বিসিবিকে সাধুবাদ

বিসিবিকে সাধুবাদ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সর্বশেষ সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে দুটি সিদ্ধান্ত গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক সকলেরই নজরে এসেছে বিশেষ ভাবে।
১. কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে ছয়জন কমিয়ে দশজনে নিয়ে আসা
২. বিপিএলে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ চার বিদেশি খেলানো
কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে যাদের বাদ দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে বিসিবির তরফ থেকে বলা হয়েছে পারফরমেন্স প্রত্যাশিত মানদন্ড ছুঁতে পারেনি। নিরেট এবং নির্ভেজাল সত্য। বহু সমালোচনার পর বিসিবির এ বোধদয় আখেরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।
বিগত কিছুদিনের পারফরমেন্সের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে যে, তারা শুধু খারাপই খেলেননি, মাঝে মধ্যেই পরিচয় দিয়েছেন চূড়ান্ত অবিবেচনা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দিনের শেষাংশে সৌম্য যেভাবে ছয় মারতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন, তাতে তার মানসিক সুস্থতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায়। একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘঠিয়েছেন ইমরুল কায়েস শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে। এরপরও যদি বোর্ড তাদের আগলে রাখতো সেটা শুধু প্রশ্নবিদ্ধই হতো না, নতুন খেলোয়াড়দের ভুল ম্যাসেজও দেয়া হতো। সময়োপযোগী এ সিদ্ধান্তের জন্য একটি সাধুবাদ বিসিবির প্রাপ্য।
মোসাদ্দেক অনেকটা সময়ই ইনজুরির কারণে বাইরে ছিলেন। সুতরাং তার বিষয়ে কিছু বলার অবকাশ নেই। তাসকিনও নিজের ছায়া হয়ে রয়েছেন অনেকদিন। সাব্বির ব্যাট হাতে যাই করুক, মাঠের বাইরে তার আচরণ যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। এমন একজন জাতীয় দলের নিয়মিত বেতনভোগী হবার যোগ্যতা রাখেন কি না সে প্রশ্ন স্বাভাবিক।
চুক্তির বাইরে চলে যাওয়া মানেই জাতীয় দলের বাইরে চলে যাওয়া না। এটি বরং একধরনের সতর্কবার্তা। সৌম্য, সাব্বির, তাসকিনসহ যারা বাদ পড়েছেন প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময় জাতীয় দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সুতরাং তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। খুব সম্ভব এক ধরণের আত্মশ্লাঘায় পেয়ে বসেছিলো তাদের যার দরুণ মূল ফোকাস ক্রিকেট থেকে সরে অন্য দিকে চলে যাচ্ছিল। বিসিবির এ ম্যাসেজের হেতু যদি তারা উপলব্ধি করতে পারেন আখেরে লাভ বাংলাদেশেরই।
এর আগে এ ধরণের পরিস্থিতিতে বিসিবিকে একরকম নিষ্ক্রিয়ই দেখা যেত। এবারের এ অবস্থানটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। একটু ইমরুলের জিকির ফরজ বলে মনে করছি। সৌম্য থেকে শুরু করে বাকিরা প্রত্যেকেই তরুণ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অভিজ্ঞতা খুব বেশি দিনের না। কিন্তু ইমরুল এতবছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটানোর পরেও যেমন দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে উইকেট উপহার দিয়ে আসছেন তাতে শুধু কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদই যথেষ্ট না বরং বিসিবির উচিত তাকে তিরষ্কার করা। সিরিজ জয়ের সুবাদে যদি বোনাস দেয়া যেতে পারে তাহলে দায়িত্বহীনতার জন্য তিরষ্কারে আপত্তি থাকার তো কোনো কারণ থাকতে পারে না।
বিপিএলে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ চারজন বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্তটিও ইতিবাচক। এতে স্থানীয় খেলোয়াড়দের সুযোগ বাড়বে নিজেদের মেলে ধরার। তবে, জন্মলগ্ন থেকেই বিপিএল যতটা না মাঠের খেলার কারণে তারচেয়ে বেশিবার শিরোনামে এসেছে মাঠের বাইরের ঘটনায়।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্টেডিয়ামের সংখ্যা কম না। ঢাকা, ফতুল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বগুড়ায় আন্তর্জাতিক মানের মাঠ থাকলেও বিপিএল ঢাকা-চট্টগ্রামের চৌহদ্দি পার হতে পেরেছে খুব কমই। অথচ, এই টুর্নামেন্টটি নিয়ে জনসাধারণে বেশ আগ্রহ রয়েছে। সুতরাং কেন মাত্র দুটি-তিনটি ভেন্যুতেই বিপিএল খেলা হয় সেটি ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
বিগত দু’তিন বছরে বিপিএলের সম্প্রচারের মান, উপস্থাপনার মান, ধারাভাষ্যের মান দৃষ্টিকটূভাবে কমে গিয়েছে। যেহেতু বৈশ্বিক তারকাদের অংশ্রগ্রহণ থাকে সুতরাং স্বাভাবিকভাবে বিশ্ব মিডিয়ার নজর থাকে বিপিএলের ওপর। এমন একটি টুর্নামেন্ট যেনতন উপায়ে করার চেয়ে না করা বেহতার।
বিসিবির কর্তারা কতটুকু জানেন জানা নেই, যে টিভি চ্যানেলের কাছে তারা সম্প্রচার সত্ত্ব বিক্রি করেছে তাদের যতটা আগ্রহ খেলা দেখানোর প্রতি তার চেয়ে ঢের আগ্রহ বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে। যার ফলে একজন ব্যাটসম্যান আউট হলে সাধারণ দর্শক কিছু বোঝার আগেই দেখা যায় বিজ্ঞাপনের দৌরাত্ম্য। এ বিষয়টিতে বিসিবির নজর একান্ত কাম্য।
আরো একটি বিষয় নিন্মমানের উপস্থাপনা এবং ধারাভাষ্য। আধুনিক জামানায় ধারাভাষ্য ক্রিকেটের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু শেষ কয়েকটি আসরে নাম সর্বস্ব কিছু ভাষ্যকার, যারা শুধু মাত্র নির্দিষ্ট কিছু চ্যানেলেই ডাক পান তাদের দিয়ে বিপিএল কাভার করানোর প্রচেষ্টা খুবই বাজে দৃষ্টান্ত। এর আগে ড্যানি মরিসনদের মত ভাষ্যকাররা বিপিএল কাঁপিয়েছেন। সেখান থেকে উন্নতির বদলে একদম নিন্মশ্রেণীতে নেমে যাওয়া অপ্রত্যাশিত। গত আসরে শরীর সর্বস্ব উপস্থাপিকা, যার অাদৌ কোনো ক্রিকেট জ্ঞান আছে কি না সন্দেহ, তাকে দিয়ে আসর পরিচালনার সিদ্ধান্তও ছিল বিস্ময়কর। তার অজ্ঞতার মত প্রশ্ন শুধু বিস্ময়ই না অনেক সময় বিরক্তিরও উদ্রেক করেছে।
যেহেতু বাংলাদেশের ঘরোয়া আসরগুলোর মধ্যে শুধু বিপিএল নিয়েই সাধারণ্যে আগ্রহ থাকে সুতরাং শুধু মাঠই না, মাঠের বাইরের দিকগুলোতেও সমান নজর দাবি রাখে।
কেন্দ্রীয় চুক্তির বিষয়টি বিসিবি যেভাবে অনুধাবন করেছে একই রকমভাবে যদি বিপিএল বিষয়েও বিকিয়ে না গিয়ে বরং মানের বেপারে আপোষহীন হয়, তাহলে আসরটি হবে আরো আকর্ষণীয়।