সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোতে ভাইভা পর্যন্ত পৌছতে না পেরে বহু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এখনো বেকার রয়েছেন বলে জানিয়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হতেই কোটা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ আয়োজিত এক গণসমাবেশে এমন দাবি করা হয়েছে।
এ সময় বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক প্রশাসন গড়ার স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার অন্য কোনো বিকল্প নেই।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, তারা এখানে করুণা নিতে আসেননি। তাদের পরিবারের রক্তের অধিকার নিতে এসেছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের ষড়যন্ত্র তারা বানচাল করে দেবন। তারা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায়, তখন কোটাপ্রথা বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত তাঁরা নিতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার আহবান জানিয়ে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ আয়োজিত এই গণসমাবেশে নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সঠিক বাস্তবায়নে একটি কমিশন গঠনসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন।
সংগঠনের সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান শাহীনের পরিচালনায় ও দপ্তর সম্পাদক আহমাদ রাসেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম জামাল উদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন ও সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. কাজী সাইফুদ্দীন, শহীদ সংসদ সদস্য নুরুল হক হাওলাদারের কন্যা ও সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য জোবায়দা হক অজন্তা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক আসিবুর রহমান খান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসানসহ আরো অনেকে।
বক্তারা বলেন, ৭৫ সালে জাতির পিতা হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০১ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবারো ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের পর ২৯ বছর কোটায় কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকুরি হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী ২৯ বছর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিস্পেষিত হয়েছে। এ ছাড়া এই ৩০% কোটা তাদের আত্মমর্যাদা ও সম্মানের সাথে জড়িত। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে হলেও এই কোটা বহাল রাখা জরুরি।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা একটি অসাম্প্রদায়িক জঙ্গিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন স্বাধীনতা বিরোধীমুক্ত করতেও সরকারের প্রতি আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সরকারি কোটা থাকলেও এই কোটায় যোগ্যতার দোহাই দিয়ে ইচ্ছাপূর্বক তাদের মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রিলিমিনারী, লিখিত, মনস্তাত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার আর কি যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে? মৌখিক পরীক্ষা কখনোই যোগ্যতা যাচাইয়ের একমাত্র মানদন্ড হতে পারে না। বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া যায় না। অথচ এখনো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেকারত্ব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তারা বলেন, ‘কোটা বাতিলের সময় এখনও আসে নাই, এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার হাজার সন্তান চাকরি পাননি, অনেক বেকার রয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাব, কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করবেন।’
সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল না করা হলে ৭১-এর পরাজিত শক্তি ডুগডুগি বাজাবে। কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান-অপদস্থ করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার ফলে তারা আজ উল্লাসে মেতে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক সরকার থাকায় আন্দোলন করার অধিকার সবারই রয়েছে, কিন্তু তথাকথিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি করা হয়েছে।
এ সময় তিনি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের যারা ‘আমি রাজাকারের সন্তান’ লেখা প্লেকার্ড ঝুলিয়েছে তাদের বিচার দাবি করেন।
এই সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা না দেওয়া হলেও মাঠে থাকার ঘোষণা দেন বক্তারা। এ সময় তারা ৯ দফা দাবি লেকা একটি ব্যানার প্রদর্শন করেন, দফাগুলো হল–
১. জাতির পিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তিকারীদের শাস্তি দিতে হবে।
২. বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন করতে হবে।
৩. ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে তা বাস্তবায়নে কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা থেকেই কোটা পদ্ধতির শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চলমান সকল নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কোটার শূন্য পদ সংরক্ষণ করে বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।
৫. ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শূন্য পদগুলোতে চলতি বছরেই নিয়োগ দিতে হবে।
৬. বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রথম সেনাবাহিনী এ কারণে তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে পেনশন, বোনাস, রেশনসহ ওই মন্ত্রণালয়ের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্তরসূরীদের সকল চাকুরিতে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৮. ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলাসহ দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী স্বঘোষিত রাজাকারদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে এবং সকলের জন্য চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা তুলে দিতে হবে।