ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সব ধরনের বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। পূর্বে মৌখিকভাবে বিনিয়োগ বন্ধের কথা বলা হলেও গতকাল রবিবার ব্যাংকের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সুইচ বন্ধ করে দিয়ে বিনিয়োগ বন্ধ করা হয়েছে। ফলে দেশের কোনো জায়গা থেকে বিনিয়োগ (ঋণ) দিতে পারেনি ব্যাংকের শাখাগুলো। নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ এভাবে বন্ধ করে দেওয়ার এ ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। গত বছর জানুয়ারিতে ব্যাংকটিতে যে পরিবর্তন শুরু হয় তা চলতি মাসেও অব্যাহত থাকায় ব্যাংকটি নানা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাংকটি বহু আগে থেকেই নতুন কোন বিনিয়োগ না নেওয়া এবং অনুমোদিত বিনিয়োগের অর্থ ধীরগতিতে ছাড়ার মতো পদক্ষেপ নেয়। গতকাল থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হল। এমনকি ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত বিনিয়োগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা সেবা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট দেওয়ার কার্যক্রমও বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যাংকটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া ২০০টি আউটলেটের অনুমোদন চায় যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০৫টি আউটলেটের অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে ৯৫টি আউটলেট চালু হয়েছে। বন্ধ রয়েছে নতুন আউটলেট উদ্বোধনের কাজ। বিনিয়োগসহ কয়েকটি সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কাজ করছে ‘কর্মী ছাঁটাই’ আতঙ্ক। স্থবির হয়ে পড়েছে কাজের গতি।
নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত আমানত ও বিনিয়োগ হার (আইডিআর) ঠিক করার জন্য বিনিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিনিয়োগ বন্ধ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশিষ চক্রবর্তী বলেন, গ্রাহকের চাহিদা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ বিষয়ে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি কিছু বলার নেই। এ বিষয়ে ওই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ইসলামী ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের এমন সঙ্কটে পড়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। ব্যাংকটি এত বছর কোন তহবিল সঙ্কটে পড়েনি। সেই সাথে গত বছর তাদের আমানত সংগ্রহের পরিমাণ ছিলো ৮ হাজার কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসাবে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের আইডিআর ৯২ শতাংশ হয়ে গেছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত হারের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান মোট আমানতের পরিমাণ ৭৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। যার বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগ ৭৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে আইডিআর ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়ে গেছে। বিশেষ কোন প্রতিষ্ঠানে বড় অংকের বিনিয়োগের ফলে এমনটি ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো তাদের সংগৃহীত আমানতের ৮৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। তবে সার্বিক আর্থিক সূচক ভালো থাকলে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা যায়। যদিও সর্বোচ্চ এই হার এক শতাংশ কমিয়ে ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের ঋণ ৮৯ শতাংশের বেশি রয়েছে তাদেরকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এই সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এতে করে ব্যাংকটির গ্রাহক-আস্থায় ভাটা পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।