রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারে আরাকান আর্মির সমর্থন

রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারে আরাকান আর্মির সমর্থন

মিয়ানমারের রাখাইন স্টেইটে স্থানীয় রাখাইনদের মতোই মুসলমান রোহিংগাদের সমান নাগরিক অধিকার, এবং শিক্ষা ও কাজের রাষ্ট্রীয় সুযোগ প্রাপ্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বৌদ্ধপ্রধান স্থানীয় আরাকান আর্মি (এ-এ)। রোহিংগাদের মিয়ানমারের পাসপোর্ট প্রদানেরও দাবি জানিয়েছেন এ-এ প্রধান স্বঘোষিত মেজর জেনারেল তুন মায়াট নাইঙ।

উল্লেখ্য, আরাকান আর্মি বা এ-এ হলো এমুহূর্তে রাখাইন (আরাকান) স্টেইটের সবচেয়ে আলোচিত গেরিলা দল। দেশটিতে যে সব সক্রিয় গেরিলা দলের সঙ্গে সরকারি বাহিনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি নেই তার একটি হলো ‘এ-এ’। এমহূর্তে চিন ও কাচিন অঞ্চলে ‘এ-এ’র সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাতও চলমান। এ-এ হলো ইউনাইটেড আরাকান লিগের সশস্ত্র শাখা।

গত ১১ এপ্রিল মিয়ানমারের ‘দি ইরাবতী’তে এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল নাইঙ ইউনিয়ন সরকারের সঙ্গে তার দলের যুদ্ধবিরতি আলোচনা, রাখাইনের পরিস্থিতির পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু অভিমত তুলে ধরেন– যা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সহিংস পরিস্থিতির শিকার আরাকান অঞ্চলে রাজনৈতিক-সামরিক সমীকরণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সাক্ষাৎকারে জেনারেল নাইঙ রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে দেশে-বিদেশে উল্লিখিত ‘আরসা’র সঙ্গে তার দল ‘এ-এ’ এর যোগসূত্রের অভিযোগ নাকচ করে দেন এবং আরসাকে একটা ‘জিহাদপন্থি’ সংগঠন হিসেবেই অভিহিত করেন। তিনি এও জানান, গণচীন আরসা’র সঙ্গে এ-এ’র যোগাযোগ সম্পর্কে শেষোক্ত সংগঠনকে সতর্ক করে দিয়েছে। এ-এ’র জেনারেলের সূত্রে এও জানা যায়, চীন আরাকান অঞ্চলে আরসা ও এ-এ’র সংহতিমূলক সম্পর্কের ব্যাপারে খুব উদ্বিগ্ন। কারণ তার ‘সামুদ্রিক সিল্করুট’-এ রাখাইনের কাইয়াকপু গভীর সমুদ্রবন্দর গুরুত্বপূর্ণ এক অংশীদার। পাশাপাশি, এই অঞ্চলে চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। রাখাইন বা আরাকান থেকে মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে চীন প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি পাইপলাইন বসিয়েছে মেইনল্যান্ড চায়না পর্যন্ত। এইরূপ বিনিয়োগের স্বার্থেই মিয়ানমারে যেসব সংগঠন যুদ্ধবিরতিতে নেই– তাদের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার লক্ষ্যে এই মূহূর্তে চীন প্রকাশ্যেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। এইরূপ সমঝোতা প্রক্রিয়ায় চীন বিশেষভাবে যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী রাখাইন, কাচিন ও শ্যান অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে। জেনারেল নাইঙ স্পষ্টতই চীনের মধ্যস্থতার কথা ‘দি ইরাবতী’কে জানিয়েছেন।

রোহিংগাদের মিয়ানমারের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে স্বীকার করেন কি না? এইরূপ এক প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে জেনারেল নাইঙ বলেন, সরকার যখন রোহিংগাদের ফেরত আনার কথা বলছে– তাতেই প্রমাণ হয় তারা এদেশেরই নাগরিক এবং সেক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তাদের নাগরিক অধিকার না পাওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। তরুণ এই জেনারেল রোহিঙ্গাদের দেশজুড়ে অবাধ চলাফেরা এবং ব্যাবসায়ের অধিকারের প্রতিও সমর্থন জানান।

উল্লেখ্য, এ-এ আদর্শিকভাবে মনে করে রাখাইন অঞ্চলের হারানো স্বাধীনতার জন্য লড়ছে তারা। বর্তমানে মিয়ানমারের একটি স্টেইট হলেও ১৭৮৪-এর পূর্বে রাখাইন স্বাধীন রাজ্যই ছিল। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বামারদের দ্বারা (১৭৮৪-১৮২৬), ব্রিটিশদের দ্বারা (১৮২৬-১৯৪২), জাপানিদের দ্বারা (১৯৪২-১৯৪৪), এবং আবারও ১৯৪৫ থেকে এখন পর্যন্ত বামারদের দ্বারা রাখাইন পরাধীন হয়ে রয়েছে।

উল্লেখ্য, নিজেদের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক স্বাধীনতা ফিরে পেতে রাখাইনের বৌদ্ধপ্রধান এ-এ’র পূর্বে এই অঞ্চলের আলোচিত একটি গেরিলা দল ছিল এ-এল-এ (আরাকান লিবারেশন আর্মি)। বর্তমানে এই সংগঠনটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রয়েছে এবং প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। রোহিংগাদের বিরুদ্ধে বৈরি অভিযানকালে ইউনিয়ন বাহিনীকে অনেক প্রাক্তন এ-এল-এ কর্মী সহযোগিতা করেছে বলে আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছিল।