিদাল। ঘড়ির কাটা ৩৪ মিনিটে পৌছাতেই মাঠ ছাড়া বায়ার্নের অন্যতম দুই স্তম্ভ রোবেন এবং বোয়েটাং। এমন অবস্থার সামান্যতম সুযোগও নিতে পারেনি রিয়াল। প্রথমার্থ ১-১ গোলে শেষ হলেও দু দলের মধ্যে নিঃসন্দেহে বেহতার খেলছিল বায়ার্ন। কি পজিশনে, কি সুযোগ তৈরিতে; সবখানেই ব্লাংকোসদের চেয়ে এগিয়ে ছিলো ইয়ুপ হেইঙ্কসের শিষ্যরা। রিয়ালের চারটির বিপরীতে বায়ার্নের গোলবার লক্ষ্য করে শ্যুট ছিল ছয়টি। বল পায়ে ছিল ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ সময়। বায়ার্নের গতিশীল প্রেসিং ফুটবলের বিপরীতে প্রথম দিকে রিয়াল চেষ্টা করেছিল লম্বা পাসে প্রতি-আক্রমণে যাবার। সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে খেলার গতি কমিয়ে দিয়ে আক্রমণ সাজানোর চেষ্টা চালায় জিদানের দল। সেটি তো ব্যুমেরাং হয়ই, বরং দারুণ এক প্রতি-আক্রমণ থেকে খেয়ে বসে প্রথম গোল। হামেসের বাড়ানো থ্রু থেকে গতির ঝড়ে ডিফেন্ডারদের ছিটকে ফেলে অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনাকে উল্লাসে মাতান জার্মান তারকা জশুয়া কিমিচ। ফিনিশিংটি চমৎকার ছিল সন্দেহ নেই। কিন্তু এ গোলটিতেও স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে নাভাসের দূর্বলতা। তার দূর্বল রিফ্লেক্স ছিল চূড়ান্ত দৃষ্টিকটূ। একই রকম চোখে লেগেছে বল গ্রিপিংয়ে তার অক্ষমতাও। নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতেই পারে রিয়াল, যে এ সুযোগগুলো বায়ার্ন কাজে লাগাতে পারেনি। বিশেষ করে রিবেরি মিস টাইম না করলে বায়ার্ন ৩৪ মিনিটেই দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যেতে পারত। অনেকটা ধারার বিপরীতেই প্রথমার্ধের একদম শেষ মুহুর্তে সমতাসূচক গোলটির দেখা পায় রিয়াল। রামোসের ব্লক থেকে পাল্টা আক্রমণ, সেখান থেকে কার্ভাহালের হেড; এবং ডি ২৫ গজ দুর থেকে মার্সেলোর আচমকা ভলিতে স্তব্ধ বাভারিয়ানরা। গোলটির আগ পর্যন্ত যেভাবে রিয়ালকে চেপে ধরেছিল বায়ার্ন, তাতে এ গোলটি বায়ার্নের বুকে বেধেছে শেলের মতো। তবে একজন রক্ষণ তারকার পা থেকে এমন গোল দেখা সব সময় দৃষ্টিসুখকর।

দ্বিতীয়ার্ধ

প্রথমার্ধের শেষের দিকে মার্সেলোর আচমকা গোলে স্তব্ধ বায়ার্ন দ্বিতীয়ার্ধে ঢেউ তুলেছিল আক্রমণের। রিবেরি-লেওয়ানডস্কি-মুলারদের প্রত্যেকটা প্রচেষ্টাই নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে রিয়ালের ডি-বক্সে গিয়ে। প্রথমার্ধ শেষেই ইস্কোকে তুলে নিয়ে অ্যাসেন্সিওকে মাঠে নামান জিদান। তার এই জুয়াটা কতটা চমৎকারভাবে কাজে এসেছে তা ম্যাচ শেষেই স্পষ্ট। রাফিনহার ক্ষমার অযোগ্য ভুলে বল পেয়ে লুকাসের চমৎকার দৌড়, অ্যাসেন্সিওর অসাধারণ পজিশনিং এবং শেষ পর্যন্ত দারুণ ফিনিশিংয়ে হতভম্ব বায়ার্ন। পুরোটা সময় ছড়ি ঘুড়িয়েও ১-২ গোলে পিছিয়ে পড়া বায়ার্ন এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। প্রথমার্ধে দূর্বল নাভাস বেশ কবারই হতাশ করেছেন ফ্রেঞ্চম্যান রিবেরিকে। ম্যাচ জিততে যে ভাগ্যও লাগে সেটি স্পষ্ট করেছেন মুলার-লেওয়ানডস্কি। লেওয়ানডস্কি নাভাসকে একা পেয়েও বল মেরেছেন বাইরে, আশ্চর্যজনকভাবে ব্লক করেছেন সতীর্থ মুলারের হেড। অ্যাসেন্সিওর গোলের পর সে অর্থে কোনো আক্রমণ করতে পারেনি রিয়াল। তাদের মনোযোগ পুরোটাই ছিল লিড ধরে রাখার দিকে। অপর দিকে গোল মিসের মহড়া দিয়ে ফাইনালের স্বপ্ন কিছুটা ধুসর করেই বার্নাব্যুর পথ ধরবে বায়ার্ন। নিরপেক্ষ দর্শকদের জন্য ম্যাচটি তেমন আনন্দদায়ক না হলেও আকর্ণ বিস্তৃত হাসি নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন জিদান। বাভারিয়ানরা রুপকথা লিখতে না পারলে টানা তৃতীয়বারের মত ফাইনালে যে অল হোয়াইটসদেরই দেখা যাবে তা অনেকটাই নিশ্চিত।

ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : মার্সেলো (রিয়াল মাদ্রিদ)