হল প্রোভস্টের পদত্যাগ দাবি

হল প্রোভস্টের পদত্যাগ দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে মধ্যরাতে ছাত্রী বের করে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হলটির প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নেতারা।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, গভীর রাতে হল থেকে ছাত্রীদের বের করে দেয়ার ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে কাউকে অভিভাবক ছাড়া বের করে দেয়া হয়। হুমকি দেয়া হয় মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার জন্য। হল থেকে বহিষ্কার করার হুমকিও দেয়া হয়।

হলটির প্রাধ্যক্ষের একটি অডিও রেকর্ড প্রচার হয়েছে। তিনি বলেছেন, আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রীদের সংখ্যা ২ হাজার হলেও তাদের বহিষ্কার করা হবে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে পরিচয় দিয়েছে তা ন্যাক্কারজনক।

বিক্ষোভ শেষে এই বক্তৃতা চলাকালে রাজু ভাস্কর্যের উত্তর দিকে ফুটপাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর থেকে নিয়ে ২টা পর্যন্ত কবি সুফিয়া কামাল হলে মোট ২০ জন ছাত্রীকে বের করে দেয়া হয়। এ খবর পেয়ে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাতেই হলের সামনে জড়ো হন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক এক প্রেস বিফিংয়ে শুক্রবার সারা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এসময় পরিষদের  আহবায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ন আহবায়ক মুহম্মদ রাশেদ খান ও নুরুল হক নুরুসহ বেশকিছু সাধারণ শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা স্লোগান দেন, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ এবং ‘আমার বোন পথে কেন, প্রশাসন জবাব চাই’।

কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তুলে দেওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় স্বীকার করেন ছাত্রী হলটির আবাসিক শিক্ষক আফরোজা বুলবুল।

বুধবার অনুষ্ঠিত ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের বৈঠকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্তার জন্য ২৬ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। এরপরই হল কর্তৃপক্ষ হলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাদের ধমক দিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষার্থীর স্থানীয় অভিভাবকদের ডাকা হয় হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ব্যাগ নিয়ে হল থেকে বের হতে দেখার কথা সাংবাদিকদের জানান একজন দারোয়ান।

আবদুল আউয়াল নামে এক অভিভাবক রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার বোনকে ফোন দিয়েছিলাম। সে না ধরে তার এক শিক্ষক ধরেন। তিনি আমাকে আসতে বলেন’। রাত ১২টার দিকে গণিত তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শারমিনকে নিয়ে তার স্থানীয় অভিভাবক হল থেকে বেরিয়ে আসেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে তারা কোনো কথা বলতে চাননি। শারমিনের অভিভাবক বলেন, তাদের কোনো কথা বলতে মানা করা হয়েছে। রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আরেক ছাত্রীকে নিয়ে তার অভিভাবক বেরিয়ে আসেন। সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তারা কোনো কথা না বলে দ্রুত মোটর সাইকেল চালিয়ে চলে যান।

মো. ফারুক নামে একজন অভিভাবককে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হলের সামনে দেখা যায়। ঢাকার ধামরাই উপজেলা থেকে মেয়েকে নিতে আসেন তিনি। তার সঙ্গে ছিল ভাই কামরুল আহসান। ওই অভিভাবক সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে আমাকে ফোন করে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেজন্য ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আমাকে আসতে হয়েছে’।

তবে রাত সোয়া ১টার দিকে ফারুক বের হলেও তার মেয়ে হলেই ছিলেন। ফারুক সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি। অনেক বলার পর কামরুল বলেন, তার ভাতিজি আন্দোলনে যেন আর না যায়, সেকথা তাদেরকে বলা হয়েছে। তিনিও তার ভাতিজিকে বুঝিয়েছেন।

ছাত্রীদের এমন গণহারে বহিষ্কারের খবরে কবি সুফিয়া কামাল হলের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।  সর্বশেষ রাত ২টায় সেখানে ছাত্ররা উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকে।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে গত ১০ এপ্রিল কবি সুফিয়া কামাল হলে। সেদিন রাতে হলের যেসব মেয়েরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদেরকে খুঁজে খুঁজে মারধর করা হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে হলের সামনের মাঠে নেমে আসে। সেসময় ছাত্রলীগের হল শাখা সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে জুতার মালা পরিয়ে দেয়। সাথে সাথে ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয় এশাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তার ছাত্রত্ব বাতিল করে। পরে অবশ্য ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এশার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।